Friday, 29 April 2016

হারিয়ে যাওয়া দিনটি

হারিয়ে যাওয়া দিনটি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিলীন হয়নি আজও
পূরানো দিনের স্মৃতি।
ভুলিতে পারিনি আজও
তোমার সেই মিষ্টি মধুর হাসি।
সুখের গহিন বনে সুখের নীড়ে
প্রাচীনকে আছ ভুলে।
তবু থাকি পথো চেয়ে তোমার তরে
হৃদয় দ্বার খুলে।
ডিঙিয়ে আসা কত দিন, কত রাত বছর,
ছিলাম দুজন অবুঝো কিশোর।
আজো মনে হয় ফিরে আসুক সেদিন আবার।
পুতুল ঘরের খেলার সাথি,
জ্বালিয়ে ছিলাম জোনাকি বাতি,
হৃদয় কোণের ঝাড়বাতি আজ ভেঙে চুরমার।।
মনে পড়ে ছিল কথা,
কাব্য হয়ে হৃদয়ে গাঁথা,
সুরেলাতে বাজে সুর ফিরে মন উতলা।
তুমি ছাড়া একাকী,
সারারাত জেগে থাকি,
চেয়ে দেখি আমি শুধু নির্জন নিরালা।।

Thursday, 28 April 2016

ভিজতে চায় অশ্রুজলে

ভিজতে চাই অশ্রুজলে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অপেক্ষায় পথ চেয়ে তোমারই জন্যে,
বকপাখায় লুকায় যৌবন গোধূলি গগনে।
চোখেচোখে কথা বল বদন বাক্যহীন,
ভেবে ভেবে আনমনে কাটে সব দিন।
হয়তো বা বুক ফেটে কাঁদিবে চিৎকারে,
উল্লাসিত হবো তোমার কান্নাকে ঘিরে।
সিক্ত কর দেহ মোর কান্নার জলে,
পুড়িয়ে করনা ছাই ক্রোধের অনলে।
ছেয়ে দাও সর্বাঙ্গ মোর ছায়াতে ঘিরে,
কান্নায় খুশি হবো ভিজবো অশ্রুনীরে।
সহিতে পারিনা ওগো পুড়ে ছাই মন,
ভিজিয়ে দাও কর শীতল গর্জিয়া গগন।



সৃজক ও সৃজন

সৃজক ও সৃজন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সগর্বে সৃজিলা মানুষ দিয়েছ সম্মান,
তবে কেন পাঠাইলে অসুর শয়তান।
ক্ষমতাবলে বলবান তোমারই প্রদান ,
মানবকুল করে নশ্বর দানব শয়তান।
এত শক্তি দিয়ে কেন করিলে সৃজন,
বিচরণ করে বেড়ায় দেহ মস্তক চরণ।
বাক্যজালে ধরা পড়ে বিধির বিধান,
শপথনামা পূরণ করে দিয়ে আখ্যান।
গর্ব করে বলেছিলে যেজন তোমার,
ভ্রষ্টের দিশারি হবে সাধ্য আছে কার।
যেই আমি হতে চাই সম্মুখে তোমার,
ভুল পথ দেখিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দ্বার।
কলুষিত হয় তোমার শোখের বাগান,
ভুলপথে গেয়ে যায় পাপের গুণগান।
কেমন করে হব তবে পাপের উদ্ধার,
গ্রাস করেছে মোরে পাপাত্মা পাপাচার।

Wednesday, 27 April 2016

সংস্কার

সংস্কার (b.k)

আব্দুল মান্নান মল্লিক

খুলে দাও বদ্ধ দ্বার ভেঙে দাও প্রাচীর শত্রুতার,
একমত একপথ একজাতি হোক সমান সবার।
এইতো মানুষ সেদিন ছিল তুচ্ছ ভুলের পথিক,
চড়ুইভাতির রান্নাঘরে আগুন জ্বলেছে চতুর্দিক।
বিভেদের সেই খেলাঘরে মিথ্যায় করেছ বাস,
তুচ্ছ খেলায় হয়েছে কতো প্রাণীর প্রাণনাশ।
ভাবিতে ভাবিতে হয়েছে আজ জ্ঞানের সঞ্চার,
বিগতকে মুছে মানুষ করেছে আজ নব সংস্কার।
জ্বলন্ত সেই অগ্নিপথ ভুলে গেছে মানুষ আজ,
অপকর্ম করেনা কেউ আগের মতো ভুল কাজ।
হবে কি আর উড়িয়ে নিশান হয় যদি প্রাণনাশ,
উড়িওনা বিভেদ নিশান মানুষের মানুষই বিশ্বাস।
মন্দির বল মসজিদ বল গির্জাও অন্তর গভীরে,
বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে বারবার গেছো হেরে।

