Thursday, 31 December 2015

নতুন বছর

নতুন বছর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এক দুই করে কত গুনেছি প্রহর,
এইতো এসেছে আবার নতুন বছর।
বোমের শব্দ আর ধোঁয়া আঁধার,
অপেক্ষায় ধরাধাম খুলে দিল দ্বার।
বরণের থালা হাতে চাঁদ মামা ঐ,
সারিতে তারকাদের আনন্দের হৈচৈ।
বরণ করেছি সবে খুলে মন প্রাণ,
ভেদাভেদ ভুলে আজ সবাই সমান।
দূর কর গ্লানি যত মনের আঁধার,
দূর কর কুসংস্কার হবে নব-সংস্কার।
ব্রতে বাঁধিব হাত গড়িব সমাজ,
একসাথে চলিতে বাধা নাই আজ।
চঞ্চল মন আজ উল্লাসিত ধরণী,
শুরু হল নবরূপে ধরণীর জীবনী।

Thursday, 24 December 2015

গুরুবলে বলিষ্ঠ


গুরুবলে বলিষ্ঠ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এক পৃথিবী মানুষের ভিড়ে
তোমারে পেয়েছি খুজে গুরুর আসনে।
কথা দাও, শুধু বল একবার।
দিয়েছি ঠাঁই চরণে আমার।
তব ত্যাজিব সম্বল যত, পারের আশায়,
সাথে নাও মোরে, ইচ্ছা যেথায়।
একা ফেলে যেওনা অজানা কোনো দূরে,
অমূল্য বস্তু, তোমারে পেয়েছি জগত ঘুরে।
সাগরতল বা স্থলে নভমরুত্ যেথা তুমি,
সাথে থেকে নরকেও যেতে রাজি আমি।
নোংরা ভরে গেছে সারা গায়,
ছুঁয়ে দাও, কর পাপাচার উদ্ধার,
হবো মানব পূর্ণতায় বিকাশ।
যেমন খুশি বলুক লোকে,
স্বার্থান্বেষী বলে বলুক অলক্ষ্যে।
আসে কি যায় আমার তাতে?
বাহুবলে বলিষ্ঠ গুরুর সাথে।

Wednesday, 23 December 2015

আসতে যেতে

আসতে যেতে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দেহান্তর অহরহ হে মহাজ্যোতি,
ঘুচিয়ে দাও তমিস্রা, আলোকিত হক ধরণী।
ওই দূর নভপ্রান্তে পূণর্জনমে,
রাঙিয়ে দিয়েছ সোনালি রঙে,
অন্বিত যেথা, নভপ্রান্ত বৃক্ষ সাথে।
হে রবি, আমর্শে তোমার,
পূনর্জন্ম দিবসের ও।
এমনতো ছিলেনা জন্মে সেদিন।
তবে কেন আজ, মেঘেদের সাথে লুকোচুরি?
শিশিরে সিক্ত, মোর সারা দেহ,
আকাঙখিত অর্জনি তোমার তাপদীপ্তি।
হয়ে যাবে তবে, শোভিত ভুবন।
জৌলুষে তোমার, শোভিত হবে পুষ্পদল।
পুষ্প সৌরভে, মধুগন্ধে হক উল্লাসিত,
প্রজাপতি আর মৌমাছিদের দল।
অবসান কর হে এবার, খেলা লুকোচুরি।
আর নয়, নিরসন কর পর্দা মেঘ।
যাবার কালে, বকপাখে রোশনাই লুকায়ে।
সিঁদুরে আবির ছড়িয়ে মেঘের গায়ে,
ঢলে পড় মৃত্যুর কোলে আপন কুলায়ে।




Sunday, 20 December 2015

মুঠো ধুলির সাক্ষী

মুঠো ধুলির সাক্ষী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হাসি কান্নায় ছিল যারা জীবন্ত রূপে,
দূরে সরে যায়নি তারা আছে সমীপে।
পদদলিত করেছ পিষে নির্মম হয়ে,
অবজ্ঞায় পদতলে তবুও থাকে চেয়ে।
এক মুঠো ধুলি ধরে কর যদি প্রমাণ,
ধুলিতে মিশিয়ে লাখো অচৈন্য প্রাণ।
কান পেতে শুনো যদি শোকসঙ্গীত,
ধুলিতে মিশিয়া আপন বংশ অতীত।
ছিল সবার সাথে তারা বাপঠাকুরদা,
তবু কেন ঘৃণা তাদের কর অমর্যাদা।
গায়ে যদি উড়ে পড়ে ধূলিকণা ছোটো,
ছুড়ে ফেলে বল তারে পাদুকার এঁটো।
নিষ্ঠুর হয়ে তাদের করেছ অপমান,
দাহ করে বানিয়েছ অট্টালিকা দালান।
চিৎকার করেছে কত করে আর্তনাদ,
সহে আছে নির্মমতা করেনি প্রতীবাদ।



Thursday, 17 December 2015

সিঁধেল চোর

সিঁধেল চোর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আকাশের চন্দ্রমা আজও জেগে আছে,
প্রিয়তমা ছিল সেদিন আজ নাই কাছে।
বিকেল পেরিয়ে সেদিন সান্ধ্য জোছনায়,
কত কথা হয়েছিল চোখাচোখি দুজনায়।
জমানো অনেক কথা করেছিলে জ্ঞাপন,
বলেছিলে ভালোবেসে তুমি আপন জন।
বসে ছিলাম দুইজনে দূর্বাঘাসের উপর,
রসিকতা করেছিলে বলে সিঁধেল চোর।
তাইতো করেছি হরণ তোমার মর্মদেশ,
চোর রূপে কাছে তোমার হয়ে ছদ্মবেশ।
সিঁধকাটা চোর আমি ভাঙি হৃদয় প্রাচির,
শরিকানা করেছি তোমার হৃদয় মন্দির।
তোমাদের জাতি নারি দেখিতে কঠোর,
সহজে নুয়ে পড়ে দেখলে সিঁধেল চোর।

Friday, 4 December 2015

ত্রিজ্যোতি ও আঁধার কালো

ত্রিজ্যোতি ও আঁধার কালো

আব্দুল মান্নান মল্লিক

প্রহরী হতো যদি কালো অন্ধকার,
ঘুচিত দম্ভ তোমার জ্যোতির অহঙ্কার।
সহস্র লোচনে রাতে করে চলাফেরা,
নিরর্থক হয়ে যেত নীলাঙ্গনের তারা।
ভেবে যদি থাক তুমি ঘৃণিত কালো,
অমর্যাদা হতো তোমার জ্যোতির ঔজ্জল্য
কালোতে কর ঘৃণা জ্যোতির অহঙ্কারে,
টক্কর দিয়ে সাথে তবু গেছো হেরে।
হে কালো শশী কিসের ঔদ্ধত্য,
তুমিও অন্ধ, অরূণে প্রদীপ্ত।
হইবোনা বলিতে দ্বিধা,
মিথ্যা কর কেন দম্ভ বৃথা।
ভেবেছ কখন কি? অতীত জনম কথা?
কোথা হতে ধারণি উদ্দীপ্ততা?
অন্ধয়ে ছিলাম সেদিন সবে,
ভেবেছি জ্যোতির উৎস তুমিই ভবে।
দেখেছিলে চেহারাটা কালো আকার,
হার মেনেছে অরূণ কতশত বার।
তুমিতো তুচ্ছ কাছেতে তার,
মাথা তুলে আছে সর্বত্র কালো আঁধার।
বাধাহীন ইচ্ছায় খুশীতে যেথায়,
বিচরণ করে সদা কালো নির্দ্বিধায়।
কালো যখন সরে যায় খুলে দিয়ে দ্বার,
তবেই তো পাও তুমি পৃথিবীর অধিকার।




Thursday, 3 December 2015

হিমেল হেমন্ত

হিমেল হেমন্ত

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রঙে রঙে সুরে সুরে আসিল হেমন্ত,
মিশিয়ে দিবো হেমন্তে কবিতার ছন্দ।
গাঁদা ফুলের গন্ধে ভরা হিমেল বাতাস,
ধোঁয়াটে আকাশটা শিশিরে সিক্ত ঘাস।
শত বাধা তুচ্ছিয়ে কুহেলিকা এড়িয়ে,
রবিকর আসে তবু আকাশটা পেরিয়ে।
দল ছাড়া মৌমাছি ফুলের আলিঙ্গনে,
মধু পান করে যায় গুনগুনানি গানে।
শালিকের ঝাঁক উড়ে মাথার উপর,
সুরতরঙ্গ হারিয়ে করে কেঁচরমেচর।
যেদিকে তাকায় দেখি মাঠ প্রান্তরে,
বৃক্ষরাজি দাঁড়িয়ে আছে সারে সারে।
খাল বিল ডোবাতে শাপলা আর পদ্ম,
বাতাসে উড়ে আশে গাঁদা ফুলের গন্ধ।
গলাকাটা খাজুর গাছ দাঁড়িয়ে মাঠে,
টসটস পড়ে রস বাঁকা গাছের কাঠে।
ছোট পাখির কল্লোল খাজুরের রসে,
কেউ উড়ে খায় রস কেউ আছে বসে।
এক বাটি মুড়ি হাতে চাঁদু বারান্দায়,
খাজুরের ফুটন্ত রস মুড়িতে মিশায়।
স্বর্ণপুরী বাংলা দেশ পাকাধানের ঘ্রাণ,
পীতবর্ণ পুষ্পরোদে বাংলা মায়ের প্রাণ।
গৃহবধূর ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব,
ঢেঁকিতে ধান ভাঙা বাঙালির গৌরব।
সেদিনের হেমন্ত বদলে গেছে কতো,
তবুও আছে যতো কোথা নাই এতো।

