এসো এসো দেবী মাতা
আব্দুল মান্নান মল্লিক
নতুন নতুন সাজসজ্জায় মোণ্ডা-মিঠাই ভাঁড়ে,
পরিজনদের আনা-গোনা মা আসছে ঘরে।
সাদা শাড়ী লাল পেড়েতে করবে দেবী বরণ,
বধূরা জটলায় বরণডালায় নানান উপকরণ।
রঙবেরঙে গাঁয়ের মেয়ে করবে দেবী বন্দনা,
সোনার সাজে আসবে এবার দুর্গা দেবী মা।
বায়না ধরতে ঢাকির ভিড় মঠের প্রাঙ্গণে,
ধুনুচি নাচে নাচবে সবে পড়ার লোকজনে।
আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষ ঐ যে আসে পুনর,
সমারোহ আর উল্লাসিত বাংলার প্রতি ঘর।
বোমবাজি আর ঢাকের শব্দ মা আসবে ঘরে,
রণসজ্জায় কেশরী পৃষ্ঠে নগ্ন হাতিয়ার ধরে।
মুড়ি মুড়কি হরেক নাড়ু ঘরে ফলের ডালি,
উলুধ্বনি ডাকছে সবে বাংলার অলি-গলি।
দগ্ধ ঘি তার গন্ধ ছড়াই বাতাস হল মাতাল,
ধুপের ধোঁয়া সান্ধ্য-শাঁখে সারা বাংলা উত্তাল।
ব্যস্ত মানুষ কেনাকাটায় হাট বাজারের ভীড়ে,
গরীব দুঃখীরা শূন্য হাতে কাঁদছে অশ্রুনীরে।
কেনাকাটা হয়নি যাদের ঘরের কোণে চুপ,
কেমন করে দেখবে তারা দেবী মায়ের রূপ?
মদের নেশায় পয়সা উড়ে কুবের আত্মহারা,
ঘরের কোণে গরীব কাঁদে বইছে অশ্রুধারা।
নিজের মতো ভাবতে পার তবেই সবাই সুখী,
সমাজের এই ভালোবাসায় মা যে হবে খুশি।
স্বর্গভুমিই বসে মাগো করছো কি আজ তুমি?
অসুরেরা করছে উৎপাত জ্বালিয়ে মর্ত্যভুমি।
সিঁদুর থালায় গগন-ভেদি তোমার অপেক্ষায়,
পুবের রবি ছড়ায় আলো রঞ্জিত ভূবনটায়।
পদ্মপুষ্প বিল্বপত্র আড়ম্বর প্রদীপ শিখায়,
শত আটেক পূর্ণ প্রতি তোমার অপেক্ষায়।
দৃষ্টি দিয়ে গলাও পাথর পুষ্প পাঁপড়িই তুমি!
বিনাশ কর দানব কুলের বাঁচাও মর্তভূমি।
কখনো শীতল কখনো অগ্নি কখনো সংযমী,
কখনো স্বর্গ কখনো মর্ত্য কখনো অন্তর্যামী।
কখনো তুমি উদারতা কখনো অসুর মর্দিনী,
দুঃসাহসী নারী তুমি সর্ব শক্তির অধিকারিনী।
রূপ হইতে রূপান্তরে কখনো এসেছ ঊমা,
বরণ করতে ডাকবো এবার দুর্গা দেবী মা।
একশত আটে অবতরনে দুর্গা হয়ে যখন,
দুর্গতি নাশ করেছ তুমি করে অসুর নিধন।
এযুগ ওযুগ যুগ-যুগান্তর তুমিই এক নারী,
নারীর আদর্শ ধন্য মা-গো রূপের বলিহারি।