Saturday, 23 April 2016

√ দুই মাতালের যুক্তি

দুই মাতালের যুক্তি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দুই মাতালে যুক্তি করে, বলে অনেক কথা,
জলে যদি আগুন জ্বলে, মাছ থাকবে কোথা?
হুদন বলে শুনরে ভুদন, বলব একটি কথা?
গাছের ডালে বাঁধবে বাসা, কিসের মাথা ব্যথা?
তাই কখনো হয় রে হুদন, তুইযে নিরেট চাষা,
মাছ কি হবে ঘোড়া ভেড়া, বাঁধবে গাছে বাসা?
ভাবিনি তো ভুদন ভায়া, বুদ্ধি অনেক আছে,
ধরতাম তবে জলে পাখি, মাছ ধরতাম গাছে।
বলতো দেখি ভুদন ভায়া, এই কথাটির মানে,
আকাশতলে বাতি জ্বলে, ঝুলছে কিসের টানে?
মদের নেশায় ভুদন বলে, মিটায় যত ক্ষোভ,
দেশের কথা তুলবো ধরে, বলবো খুলে সব।
বলতো দেখি উলটা সিধা, ধরণিটা একি,
ঘুরতে থাকে সূর্য বুঝি, কারো জগৎ নাকি?
দেশসুদ্ধ মাতাল সবাই, কে কত আর জানে,
তত্ত্বজ্ঞানী আমরা দুজন, তাইতো সবাই মানে।
হুদন বলে বলছে সবে, আমরা নেশায় ঘোর,
পণ করেছে গাঁয়ের লোকে, ছাড়াবে বাড়িঘর।
ভুদন বলে আস্ত বোকা, মারবো টেনে চোড়,
হুদন বলে মাথা বাদে, যা খুশি তাই কর।


Thursday, 21 April 2016

√ সরসী উর্বশী

সরসী উর্বশী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সরসো কিনারে চরে সারসো সারসী,
মাঝজলে খেলা করে হংস আর হংসী।
তুচ্ছ পতত্রী হিমেল কমলো পত্রে আলিঙ্গনে লুটোপুটি।
অদূর আকাশে গাঙচিল উড়ে ঝাঁকে,
করে ছুটোছুটি।।
পুষ্পপত্রে মেলেছে ডানা পুষ্পগর্ভে ফুটিয়ে হুল প্রজাপতি মধু পানাহারি।
গেঁজে ওঠা মধুপানে হয়েছে মাতাল
ভ্রমর-ভ্রমরী!
কমল পত্রে ছত্রধারী দাদুর ছায়াতলে,
লম্ফঝম্পয় ফড়িং ধরে কখনো ডুবে জলে।
কতশত পরিচয়ে বৃক্ষসারি, চালতা গাব তেতুল  কামরাঙা, হরিতকী, 
জানা অজানা আরো কতকি!
সরসো পাড়ে বিরাজিত শাখে-শাখে আরও ঐ
সারসো সারসী।
বাধা পড়ে গেছে বুঝি হারিয়েছে পথ উর্বশী।
শৈশব অস্তিত্ব ভার মস্তিষ্কে আজো,
সজীব সরসী।
এলো গেলো কতো, সত্য ত্রেতা দ্বাপর, হবেই হবে কলির ও পতন।
দমিত সরসী সেথা আদি অনন্ত চিরন্তন।।