Sunday, 29 November 2015

সুপ্রভাত বাংলা খবর

সুপ্রভাত বাংলা খবর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

খবরের প্রারম্ভে লেখনী সুপ্রভাত,
পড়ে দেখি খবরে সবটা দুঃসংবাদ।
অহরহ চলে কত শিশু নারী পাচার,
খবরে কেন মিথ্যা সুপ্রভাত উদার?
অবলার মান হারায় দিনের বেলা,
খবরে হয় প্রকাশ নারীদেহ খেলা।
নির্দোষী সাজা পায় প্রমাণ অভাবে,
অবাধে দোষীরা ঘুরে দলবদ্ধভাবে।
সমাচারে হয় প্রকাশ নীরিহ নিগ্রহী,
প্রতিবাদে হয়ে অক্ষম সদা প্রদাহী।
টেলিভিশন খুলিতেই খবর উপম,
সুপ্রভাত দিয়ে বলে বাজার গরম।
বোমের নিস্বন আর কোথাও খুন,
ওদের রাজত্ব যেন জ্বলন্ত আগুন।

Wednesday, 25 November 2015

অভিমানী পৃথিবী

অভিমানী পৃথিবী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

না থাকতে তোমরা যদি হেথা পৃথিবীতে,
অভিমান করি তাই আসে কি যায় তাতে?
একা একা ছিলাম ভালো তবু শতগুণে!
রক্তাক্ত করেছ বক্ষ আসিয়া জনে-জনে।
সহ্য ধৈর্য সহিষ্ণুতায় ধরেছি বক্ষ মাঝে,
সহে যায় নির্যাতন তোমাদের অবুঝে।
তোমাদের খুশী করতে হয়েছি কদাকার, 
সমীপে মাতৃ বন্দনা পশ্চাতে অনাচার। 
যতকিছু আছে মোর করি সবারে বন্টন, 
সুযোগে করেছ কলুষিত আমার অঙ্গন। 
ভেবেছিলে পৃথিবীতে আছে প্রয়োজন ? 
ভুল ভেবে ঠাঁই বসে তুমি গুণীজন।
ঘাতে ঘাতে পদপৃষ্ঠে জর্জরিত খননে,
অবজ্ঞা করেছ সদা কারণে অকারণে!
খুনোখুনি রাহাজানি ভাই ভায়ের সাথে,
ভিজে যায় দেহ মোর তোমাদের রক্তে।
মহামানব গুণীজন আছ তোমরা যত,
দেখিতে পাওনা সবে ক্ষতবিক্ষত কতো।
হেলিত সতত তবু নিয়ে মাতৃত্বের ভার,
এর বেশী দিতে পারি বল কতো আর? 

Monday, 23 November 2015

শয়তানের দুষ্টুমি

শয়তানের দুষ্টুমি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কঙ্কাল সার দেহের গোড়ন
কুবুদ্ধি আর দুষ্টুমিতে চতুর,
তল্লাস করে ঘুরছে শয়তান
কোথায় পাবে কারো কসুর।
ঘুমিয়ে আছে দেখলে মানুষ
পালাই দিয়ে কান সুড়সুড়,
মজা দেখতে দাঁড়াই দূরে
চমকে মানুষ উঠছে ধুড়মুড়।
দিনে রাতে মানুষের পিছে
ঘুরছে শয়তান ঘুর-ঘুর,
মজা দেখতে লাগিয়ে দিলো
দেওয়াল সেঁটে আঁখের গুড়।
মিঠাই মিঠাই গন্ধে মাতাল
ঘরের কোণের ধেড়ে ইঁদুর,
টিকটিকি আর পিঁপড়া মাছি
সারিতে সবাই আসছে প্রচুর।
ইঁদুর ধরতে ছুটছে বিড়াল
সাঁঝের বেলা গড়িয়ে দুপুর,
তাইনা দেখে রাম কানায়ের
বিড়াল তাড়াই কালো কুকুর।
চালের মাথায় বসে শয়তান
দেখছে খাচ্ছে অস্থি কুড়মুড়,
মাঝে মাঝে খিলখিল হাসে
অস্থি খেয়ে তুলছে ঢেকুর।
গিন্নিরে ডাকি চিৎকার করি
দাওতো হাতে কাঠের মুগুর,
মুগুর ছুড়তে পালায় কুকুর
হাঁড়ি-কুঁড়ি পড়লো হুড়মুড়।



Friday, 20 November 2015

অভিমানী

অভিমানী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

প্রেমের কথা ভাবিনা কখনো
তোমাকে নিয়ে আর,
সুখ নিমেষে এসেছিলে পাশে
নির্দয় বন্ধু আমার।
ফুরাবে যেদিন কুসীদ তোমার
পালাবে ভিন-দেশে,
ছায়া বৃষ্টিতে মেঘেদের সাথে
খেলবো অবশেষে।
দেরি নাই আর আসবে পূনর
হরিৎ পত্র শাখায়,
বলবোনা কথা শুনবোনা গান
সেই মিষ্টি গলায়।
বসতি কোথায় নাই ঠিকানা
সবার জানাজানি,
সাথের পাখী দেখছে তোমায়
করছে কানাকানি।
তাইনা ভেবে চাইনা তোমায়
কেমনে ভালোবাসি,
মধুর কন্ঠে ভুলাও যতোই
তুমি বসন্ত পিয়াসি।
আবার তেমন আসবে যখন
সেই বসন্তের সাথে,
মধুর গলায় ডেকোনা কুহু
ঘুম ভাঙবে রাতে।
রাগের কথা হক বা না হক
অভিমান তো আছে,
তাইতো তোমার মধুর সুর
বাজে হৃদয় মাঝে।


Thursday, 19 November 2015

কি হবে বিশুদ্ধ জল

কি হবে বিশুদ্ধ জল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অপরের দোষ গেয়ে হাটে ভাঙো হাঁড়ি,
নিজেদের দোষ ঢাকতে রঙের রকমারি।
রাজপথে গাও যদি দোষ দিয়ে সবার,
নিজের কেমন সদ্গুণ দেখাও একবার।
আতর সুবাস দিয়ে আছে দুর্গন্ধ ঢাকা,
শুভ্র পরিধানে দেহ অন্তরে কালি মাখা।
গুরুর আসন দিয়ে চরণ তলে যারা,
তোমাদের কাছে আজ ঘৃণিত তারা।
নিরীহ মানুষ গুলো করে তাই বিশ্বাস,
সুযোগে মেরেছ তাদের করে রুদ্ধশ্বাস।
দেখাতে ক্ষমতা তুমি পেয়ে অক্ষমতায়,
দুর্বলের যায় প্রাণ তোমাদের দক্ষতায়।
ছুটে যায় দুর্বলেরা প্রাণ বাঁচাতে কাছে,
শীর্ষে ধরেছে যারা জুতের আগে-পিছে।
দেখিয়েছ পথ যেমন হাঁটে সেই পথে,
দিনেরাতে অবিচার কর তাদের সাথে।
ছোটলোকের মান যাক নাই আপসোস,
পদতলে দেখো ওদের ভাবো কর্মদোষ।

Wednesday, 11 November 2015

সর্ব ধারক তুমি

সর্ব ধারক তুমি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আমোন বোরো কখনো মৌসুম চৈতী,
বারেক হায়নে ধরাগর্ভে ত্রয়রতি।
ছয় ঋতু বারো রতি অধুনা নারী,
ত্রয়রতিয় সর্বজনম গর্ভে তোমারি।
তোমার জঠর মাগো স্বর্গভুমি,
সর্ববস্তু ধারণি বক্ষে মহামাতৃ তুমি।
ঔজ্জল্ল কর জীবন তোমার ছোঁয়ায়,
জীবন সীমান্তে দিও শীতলতার ঠাই।
অগণিত জীব সবই তোমারি সন্তান,
সর্ববস্তু ধরেছ বক্ষে দিয়েছ স্থান।
জীব যতো আহার ততো, তোমারি দান,
চোষ্য, চর্বণে কেউ, করে কেউ পান।
সর্ব আত্মা অচৈতন্যে, কেউবা চৈতন্যে,
অক্ষমে মিশেছে সাথে কেউ সঞ্চালনে।
হানাহানি রাহাজানি বক্ষে তোমার,
তবু হওনা ধৈর্যহারা করে অঙ্গিকার।
মমতাময়ী সহ্য সহনী যুগযুগান্তরে,
শীর্ষে ধরেছ মোদের রয়েছ কাতরে।
খুলে দাও যদি একবার রুদ্ধের দ্বার,
অগ্নিকাণ্ড জলস্রোতে হবে একাকার।
পরিণামের কথা আজ নাই কারো জানা,
হয়তো থাকবেনা সঙ্কেত শূণ্য প্রতারণা।
অসীম ক্ষমতা মাগো তোমার করুণায়,
প্রহরিণী রয়েছ তুমি আমরা নিদ্রায়।
প্রাণবন্তেও তুমি বিলীনের সাথে তুমি,
কৃতজ্ঞ তোমার কাছে হে গর্ভভূমি।

Friday, 6 November 2015

রূপশ্রী নির্বসিত্তা

রূপশ্রী নির্বসিত্তা 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রোদ দুপুরে পথপ্রান্তে ছলছল চোখে, 
ভূষণে বিধবা এক বিস্বাদ হাসি মুখে! 
আবৃতে শুভ্র শাড়ি কেশবীথি ফাঁকা,
অকালে খুইয়ে পতি ত্যক্ত হস্তশাঁখা।
দিন অনাহারী কে ও-ই নারী হীনতায়,
পথ চলতে ক্ষণে শান্তে প্রাকার সহায়।
প্রশ্নঘাতে জর্জরিত মন্থরে কাছে যায়, 
ক্ষণে ক্ষণে ভাসে মুখ আবার হারায়। 
চেনা কোনো নারী বুঝি বড় অসহায়, 
কে-গো তুমি ক্লিষ্ট নারী দ্বিধায় শুধাই।
নাম ধরে ডাকে মোরে তুমি সেই জন?
নির্বাক থ' মুই জড়তায় হারায় বচন! 
মাথা ঝিম ঝিম গা হিম কষ্টে ঠাহরি, 
পতি হারা গৃহছাড়া চেনা মুখ রূপশ্রী।
লুকানো কি যায় কভু নিভৃতের ব্যথা,
অশ্রুসজল নেত্র তার বলে আত্মকথা!
পতি বিনা পতিগৃহে তিক্তের স্বাদে,
রূপশ্রী নির্বসিত্তা অপয়া অপবাদে।
জমানো ব্যথা বুকে নিভৃতে অস্পষ্টে,
অস্ফুটে নেত্রকোণে অপেক্ষায় কষ্টে।
হিংসুটে শাশুড়ি যার পতিগৃহে বাস,
পতি বিনা নারী জীবন হয় সর্বনাশ।
নিপীড়নে ফিরে রূপশ্রী শৈশব গৃহে,
কটুকথা বলে লোকে নির্বাকে সহে।

Sunday, 1 November 2015

সত্যের সন্ধানে

সত্যের সন্ধানে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কেউ জানেনা নিজের কথা,
জীবন পথের শেষ অস্তিত্ব,
গোলক ধাঁধার এই দুনিয়ায়,
কোনটা মিথ্যা কোনটা সত্য।
বলতে পার আছো কি নাই,
স্পর্শ কাতরতার অনুভূতি।
এক পথেরই পথিক মোরা,
আছে কি কারো সহানুভূতি?
ভাবছো যেটা দেখছো ভিন্ন,
হারিয়ে দিয়ে নিজের মনটা,
গোলক ধাঁধায় পড়ে এবার,
দেখছে সবাই সবটা উলটা।
স্বপ্ন সত্য না বাস্তব জীবন,
পারবে দিতে সঠিক প্রমাণ?
ধাঁধায় ধাঁধায় বৃথাই জীবন,
মিথ্যা ভাবো আকাশ সমান।

Saturday, 31 October 2015

কুহক বন্দি

কুহক বন্দি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পালক বিহীন মন তবু আকাঙ্খিতে
ভাসমান শূন্য পথ দূর দিগন্তে,
গগনতলে মেঘেদের সাথে
ইচ্ছেতো করে উড়তে।
ওদের দুহাত ধরে।
যেতে মন সেথায় ছটফট অস্থিরে।
বাউলিয়ার একতারা সুর গানে
সৃজন সেই পথ পথোচারণে,
হাঁটা পথ ওই যে গাঁ দূরে,
পারিনা রহিতে চুপ ঘরে,
কখনো ভাবি নির্জনে করি বিচরণ।
করি ঘোরাঘুরি গোটা জগৎটায়।
স্থলে জলে গগনো মহীধরে,
নিরাশার ভাবনা অন্তরে।
মায়াজালের কুটিরে।
বুঝিনা পাগল মন কখনো আবার,
সুন্দর ওই ছোট্ট পাখিটা হয়ে।
অপারক তবু অমনি করে
পুষ্পপাঁপড়িই খেলতে,
হরিৎ মাঠের প্রান্তরে।
অজানা কোনো আশায় নভস্বানে
ছুটন্ত অবিরাম কখনো ঘুর্নণে,
করে আশা আজও চরাচরে।
রয়ে যায় অপূর্ণ আশা,
ইচ্ছেটা যেমন করে।
ওরে মন পাগলা, মিথ্যা ঘোর নেশা,
হবে কি পূরণ, মনের যত আশা?
চুপ থাকা ভালো খুশি অন্তরে,
যতটুকু সম্বল তেমনি করে,
হবে কি আর ইচ্ছা করে?

Friday, 30 October 2015

উপকারের প্রতিদান

উপকারের প্রতিদান
আব্দুল মান্নান মল্লিক
নির্বাক দাঁড়িয়ে আমি তোমাদের স্বার্থে,
কাটে মোর দিবারাত্রি মাঠের পাশ পথে।
প্রাণ বাঁচাতে শত প্রানীর যুগিয়েছি অন্ন,
স্রস্টার প্রগাঢ় সৃজন তাইতো আমি ধন্য।
মায়ের আঁচল সমান মায়া মমতা দিয়ে,
ছায়াতলে রাখি সবার আমি ছাতা হয়ে।
ছায়া ঘেরা উঠান মোর ছায়া দিয়ে সবার,
তবু মোরে করে আঘাত চালিয়ে কুঠার।
নীরব থাকি ক্ষত সহি করিনা প্রতিবাদ,
শুনিতে পাওনা তাই হৃদয়ের আর্তনাদ।
করে কেউ খাদ্য পশুর ছিঁড়ে পালি পাতা,
ঘাতে ঘাতে হয়ে যায় অবসন্ন জোড়তা।
কেউ করে খড়ম পায়ের গৃহসজ্জা খাট,
কেউ মোরে জ্বালাই আগুন করে চৌপাট।
শান্ত হয় ক্লান্ত পথিক ছায়াতলে আমার,
করেনা কেউ কদর মোর সহি অত্যাচার।
গুণাগুণ গাইবে সেদিন কেউ যাবে ভুলে
অনলে দহন নয়ত ভাসবো নৌকা জলে।
রেখে গেলাম প্রশ্ন মোর তোমাদের কাছে,
দিয়ে গেলাম সবটুকু কতটুকু আর আছে?

Tuesday, 27 October 2015

দুমনা

দুমনা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কারবা বাড়ির বউগো তুমি
নামছ হেলে দুলে,
মাছ ধরতে ছিপ ফেলেছি
ঢেউ দিওনা জলে।
সরিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল
উঠাও বদন খানি,
মোড়ল বাড়ির বউ নাকিগো
কেমন করে জানি?
আলতা আলতা পা দুখানি
জলে সাঁতার দিয়ে,
মাছ ধরতে বিফল হলাম
তোমার দিকে চেয়ে।
ছিপের সুতো টানছে মাছে
দৃষ্টি তোমার দিকে,
মাঝ নদীতে ছিপটা ভাসে
জ্ঞান নাই সেদিকে।
সর্ষে ফুলের শাড়ির আঁচল
রোদের ঝিকিমিকি,
মনটা আমার হলো পাগল
কেমনে বদন দেখি।


Monday, 26 October 2015

স্বপ্ন দেখা সত্য

স্বপ্ন দেখা সত্য

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিশ্বাস কর বা নাইবা কর
আসে কি যায় তাতে।
গান শুনিয়ে নাচ দেখেছি
জল পরীদের সাথে।।
কখনো নিজে পাখি হয়ে
নীল গগনের দেশে।
ডানা মেলে উড়তে থাকি
বলতে লজ্জা কিসে।।
মিথ্যা কথা বলতে নারি
সত্য পথেই চলি।
সত্য পথের পথিক আমি
সত্য কথায় বলি।।
নীল আকাশে জ্বলে উঠি
ওই তারাদের সঙ্গে।
সাগর তলে দেখি কেমন
নাচতে থাকি তরঙ্গে।।
কখন নির্জন পুকুর পাড়ে
যেথায় কেহ নাই।
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ
কোন দিকেতে যায়।।
স্বপ্নের কথা ব্যাক্ত করি
মিথ্যা কিছুই নই।
পাইনি সত্য বাস্তব খুজে
স্বপ্ন প্রকৃত হয়।।

Saturday, 24 October 2015

সময়ের প্রথা

সময় সরণী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হারানো সময় কভু ফিরিবে কি আর?
বলিতে বলিতে যায় এমুহুর্ত আবার।
অবরূদ্ধ হবে সবার চলন ঘুর্ণন গতি,
চিরতরে বহিয়া যাবে সময় নিরবধি।
ঘটন আর অঘটন সব কিছু জড়িয়ে,
স্বকীয় পথ ধরে যায় সময় দৌড়িয়ে।
স্বীয়কক্ষে চলে সময় যেন প্রতিজ্ঞায়,
অদৃশ্যের শিহরণে অনুভূত সংজ্ঞায়।
মনের পাখিটা যেন ভাবে মনে মনে,
সময়ের অপেক্ষায় উড়িবে তৎক্ষণে।
সময়ের ভাবনা কেউ ভাবে সর্বদায়,
ক্ষয়িত করে কেউ অতি অবহেলায়।
প্রশ্বাসের পরে যখন ফিরিবেনা শ্বাস,
ভুলে যাবে সবকিছু সময়টা আশ্বাস।
অসময়টা মিথ্যা কথা বলি বারংবার,
তখনও ছিল সময় ভাবিও একবার।


Wednesday, 21 October 2015

√ অবিনাশি

অবিনাশী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পাখিদের গানে গানে মৃদু বাতাসে,
সোভিত মর্তভূমি প্রাতের উদ্ভাসে।
আকাশের সিড়ি বেয়ে ছুঁয়েছিলে ভুমি,
যেথায় দুজন কেবল আমি আর তুমি।
উষ্ণতার আলিঙ্গনে মাতোয়ারা দু-জন,
খোলা মাঠ গগন-তলে যেথায় নির্জন।
রূপের জৌলুস তোমার ঝরে স্বর্ণাভায়,
চমকিত ধরণী-পৃষ্ঠ আচ্ছাদিত সমুদায়।
স্বর্ণাভ্র ছড়িয়ে দিয়ে মোর সারা গায়,
রঙ খেলায় মত্ততা প্রাতের বেলায়।
উড়ে পড়া গায়ে মোর আলতো অনিলে,
দেহ-মর্দন মত্ত নিগূঢ়ে শাড়ির অঞ্চলে।
বয়ে যায় সময় যত হইয়া উত্তেজিত,
ভিজে যায় ঘর্মে মাটি মর্দনে নিপীড়িত।
সম্মুখের পথ মোর আছে কিছু বাকী,
তুমি কেবল চিরকাল রহিবে একাকী।
প্রেমের নিষ্পত্তি কবে কে তা জানে,
মনে রেখো জীবনী মোর প্রেম বন্ধনে।
কালো আঁধার জীবন হবে নইলে তুমি,
তোমার পরশ পেয়ে শোভিত মর্তভূমি।

Sunday, 18 October 2015

√ প্রত্যাগত দেবীমাতা

প্রত্যাগত দেবীমাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সঙ্কট তরিকায় মাগো করেছ দেরি,
পড়লো মনে আজ বুঝি বাবার বাড়ি?
সামগ্রী উপকরণ যত তোমারি জন্য,
তোমার আগমনে মাগো আমরা ধন্য।
পদতলে দিও মাগো একটুখানি ঠাঁই,
সঙ্কটকালে কর উদ্ধার বড় অসহায়।
দশভুজি রণসজ্জায় স্বসস্ত্র বজ্রমুঠে,
অবসান কর পাপের পূজিব একনিষ্ঠে।
এইটুকু দাবি মোদের তোমার নিকট,
অভিযোগ কর গ্রহন হয়োনা বিকট।
মুছে দাও গ্লানি যত জাতি ভেদাভেদ,
সন্তান তোমারি মা-গো তবুও বিভেদ।
কর আজ ভিন্ন মোচন সবাই সমান,
সর্ব জীবের সেরা হবে মানুষ মহান।
সর্বনাশা সবার সাথে অসুরের দল,
বিচরণ দিনে-রাতে স্বর্গ মর্ত্য ভূতল।
আচ্ছাদনে আজও তারা দৈত্য অসুর,
কেন তবে আজ মানুষ অধিক নিষ্ঠুর।
নাহি হত ভাগাভাগি হিন্দু মুসলমান,
সূচনায় হয়ে যেত অসুরের অবসান।
ধীক্কারি যুম্বাসুর বালা জারজ জনম্,
জন্তু-দানব আলিঙ্গনের বংশ অধম।
কর মাগো আজ তুমি ওদের নিধন,
নইলে অনলে দহন হইবে ত্রিভূবণ।
কন্ধরে ধোতি-প্রান্ত করি করজোড়,
অস্ত্রাঘাতে কর মাগো অসুর নশ্বর্।
আরাধনায় হয়ে যদি অণুমাত্র চ্যুতি,
ক্ষমা করে দাও মাগো সেবাতে ত্রুটি।


Friday, 16 October 2015

খলসি বিলের মাঠে

খলসি বিলের মাঠ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

জানলা দিয়ে কে ডাকেরে,
রাত দুপুরের পরে।
মাছ ধরতে যেতে আমি,
মরবো নাকি জাড়ে?

এখনো অনেক বাকী আছে,
ভোর বেলাটা হতে।
যীন পরিতে আসবে তেড়ে,
যাবোনা এত রাতে।।

সূর্যের আলো ফোটার আগে,
আসবি ফিরে তুই।
খলসি বিলের মাঠে ধরবো,
কাতলা মৃগেল রুই।।

সঙ্গে আনতে ভুলিসনা যেন,
রেশন ভোটের ছবি।
বিশ্বাস পাইনা রাতে কারো,
যীন পরীটা হোবি।।

যখন যেমন ইচ্ছা তেমন,
কখনো সুন্দর নারী।
কখনো ছাগল গরু-ভেঁড়া,
কখনো মেয়ে বুড়ি।।

যীন পরীরা ডুবিয়ে মারে,
খলসি বিলের জলে।
রাত্রি বেলায় জলের ধারে,
কাউকে একা পেলে।।


Tuesday, 13 October 2015

অস্ফুট কবিতা

অস্ফুট কবিতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কবিতার প্রচলন যুগযুগান্তরে
কবিতা ছিল তখন ছন্দাকারে
মৃত্তিকা গভীরে পেয়েছিনু হাতে
প্রাচীনের লিপি মলিনে চিত্রিতে
পুরাণের কাব্যকথা মনে হয় বটে
খোদাই এ চিত্রলিপি ছিল নিভৃতে
বুঝিবারে সঙ্কট হইয়া অসহায়
আবরিত মলীনে ছিল নিষ্প্রভায়
পড়েছিনু প্রযত্নে কিছু হ্রস্বকায়
চিত্রলিপি ছিলো পাথরে খোদাই
হইতো গণেশ হবে ভেবেছি মনে
কার্ত্তিকের চিত্র যেন অন্য কোণে
মলিনের বিভেদে অস্পষ্টে লিপি
খোদাই-এ আবদ্ধ নাম দূর্গা দেবি
মহাশক্তির অধিকারী যুগল কেশরী
কেশরী আরোহী পৃষ্ঠে বাহক শ্রীহরি
অস্পষ্টে ছিল নাম কবি কোনজন
শতপ্রণাম করি তবু কবি গুরুজন


√ রসের সাগর জ্যৈষ্ঠ

রসের সাগর জ্যৈষ্ঠ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রসে ভরা জ্যৈষ্ঠ মাসে আকাশ বাতাস মাতাল,
আম আনারস পাকলো লিচু অবশেষে কাঁঠাল।
রংবেরঙের পাখিরা গাছের মিষ্টি ফল খেয়ে ,
নৃত্য করে শাখায় শাখায় মিষ্টি গান গেয়ে।
পাকা ফলের গন্ধে ভ্রমর গুনগুন গেয়ে উড়ে,
গাছে গাছে পাখির কল্লোল সারা বাংলা জুড়ে।
বদের আঁটি কাঠবিড়ালি বেহায়াপনা লেজুড়ে,
ভোজন হেলায় নষ্টের গোড়া ফলে ক্ষত করে।
ঝরে পড়ে পাকা খাজুর মাটিই গাছের গোঁড়ে,
পাড়ার মাছি জুটলো এসে ভন-ভনিয়ে উড়ে।
কখনো বা পাকা কাঁঠাল গাছের থেকে পড়ে,
ফলের ঝুড়ি আমীর গরীব সবার ঘরে ঘরে।
হীমসাগর আর রানীভোগ মিষ্ট আম ল্যাংড়া,
ইচ্ছা করলে টকের স্বাদ খেও গাছের আমড়া।
বলবো কত আমের কথা যায়না এতো বলা,
খাজুর জাম বাঙ্গি পাকে আরও পাকে কলা।
কামরাঙা আর সফেদা গাব রসে ভরা স্বাসে,
চাইলে খেতে তাও পাবে জৈষ্ঠ মাসের শেষে।


বাংলার শরৎকাল


বাংলার শরৎকাল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ছিন্ন মেঘের ভিন্ন পথ নীল গগনের গায়ে,
চাতক উড়ে মত্ত হয়ে শিশির কোণা খেয়ে।
রোদের উপর সাঁতার দিয়ে ছায়ার ঘুরাঘুরি,
শরৎকালে রোদ ছায়াতে খেলছে লুকোচুরি।
দূর দিগন্তে মাঠের পরে ফুল ভরা কাশবন,
মেঘের ফাঁকে রোদের চমক শীর্ষে চনমন।
বিহগগীতি শিউলি শাখায় উড়ছে মধুকর,
শরৎ কালের রূপের ঝলক হতাশ মনোহর।
ডাহুক ডাকে বৃক্ষ শাখে ডাহুকী খাত পাড়ে,
কুঞ্জবনে পাপিয়ার পিউ ভেকেরা জলাধারে।
ধোঁয়া ধোঁয়া নীহার ওড়ে ঐ যে দূরের পানে,
সুরের ছন্দে মত্ত বাতাস রাখালীয়ার গানে।
মাছরাঙাটি বসলো ডালে দৃষ্টি পুকুর জলে,
রং-বাহারি দেহের গড়ন অধর বাহার লালে।
ছাতিম জারুল চাঁপা ফুটে আরও ফুটে বেলি,
প্রজাপতির পাখনা ঘাতে ঝরে পড়ে শিউলি।
সন্ধ্যাতারা ফুল ঝরে যায় শরৎ প্রাত কালে,
নয়নতারা ফুলগুলো সব শীর্ষ গাছে দোলে।
গুনগুন সুরে ফুল ফুটিয়ে ভ্রমর যায় উড়ে,
মোদের গৌরব ঋতুকন্যা সারা বাংলা জুড়ে।

Thursday, 8 October 2015

আজব শহর কলকাতা

আজব শহর কলকাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

স্বীয় চোখে দেখেছিনু ঘটনা একদিন,
আট দশ হবে বয়স দেহ অতি ক্ষীণ।
হাত পাতিয়া দাঁড়াইল দরজার দ্বারে,
শিয়ালদহের অন্নশালায় রাস্তার ধারে।
বাবু সাহেব বেরিয়ে চক্ষু লাল করে,
এক চোড় মারে গালে গায়ের জোরে।
ছেলেটি উঠিয়া বলে জোড়ে হাত দুটি,
এবার তো দিবে বাবু এক টুকরো রুটি?
এই কথায় রাগে বাবু যেন পাগলা হাতি,
রুটি বিনা মারে বাবু বুটোপায়ের লাথি।
গলা ধাক্কায় ফেলে দিয়ে পথের উপর,
অপবাদ দিয়ে বলে বেটা পাক্কা চোর।
আমারই মতো সেথায় ছিলো যতজন,
সাহসে আসেনা কাছে কোন একজন।
কলকাতার শিয়ালদহ আজব শহর,
কারও বাস রাজভবন কারও নাই ঘর।
মারামারি কাড়াকাড়ি করে আবর্জনায়,
কুকুরের খাবার কাড়ে অশ্রুজলে খাই।
কাউকে দেখেনা কেউ আজব শহরে,
জল তেষ্টাই যদিও কেউ সম্মুখে মরে।
এই শহরে যদি কেউ আসে প্রথমবার,
অশ্রুজলে ফিরবে বাড়ী দেখে অনাচার। 


Tuesday, 6 October 2015

রঙের জেল্লা

রঙের জেল্লা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দেখছি মানুষ নকল সবাই,
খাঁটি আছে কয়জনা।
আসল মানুষ আছে কোথায়,
করছে সবাই প্রবঞ্চনা

আমিষ খেয়ে বড়াই করে,
মুখের অধিক থাবা।
খাচ্ছে যাদের মেরে ধরে,
দেখায় তাদের সেবা।।

মোণ্ডা মিঠাই খেতে দেখি,
আরও দধি ছানা।
রইলোনা আর খেতে বাকী,
তবু কেন ঝালবাসনা।।

মানুষ নাকি জীবের সেরা,
ভূবনের এই মাঝে।
চালচলন তার হয় অপরা,
ঘুরছে নানান সাজে।।

আসল নকল কারে বলি,
গোলক ধাঁধার খেলা।
সবটা যেন গুলিয়ে ফেলি,
যায়না মুখে বলা।।

করেনা নির্ণয় ভালো মন্দ,
যেমন ইচ্ছাই চলে।
হিংসা বিদ্বেষ লাগাই দন্দ্ব,
সম্পর্কের কথা বলে।।

অশ্লীল ভাষা যে মুখেতে,
গাইছে মধুর গান।
মধুর বুলি দিবস ও রাতে,
শুনলে জ্বলে প্রাণ।।

নিজের গৌরব নিজে করে,
সবার উপর মানুষ।  
পশু পাখিরা লজ্জায় মরে,
হয়েছে মানুষ বেহুঁশ।

বুঝে ভালো মানুষের সাথে,
বিবাদ লাগে যাতে।
যেথাই সেথাই ঝগড়া বাঁধে,
কুলমান আর জাতে।।

কবিতা নয় মনের কাকুতি ,
দেখছ শুধুই ছন্দ।
পশুপক্ষী নাকি মানুষ সত্যি,
মনের মাঝে দন্দ্ব।।

Sunday, 4 October 2015

শুন্য পিঞ্জর

শুন্য পিঞ্জর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সিকতায় ভূষিত ঘর হৃদনদী তীরে,
নদীজলের ঢেউ লাগি ভাঙে অচিরে।
এপার ভাঙ্গিয়া গঠন অপারে নীড়,
খালি পড়ে থাকে মোর হৃদনদী তীর।
স্তব্ধ স্রোতের ধারা তোমায় ছাড়া,
পড়ে থাকি নির্জনে আমি দিশাহারা।
ঘরের ঘরণী যেন জীবন সঙ্গিনী,
ছেড়ে যায় ওপারে আমি একাকিনী।
হৃদাঙ্গনে ছিল যত ভাবনা আমার,
নিমেষে হারিয়ে যায় স্বপ্নের আকার।
সোহাগের ঠাঁই দিয়ে অস্থি পিঞ্জরে,
তামস্র নির্জনে বিরাজ অজ্ঞাতসারে।
বাঁশরী বাজাই বাঁশী মৃদু বাতাসে,
ধকধক বেজে যাও শ্বাস ও প্রশ্বাসে।
করিনি কশুর কিছু ধরে রাখিবারে,
তথাপি পারিনি রক্ষিতে অন্তরে ধরে।
অন্তরে আশা যত তোমাকে নিয়ে,
প্রসারি ধোঁয়া হয়ে গেলে ব্যথা দিয়ে।



Saturday, 3 October 2015

তবুও হয়নি কথা

তবুও হয়নি কথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

জমানো গুপ্তকথা বলিতে তোমায়,
জাগে মনে বারবার অপেক্ষায় তাই।
দুটো কথা বলি যদি, যদি হয় দোষ,
হয়না স্পর্ধা তাই,  হৃদয়ে  আপসোস।
আজ নয় কাল বলি, ভাবি যতবার,
বলিতে আসিয়া ফিরে গেছি বারবার।
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে রাতে,
পার হয়ে গেছে রাত পাখিদের ডাকে।
সোনালী আলোর ঝলক দুর্ব্বার শিশিরে,
তোমার হাসি যেন, রেখেছে শিশির ধরে।
সোনালী শিশির যেন ছল-ছল নয়নে,
হাসিতে খুজে কারে, চেয়ে মোর পানে।
দেখিবার আশে, তোমার বাড়ীর পাশে,
ঘোরাঘুরিতে, সন্ধে তারা বিদ্রূপে হাসে।
সারাদিন পর সন্ধের অবশেষে,
সোনালী আলোয় সূর্য গেছে মিশে।
ঢলে পড়ে পূর্ণ  শশী দিনান্তের শেষে,
সারাদিন ব্যর্থ মোর, ঘরে ফিরি নিরাশে।

Friday, 2 October 2015

এসো এসো দেবী মাতা

এসো এসো দেবী মাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নতুন নতুন সাজসজ্জায় মোণ্ডা-মিঠাই ভাঁড়ে,
পরিজনদের আনা-গোনা মা আসছে ঘরে।
সাদা শাড়ী লাল পেড়েতে করবে দেবী বরণ,
বধূরা জটলায় বরণডালায় নানান উপকরণ। 
রঙবেরঙে গাঁয়ের মেয়ে করবে দেবী বন্দনা,
সোনার সাজে আসবে এবার দুর্গা দেবী মা।
বায়না ধরতে ঢাকির ভিড় মঠের প্রাঙ্গণে, 
ধুনুচি নাচে নাচবে সবে পড়ার লোকজনে।
আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষ ঐ যে আসে পুনর,
সমারোহ আর উল্লাসিত বাংলার প্রতি ঘর।
বোমবাজি আর ঢাকের শব্দ মা আসবে ঘরে,
রণসজ্জায় কেশরী পৃষ্ঠে নগ্ন হাতিয়ার ধরে।
মুড়ি মুড়কি হরেক নাড়ু ঘরে ফলের ডালি,
উলুধ্বনি ডাকছে সবে বাংলার অলি-গলি।
দগ্ধ ঘি তার গন্ধ ছড়াই বাতাস হল মাতাল,
ধুপের ধোঁয়া সান্ধ্য-শাঁখে সারা বাংলা উত্তাল।
ব্যস্ত মানুষ কেনাকাটায় হাট বাজারের ভীড়ে,
গরীব দুঃখীরা শূন্য হাতে কাঁদছে অশ্রুনীরে।
কেনাকাটা হয়নি যাদের ঘরের কোণে চুপ,
কেমন করে দেখবে তারা দেবী মায়ের রূপ?
মদের নেশায় পয়সা উড়ে কুবের আত্মহারা,
ঘরের কোণে গরীব কাঁদে বইছে অশ্রুধারা।
নিজের মতো ভাবতে পার তবেই সবাই সুখী,
সমাজের এই ভালোবাসায় মা যে হবে খুশি।
স্বর্গভুমিই বসে মাগো করছো কি আজ তুমি?
অসুরেরা করছে উৎপাত জ্বালিয়ে মর্ত্যভুমি।
সিঁদুর থালায় গগন-ভেদি তোমার অপেক্ষায়,
পুবের রবি ছড়ায় আলো রঞ্জিত ভূবনটায়।
পদ্মপুষ্প বিল্বপত্র আড়ম্বর প্রদীপ শিখায়,
শত আটেক পূর্ণ প্রতি তোমার অপেক্ষায়।
দৃষ্টি দিয়ে গলাও পাথর পুষ্প পাঁপড়িই তুমি!
বিনাশ কর দানব কুলের বাঁচাও মর্তভূমি।
কখনো শীতল কখনো অগ্নি কখনো সংযমী,
কখনো স্বর্গ কখনো মর্ত্য কখনো অন্তর্যামী।
কখনো তুমি উদারতা কখনো অসুর মর্দিনী,
দুঃসাহসী নারী তুমি সর্ব শক্তির অধিকারিনী।
রূপ হইতে রূপান্তরে কখনো এসেছ ঊমা,
বরণ করতে ডাকবো এবার দুর্গা দেবী মা। 
একশত আটে অবতরনে দুর্গা হয়ে যখন,
দুর্গতি নাশ করেছ তুমি করে অসুর নিধন।
এযুগ ওযুগ যুগ-যুগান্তর তুমিই এক নারী,
নারীর আদর্শ ধন্য মা-গো রূপের বলিহারি।


Tuesday, 29 September 2015

সেকেলে

সেকেলে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

তরে তরে রূপান্তরে যতকিছু আজ,
সেদিনের রাজশাসন আজ উপরাজ।
লাউ-খোলে তার বেঁধে দিয়েছিল সুর,
বাতাসে ভাসে আজও সুরের অঙ্কুর।
পথের ধারে বসে কারো  বারান্দায়,
প্রবীনের কেচ্ছা শুনা শৈশব-বেলায়।
রাখাল ছেলে যদি মাঠান গান গাইত,
সাগরের কোল ছাড়ি জলপরি নাচত।
খুজে পেতাম যদি হারানো সুরের বাঁশি,
ফুল পরি নাচত আবার ঐহিকে আসি।
মেঠো পথ ধরে গেয়েছিল পথিক গান,
সেই কন্ঠসুরের আজ নাই সেই তান।
দেখেছি এই পথ দিয়ে গরুর গাড়িতে,
শ্বশুর বাড়ি যেতে বউ নতুন শাড়িতে।
সেইদিন আর এইদিন বহুদূরের পথ,
দ্বিষত্ পূর্ণতে মানুষ অধুনা হয় দ্বিমত।

Thursday, 24 September 2015

নীল আকাশের দেশে

নীল আকাশের দেশে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রবনা মা কোলে তোমার, নইতো ছোট আর,
যেথাই খুশী যাব সেথায়, বড় হয়েছি এবার
ইচ্ছা করে হারিয়ে যেতে, নীল আকাশের দেশে,
চাঁদের আলোয় খেলব আমি, তারার সাথে মিশে।
খেলব আমি ছুটোছুটি, ওই তারাদের সাথে,
আলো ছড়ানো চাঁদের সাথে, বলব কথা রাতে।
তোমার সাথে খেলবো আমি, লুকোচুরি খেলা,
মিটিমিটি দেখব আমি, খুজবে রাতের বেলা।
ডেকে ডেকে বলব মাগো, হেথায় আছি আমি।
দুহাত বাড়িয়ে ডাকবে তখন, এসো সোনা মণি।
বলব তখন তোমায় আমি, আসব কাছে তবে,
ওদের সাথে খেলার শেষে, যখন সকাল হবে।
মিস্টি হাসি দিচ্ছে দেখো, আমার দিকে চেয়ে।
কেমন করে বুঝলো ওরা, আমি ছোট্টো মেয়ে?

Monday, 21 September 2015

নিষ্প্রাণ কবিতা

নিষ্প্রাণ কবিতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রাতের কালে নিরত থাকি,
কলম নিয়ে হাতে।
লিখতে থাকি কবিতা আমি,
পারিনা প্রাণ দিতে।

কবিতা মোর জীবন সাথী,
কবিতা মোর প্রাণ।
আবৃত্তিকার এসো একবার,
গাও কবিতার গান।

বাঁচবে তবে প্রাণ কবিতার,
বলবে কথা তবেই।
তোমার সুরে কইবে কথা,
কবিতার জয় হবেই।

পাঠক করলে কবিতা পাঠ,
তবেই লিখা সফল।
নইলে কবিতা অজ্ঞান রবে,
লিখাই হবে বিফল।

খেলার পুতুল গড়ি হাতে,
বলেনা কেন কথা।
নির্জীব হয়ে রইলো পড়ে,
খাটুনি সাধন বৃথা।


Sunday, 20 September 2015

তোরে করিনা বিশ্বাস

তোরে করিনা বিশ্বাস

আব্দুল মান্নান মল্লিক

যা, যা যা-না, খোলা আকাশ মুক্ত বাতাস,
করেছি কি, তোরে একবারও মানা?
নীল আকাশে মেঘেদের সাথে যা-না!
তবুও করিবনা মানা!
নাইবা হোক আমার তারে বাঁধা লোহার খাঁচা,
পারিনা হইতো শীতল বাতাসে রাখিতে, এইতো অভিমান? যা-না! করেছি কি মানা?
নাইকো আমার ভরা পুস্করিনি, অথৈ জলের সাগর। আছে শুধু মোর, খাঁচার এক কোণে বিরাজে ছোট্ট জলাভুমি, তবুও পাইনি খুজে তল। যদি না হয় শ্রানের জল, যা-না! করেছি কি মানা? যেথায় অথৈ জল।
সদা ভাবিস মনে, ফন্দি আঁটিস সংগোপনে,
বিরাজে বসিয়া অছিলার সন্ধানে।
কে করিবে বিশ্বাস তোরে? না আমিও। করে বিশ্বাস তোরে, কোথায় হারিয়েছে তারা।
ভষ্মিভূত করেছিস তারে। কাউকে তলিয়ে
ভূতলে, কাউকে ভাসিয়ে গঙ্গা-জলে।
চলে গেছিস আপন কুলায়ে।
যা, যা, যা-না তেমনি করে।

লিখবনা কবিতা

লিখবনা কবিতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

লিখবনা কবিতা আজ ভাবি নিজ মনে,
বসে আছি নিরবে বারান্দায় বৃষ্টির দিনে।
পুকুরের জল ছাপায় গড়ে রাস্তা দিয়ে,
মাছ ধরে বাড়ি ফিরে জেলেনীর মেয়ে।
হাঁসগুলো খেলে বেড়াই উঠানের জলে,
বাধা পড়ে বসে আছি বৃষ্টির বেড়াজালে।
দুই শালিক ভিজে বসে ছাদের কার্নিশে,
চাতকেরা খেলে বেড়াই অদূর আকাসে।
মোড়লবাড়ির বকাঝকা ডাকে চিৎকারে,
বৃষ্টিয় ভিজে গরুবাছুর আছিস কে ওরে।
বৃষ্টি ভিজা দিনটাই লিখে যেতাম কবিতা,
কবিতার খাতায় রাখতাম বৃষ্টির ছবিটা।
পাঠকেরা পড়েনা কেউ কবিতা আমার,
লিখবনা কবিতা তাই দিন যায় বেকার।


Saturday, 19 September 2015

প্রেমের বাজার

প্রেমের বাজার

আব্দুল মান্নান মল্লিক

চোখাচোখি পথে দুজন তরূণ তরূণী,
কথা দিলো হব দুজন জীবন সঙ্গিনী।
সহসা ভালোবাসা যেমনি ফোস্কা গেরো,
আজ আছে কাল নাই ভেঙে হবে টুকরো।
একদিনের ভালোবাসা যদি সত্য হয়,
তবে কেন গুরুজন বিচ্ছিন্নে দূরে রয়?
বহুদিন ধরে যারা রেখেছিলো বুকে,
গুরুজনের সম্পর্ক যায় একটি পলকে।
চিরদিনের ভালোবাসা যদি মিথ্যা হয়,
সহসা ভালোবাসা কেমনে সত্য হয়?
এলোমেলো বাতাস যেমন তরূণ তরূণী,
হতে পারে কখনো কি বিশ্বাসের সরণী?
ভজিবারে গুরুজন সময় নাই হাতে,
প্রেমিকার কথা ভাবে দিবসে ও রাতে।
ভালোবাসা ভালোবাসা শুনি বারবার,
প্রেমিকের প্রেমিকা ছাড়া আছে কে আর?
প্রেমিকার প্রেমে পড়ে এমনও ছেলে,
গুরুজনের ভালোবাসা দিয়ে রসাতলে।
আত্মীয় পরিজনদের ঠেলে দিয়ে দূরে,
প্রেমিকার সাথে প্রেমিক অজ্ঞাতে ঘুরে।
ভালোবাসার জন শুধু প্রেমিক প্রেমিকা,
তরূণ তরূণী ভাবে আরও ভাবে বোকা।
ভালোবাসা ভালো কথা আছে সবার জানা,
তাইবলে গুরুজনকে ভালোবাসতে মানা?
ভালোবাসার এক কথা বলে সবাই জানে,
পরিজন সম্পর্ক হারায় প্রেমের সন্ধানে।
সস্তা প্রেমের বাজার বসে শহরে ফুটপাতে,
কেনা-বেচা হয় প্রেম গাঁয়ের আড়ে-ওতে।
হারিয়ে যায় গুরু-ভক্তি প্রেমের দাপটে,
সস্তা প্রেমের লীলা-খেলা রাস্তায় ও ঘাটে।





Thursday, 17 September 2015

কে বলবে ঠিকানা

কে বলবে ঠিকানা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ঝুমুর ঝুমুর নূপুর বাজে রাত দুপুরের পরে,
জানালা খুলে তাকিয়ে দেখি পদ্মা পুকুর ধারে।
মেঘে ঢাকা চাঁদের আলো দেখছি কারা এরা,
ছমক ছমক নাচের আসর চার রমণী ওরা।
ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ি গেলাম চুপিসারে,
নাচন দেখতে বসে থাকি কদম গাছের আড়ে।
ভিন্ন রূপের রমণী বুঝি দেখছি প্রথম আজ,
রূপের ঝলক পড়ছে গড়ে নতুন নতুন সাজ।
পিঠের উওর ডানা সবার দেখতে চমৎকার,
ওদের সাথে হৃদয় মিশে ফিরেনা কাছে আর।
ডানার ঝাপটায় মারছে ছিটা গায়ে মাখে জল,
আস্থা হারাই নিজে তখন হয়েছি বুঝি পাগল।
হার মেনেছে বিশ্ব সুন্দরী বিশ্বে যতো আছে,
অজ্ঞাত এই চিরকুমারী চার রমণীর কাছে।
নাচের শেষে নামতে দেখি পদ্ম পুকুর ঘাটে,
স্নান করতে খেলছে ওরা দিয়ে জলের ছিঁটে।
হাসের মতো ভাসছে ওরা জলকে বুকে ছুঁয়ে,
ফিসফিসিয়ে বলছে কেমন মিস্টি হাসি দিয়ে।
ভাসছে জলে খেলছে খেলা পদ্মফুলের সাথে,
রূপের ঝলক পদ্মজলে কাক জ্যোৎস্না রাতে।
একে একে গেলো উড়ে আকাশ আলো করে,
কে বলবে ঠিকানা ওদের ভাবি গাছের আড়ে।

Tuesday, 15 September 2015

ঘুম ভাঙা রাত

ঘুম ভাঙা রাত

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভাবি শুধু তোমার কথা সারা রাতি জাগি,
তোমার মুখের ছবিখানি সহস্র তারায় আঁকি।
কখনো বা খাতার পাতাই নাম লিখি বারবার,
এই জগতে তুমি ছাড়া কেইবা আছে আমার।
উঠে বসি ঘুমের ঘোরে নিরব রাতে শুনি,
বাজছে যেন পায়ের নূপুর রিনিঝিনি ধ্বনি।
চলার পথে দেখি তোমায় শাড়ির আঁচল দুলে,
দেখতে আরও সুন্দর লাগে এলোমেলো চুলে।
বিদ্রূপ করে হাসছে চাঁদ আমার দিকে চেয়ে,
বলে যেন চাঁদের আলোয় কেমন আছ ওহে!
চাঁদের বিদ্রূপ হারিয়ে যাবে সকাল যখন হবে,
হাসবে নাকি সকাল হলে পাড়ার লোকে সবে?
আশঙ্কা করে লিখলাম চিঠি হয়না যেন বৃথা,
পড়বে যখন চিঠিখানি ভেবো আমার কথা!
তোমার কথা ভাবি যখন গড়ে পড়ে জল,
অনেক কষ্টে লিখি চিঠি আঁখিতে ছলছল।
ভালোবাসার চিঠিখানি আজকে দিলাম নতুন,
উত্তর দিয়ে নিভিয়ে দিও চিত্ত বনের আগুন।




Friday, 11 September 2015

বর্ণচোরা

বর্ণচোরা (প্রাপ্তি প্রকাশিত)

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মানুষ যত জনে জনে,
কে কাহারে রাখে চিনে।
লোহিত রঙে মৃত্যু জোহর,
থাবাই তাদের পশুর নখর।
ঘুরছে দিনে মুখোশ পরে,
ধোঁয়া তুলসি আকার ধরে।
নকশা গতর মানুষ আদল,
চিনতে নারি আসল নকল।
রাত আঁধারে নর খাদক,
দিনে তারা সমাজ জনক।
চিনছে যারা বাঁচাতে প্রাণ,
ডাকছে সবাই বাবু সেলাম।
দিন ফুরালে আঁধার রাতে,
ঘুরে বেড়াই ছুরি হাতে।
করছে ডাকাত মার দাঙ্গা,
দিনের ইঁদুর রাতে চাঙ্গা।
পথে নামলে মুখোশ পরা,
আপথে যায় মানুষ যারা।
গাঁজার পরে মদের আসর,
আকড়া বসায় সাঁঝের পর।
যেমন খুশি করছে লঙ্ঘণ,
তাইতো সমাজ অধঃপতন।
মরছে সমাজ তাদের হাতে,
ক্ষতি কি আর আমার তাতে?
চিনতে তাদের মুখোশ খুলি,
মরবো নাকি খেয়ে গুলি?
আক্ষেপ রাখি বুকে বেঁধে,
হয়না সাহস একার সাধ্যে।

Tuesday, 18 August 2015

বাস্তব সত্যি


বাস্তব সত্যি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভালবাসার নেশায় ঘুরি অবুঝের এই মনে,
দিন চলেনা বাবা মায়ের আমি চলি মান্যে।
পকেট আমার খেলার মাঠ তবু ভালবাসি,
চিরদিনের মিথ্যা কথায় ভুলে যায় প্রেয়সী।
ভাবীকালের চিন্তা ভাবনা দূরে যায় সরে,
প্রেম স্রোতে সাঁতার দিই ভাবী কথা পরে।
ভালবাসার ঘর বেঁধেছি সুখ শান্তির আশায়,
দিনরাত্রি ঝগড়াঝাঁটি পড়শী লোকে থামাই।
আয়ের সন্ধান করব আগে প্রেম করব তবে,
মিথ্যা কথা বলছে সবাই অর্থ কি আর হবে?
মিঠাই রসে পিঁপড়া নামে উঠতে নড়েচড়ে,
ভাবেনি সে আগে কখনো উঠবে কেমন করে।
আদি কথা শুনে আসি পয়সাতে প্রেম নয়,
টিকতে পারে ভালবাসা তাই কখনো হয়?
প্রেম জ্বলনে জ্বলে মরি সবারে করি বারণ,
পয়সা ছাড়া প্রেম জীবনে পথেই হবে মরণ।

Monday, 17 August 2015

পারের ঘাটে অনুতাপী


পারের ঘাটে অনুতাপী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ন্যায় অন্যায় করি যদি সমীপে সবার,
নই আমি একেবারে অযোগ্য ক্ষমার।
কুড়োকুড়ি মারামারি তোমাদের সনে,
করেছি অবুঝে সব রেখোনা আর মনে।
শৈশবের কালে হয়তো করেছি অবুঝে,
ক্ষমা করে দিও ভুল প্রস্থানের কালে।
পাই যেন ঠাঁই আমি সবার আশির্বাদে,
ফুলের গন্ধ ভরা মুক্ত বাতাসের সাথে।
টিপটিপ হাসি দিব নীল অঙ্গনের গায়ে,
ইশারায় দিব ডাক প্রীতির তারা হয়ে।
আসি যদি ফিরে পূনঃ তোমাদের মাঝে,
চিনে নিও রেখো মোরে হৃদয়ের ভাঁজে।
সময় বহিয়ে যায় কুলে তরী ভিড়ে,
খুশি মনে দাও বিদায় যাব পরপারে।
কাছে এস সবারে দিই প্রীতির চুম্বন,
ভুলিবেনা দাও একবার আমারে বচন।
ধর্মকথা দিয়ে কানে মুখে দিও জল,
কুচানলের আত্মা যাবে হইয়া শীতল।

Wednesday, 12 August 2015

শেষ দেখা

শেষ দেখা 


আব্দুল মান্নান মল্লিক


পথচলা বন্ধু একটাই মোর সাথে,

পথের শেষপ্রান্তে যষ্টি মোর হাতে।

ব্যর্থ সংসার নিয়ে কি আর হবে!

ঘুরে বেড়াই পথে পথে জীবনের প্রাক্কালে।

চলতে চলতে পথ, নিয়তির একি খেলা,

অদূরে যায় দেখা কুম্ভের মেলা,

চক্ষু ফিরাতে দেখি, পথের এক ধারে,

ছিন্ন শুভ্র ভূষণে, বৃদ্ধা এক নারী পড়ে।

মনের কাছে প্রশ্ন করি,

কেগো তুমি, বৃদ্ধা নারী?

হইতো অপেক্ষায় পারের ঘাটে,

করিয়া অতিক্রম পথ, পৌঁছে অধিক ষাটে।

নিস্তেজ হয়ে সর্বাঙ্গ, বাকশক্তি হারিয়ে,

অগণিত জনস্রোত, আসা যাওয়ার ভীড়ে।

দেখিয়া না দেখার ভান করে,

ডিঙিয়ে যায় যে যার কাজে ও ঘরে।

পারিলামনা যেতে সবার সাথে,

ধীরপায়ে যায় বৃদ্ধার কাছে।

শীর্ণ দেহখানি, আচ্ছাদিত সর্বাঙ্গ,

নিয়তির টানে প্রস্থানোদ্যত।

দেখিবারে নাই কেহ, মুখে দিতে জল,

পুণ্যস্থান? না, হেথা হেনস্থা দুর্বল।

ধৌত করে হস্তপদ গড়িছে জল মাটি বেয়ে,

দিতে পারেনা জীবন কেউ, ফোটা জল দিয়ে।

ভিজাইয়া মাটিতে ধুতির আঁচল,

নিঙড়ায়ে মুখে দিতে জল!

একি! চেনা সেই মুখ! ছন্দা আমার!

তোলো মুখ, কথা বল একবার!

নাই ছন্দা, আর নাই, ঐ আকাশে মিলাই!

ছিলো আজও স্মৃতি মোর, তোমার সিঁথাই।

চেয়েছিল বলিতে কিছু সময় বহিয়া যাই,

দেখা হল, হলনা কথা, যাবার বেলায়!

দুই পলক দেখেছিল মোরে,

পড়েছিল জল অশ্রু গড়ে।

আটত্রিশ বছর অগোচরে করেছ বহন,

মুছে দাওনি স্মৃতি মোর, ধন্য নারী জীবন।






সব্জির হাটে সস্তা মানুষ


সব্জির হাটে সস্তা মানুষ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

প্রাতের পানাহারের পরে,
বেরিয়েছি সব্জির বাজারে।
এইযে রামুদা কোথায় চললে?
এইতো ভাই, আশি টাকা ধরিয়ে দিয়ে হাতে গিন্নী বলে,
তালেগোলে সব্জি এনো, আজকের দিনটা চলে।
সামনে মানুষের ভীড় পথের ধারে,
রামুদা ভীড় ঠেলে ঢুকে যায় ভিতরে।
গলা বাড়াইয়া দেখি, একি!
কিল ঘুষি আর লাথি।
পড়ে পড়ে খাচ্ছে মার জানিনা কে ওই ব্যাক্তি?
হঠাৎ দেখি, রামুদা লাগায় দুই ঘুষি এক লাথি।
বাহিরে জিগাইলাম রামুদারে,
পূর্ণ ঘটনা শুনিবারে।
রামুদা বলে জবাবে,
জানিনা, কেন মারিছে সবে।
দেখাদেখি দুই ঘুষি এক লাথি,
দিয়ে যায় নইলে হবে দুর্নীতি।

Tuesday, 11 August 2015

বিভেদের মাঝে

বিভেদের মাঝে 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মানুষে মানুষে কর বিভেদ মোচন।
করিতে সক্ষম যদি পশুরে পালন
পশুদের রাখ কত আদর যত্ন করে
নিজ জাতি মানব কেন থাকে পড়ে দূরে?
ধরাধামে মানুষ সেতো জাতি আপনার,
ভালবেসে নাওনি কাছে পশুরও সমান।
পশুপক্ষি মানব জাতি ফারাকে অনেক,
গেয়ে যায় গান মুখে মানুষে মানুষে এক।
তবু কেন সমাজে এত ভেদাভেদ,
ছোঁয়াছুঁয়ি কুসংস্কার মেটেনি প্রভেদ।
আকাশের জল মিশে পুকুরের জলে
হবে কি ভাগাভাগি গুরুর বাহুবলে?
সাদাসিধে মানুষগুলো করেছে বিশ্বাস,
সুযোগে করেছ তাদের একতার বিনাশ।
ভাঙে যারা সভ্য সমাজ যায়না তাদের চেনা,
বুলিয়ে হাত সবার গায়ে দিয়ে যায় সান্তনা।
ধর্মের ভয় দেখায় করিতে উপার্জন,
ভাঙনের মূলে আছে এরাই কারণ।
মুছে ফেল গ্লানি ঘুচাও মনের আঁধার,
ভুলে যাও কুসংস্কার কর নতুন সংস্কার।

Saturday, 8 August 2015

চাওয়া

চাওয়া

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিবেক দেখায় পথের আলো দ্বন্দ্ব বাধে মনে,
কেউবা করে চোর ডাকাতি কেউবা মরে ধনে।
ধন তৃষ্ণাই হৃদয় জ্বলে ঘুম আসেনা রাতে,
মানিক চুরির আশায় থাক মরবে সর্পাঘাতে।
সাগর জলে ঝাঁপিয়ে পড় মোতি পাবার আশ,
লোভের সীমা ছাড়াও যখন হয়'যে প্রাণনাশ।
জ্যোতিই গড়া জন জীবন লাগে যদি কাজে,
মণি রতন খুজবে তোমায় ধরা দিবে নিজে।
সুখের বাগান অন্তর মাঝে ভাবছো কেন দূরে,
পেয়েছ কি সুখের সন্ধান সারাটা জগৎ ঘুরে?
বৃথাই বসে ভাবছ মিছে কোথায় সুখী জীবন,
খুজলে পাবে দিব্য দৃষ্টিই গুপ্ত মনের কোণ।
সুখের আশায় সময় গেল জীবন গেল ক্ষয়, 
দিনের শেষে থাকবে নিজের কর্ম আপন হয়।
অন্তর জ্যোতি জ্বলবে যখন হবে সরল মন,
দীনের মাঝে বিলিয়ে দিবে আপন রত্নধন।

Wednesday, 5 August 2015

√ দাও আমার অধিকার

দাও আমার অধিকার

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কতটুকু এনেছিলে. ছিল যত অধিক তাহার?
তবে কেন বঞ্চিত আমার অধিকার?
ভাগ করে দাও সবার সমান সমান,
সহে গেছে দুর্বল তোমাদের অপমান।
দিনে দিনে করেছ তোমরা গরীবের লুট,
ছিনিয়ে খেয়েছ যার সম্মুখে তুলেছ ঢেকুর।
তোমাদের সুখ আর গরীবের হাহাকার
সহে গেছে নিরবে তোমাদের অত্যাচার।
গ্রীবা উঁচায়ে দেখিয়ে দম্ভ কর আস্ফালন,
নির্মমতায় করেছ ভোগ কাঙালের ধন।
ধরাধামে প্রবেশি দেখি আমার সব ফাঁকা,
দিবারাত্রি ঘূর্ণন গতি একদিকের চাকা।
ধনকুবের ধনীর দুলাল হও হুশিয়ার,
নইলে অবাধে ধরবো তীক্ষ্ণ তলোয়ার।
অধুনা ঘুরিবে চাকা চতুর্দিকে সমান,
জাগিয়া উঠিবে এবার দুর্বলের মান।


Tuesday, 4 August 2015

স্মৃতির আড়ালে তুমি


স্বরচিত কবিতা

স্মৃতির আড়ালে তুমি

গেয়ে যায় গান আমি তোমার কবিতায়,
খাতা কলম ছেড়ে দিয়ে রয়েছ কোথায়।
তুমি কবি আমি গায়ক ছিলাম দোহে জুটি,
ফেলে গেলে একা মোরে তুমি নিলে ছুটি।
বিলিয়ে দিই গান আমি তোমার কবিতার,
ভেসে যাবে বাতাসে সুর কম্পনে বারবার।
এপার অপারে মোরা দুজনের ব্যবধানে,
বাতাসে বহিবে সুর বলবে তোমার কানে।
শুরুতে সমাপ্তি তোমার কাব্যগীতি গাথা,
বাকিটা কি থেকে যাবে মানব জীবন কথা?
করজোড়ে মাগি আমি কাছেতে তোমার,
সুপ্তি কালে দিও তোমার বাকি কবিতার।
আড়াল হতে দেখ মোরে করিও আশির্বাদ,
নির্মাণ হবে নতুন ভূবন সঙ্গীতের আস্বাদ।
মুছিবে না কোনোদিন আর স্মৃতির ভূবন,
বাতাসে ভাসবে তোমার কবিতার গুঞ্জন।
অশ্রুজলে ভাসবো তবু গাইবো সারাক্ষণ!
কবিতার স্মৃতি তোমার প্রীতির সম্ভাষণ!

Sunday, 2 August 2015

বন্যা বনাম বৃষ্টি ( ১৯৭৮ )

বন্যা বনাম বৃষ্টি ( ১৯৭৮ ) 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হাঁক পাড়ে দৌড় দৌড় ঘরবাড়ি ছেড়ে,
বাঁধভাঙা গাঙ-জল ওই আসছে তেড়ে।
ক্ষণিক পরে উঠান ভরে পথের উপর জল,
কেউবা গুচ্ছে লোটা কম্বল যা-কিছু সম্বল। 
কানু বাবুর পুকুর যেই ছিলো পথের ধারে,
আচম্বিতে এক পলকে সেটাও গেল ভরে। 
যতই বাড়ে ভয় আতঙ্ক অধিক বাড়ে জল,
কেউ কাঁদে কেউ বাঁধে পুঁটলি বৃষ্টি অনর্গল। 
ছুটোছুটি দৌড়াদৌড়ি কেউবা কোমরজলে,
কেউবা সাঁতরে জলে ভাসে ভিটামাটি ফেলে। 
ইস্কুল ঘরের ছাদে ভিজে কেউবা বৃক্ষ শাখে,
প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত নিজের কে কাহারে দেখে।
বন্যার জলে বৃষ্টির জলে সর্বনাশার খেলা,
ঐ দেখা যায় জলে ভাসে নরু ভায়ের চালা।
গোঁজের গরু দড়ি ছিঁড়ে ছুটে যে যার মতো, 
বন্যাজলে বাঁশ বাগানে লাশ বেঁধেছে  কতো।        
গাঙের জলে কোমরজলে মানুষ অনাহারে, 
কারো বোঁচকা শীর্ষদেশে ভাবতে জল বাড়ে।
আছড়ে পড়ে গাঙের জল মাথায় জলধর, 
জলস্রোতে উপড়ে পড়ে শ্যামলালের ঘর।
বট গাছটি ছিল যেথায় বাঁধের কোল ঘেঁষে, 
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হল জলের তলদেশে। 
মরণ তথ্য মাথার পরে কাক পাখিদের ডাক,
জুটলো যত বিপদ্দশায় গাঙ চিলেদের ঝাঁক।
নাইরে বাড়ি নাইরে ঘর নাইরে পরিত্রাণ, 
জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে বড় বড় দালান।
গোগোঁয়ানি শব্দ গম্ভীর বন্যার ঘোলা জলে,
ভেসে গেল দৃশ্য মাঝে ছেদির ছোট ছেলে।
বুড়ো বুড়ি কাঠের গুঁড়িয় জলে ভেসে যায়, 
বউ বাচ্চা নিয়ে বলাই কলা গাছের ভেলায়।
সাঁতরে কারো প্রাণ বাঁচুয়া কারো প্রাণ যায়,
মরা মানুষ ভাসে জলে শকুনে ঠুকরে খায়।
জলসোতে শব শৈশব জলে ভাসে অদূরে,
ঘূর্ণিপাকে মাথার উপর ঝাঁকে শকুন উড়ে।
মাতৃস্নেহ করুণা অসীম ঘটনা বন্যা কালে, 
মৃৎপাত্রে ভাসিয়ে ছেলে নিজে ডুবে জলে।


Saturday, 25 July 2015

তুমি নেই আজ

তুমি নেই আজ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হরষিত মন ফিরে নব যৌবন,
মৃদু বাতাসের ঢেউয়ের দোলায় হৃদয় স্পন্দন।
ইশারায় দেয় ডাক বারবার পিছনে
ফেলে আসা তারুণ্যে।
আঁক দিয়ে বাতাসে, যেন এক অজানা পাখি
থাকতো যদি সাথে, হারানো দিনের সাথী!
কৃষ্ণচুড়ার রং ঝরে যায় বাতাসের দোলে,
বিহগ বিহগী জোড়া ডালে, আমি গাছতলে।
ইচ্ছা করে কখনো বিহগ বিহগীর মত,
তোমার পরশে পুনঃ নিভা তারা জ্বলতো।
সারস সারসী মাঠের প্রান্তরে,
দুটি দুটি গুটি পায়ে, মরা গাঙের তীরে।
দূর হতে পিছনে ডাক দিয়ে কে বলে
এইতো তোমার আমি,
দিওনা সাঁতার আর নয়নের জলে!
চেনা সেই কণ্ঠ আবার বিগতের পরে
স্বীয় জল গড়ে পড়ে, চেনা স্বর কর্ণগোচরে!
কোন্ প্রান্তে বিরহী তুমি রয়েছ কোথা,
বারবার কাঁদাও মোরে ইশারায় বৃথা!
আমি কি উন্মাদ? জাগ্রত না ভাবনার পরিহাস?
হৃদয়ের বহির্গমনে শুনি নিয়তি করিছে উপহাস!