Thursday, 14 April 2016

পাপের আসামি

পাপের আসামি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নির্মল কর হে ধরণী সদয় কর হৃদয়,
মুছে দাও মনের গ্লানি পাপের কর ক্ষয়।
খুলে দাও হে জ্ঞানেন্দ্রিয় সবার সমান,
করিবারে হবে সক্ষম পাপের অবসান।
ধুলোমাখা পাপপুণ্যি এই ধরণীর পরে,
কেউ করে পুণ্যি লাভ কেউ পাপে মরে।
খুজে পাই পূণ্যি সেজন দিয়েছ সুদৃষ্টি,
অন্ধ করেছ যারে সেতো তোমারি সৃষ্টি।
অলক্ষ্যে রয়েছ তুমি প্রাণীর অনুকূলে,
তবু কেউ রয়েছে শীর্ষে কেউ পদতলে।
প্রভু দয়াময় একি তোমার সৃষ্টির কারণ,
খুলে দাও বন্ধ নয়ন করিব পুণ্যি চয়ন।
দাঁড়াইব যেদিন তোমার বিচারের দ্বারে,
আপত্তি করিব সেদিন কাঁদিয়া চিৎকারে।
ক্ষমা করে দাও হে প্রভু তুমি অন্তর্যামী,
লালসার পরবশে আমি পাপের আসামি।

অভিমানী বঙ্গ

অভিমানী বঙ্গ


আব্দুল মান্নান মল্লিক


হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যায় রাত বারোটার পরে,

ঘুমের ঘোরে চমকে দেখি বন্ধু নাই ঘরে।

বরণডালা সাজিয়ে তোমায় তুলেছিলাম ঘরে,

ছিলনা বুঝি বলার কিছু দূরে গেলে সরে। 

কে শুনাবে বিহগ গীতি কে ফোটাবে ফুল,

কে বাজাবে নিশ্বাস ছেড়ে বিজলি তারে শূর।

রাঙিয়ে দিয়ে আকাশ তুমি ছড়িয়ে দিয়েছ রং,

ফুলের মধু ঝরবেনা ছুঁয়ে বাংলা মায়ের চরণ।

শাখে-শাখে নাচবেনা পাখী গাইবেনা আর গান,

এসো হে বন্ধু বসন্ত আবার জুড়াবে বাংলার প্রাণ।

বাগানের ফুল শুকিয়ে যায় মাটিতে পড়ে ঝরে,

আবার তুমি আসবে কবে বাগান দিবে ভরে।

একটি বছর রেখেছিলাম ভালোবাসায় ধরে,

কোন দেশেত বন্ধু তুমি আবার গেলে ফিরে।

নিঠুর বন্ধু তুমি হে বসন্ত করেছ প্রতারণা,

ভালোবাসার মূল্য কতো তুমি কি বুঝনা?

ভালোবাসার ভালো কথা মনে যদি পড়ে,

তোমার লাগি মুক্ত দ্বার আবার এসো জুড়ে।




Wednesday, 13 April 2016

বর্ষ বিদায়ে নববর্ষ

বর্ষ বিদায়ে নববর্ষ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বসন্তের আজ বিদায়কালে,
কাঁপিয়ে মর্তভূমি।
এতদিনতো ভালোই ছিলে,
যাবার কালে দুষ্টুমি।
তপ্ত আকাশ স্তব্ধ বাতাস,
বাংলাতে নির্বর্ষ।
আতপ বোঝা মাথায় নিয়ে,
ওই যে নববর্ষ।
বসন্ত যাবে আসবে তুমি,
রাত বারোটার পরে।
নববর্ষের গ্রীষ্ম বৈশাখী,
রোদের ছাতা ধরে।
তপ্ত করে আকাশ বাতাস,
বিকাল বেলায় ঝড়।
এমনি করে কাঁপবে নাকি,
আবার বাড়িঘর?

Tuesday, 12 April 2016

গরীবের বৈশাখ

গরীবের বৈশাখ!

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পুষ্পগন্ধে মাতাল সবাই,
গরীব মাতাল ভাতে।
ঘরে অভাব বাইরে সুবাস,
বলতে কি দোষ তাতে।
বৈশাখ কথা তুলতে বলে,
ইলিশ পান্তাভাতে।
খেয়েছে কি খায়নি কেউ,
বৈশাখ মাসের রাতে।
নিজের নিয়ে ব্যস্ত সবাই,
কে কার খোজ রাখে!
সবুজ পাতায় রঙিন ফুলে,
রঙিন স্বপ্ন মাখে।
গ্রীষ্মকাল আর বর্ষাকাল,
কিবা শীতের দিন।
সব দিনটা সমান সমান,
গরীবের দুর্দিন!


Monday, 11 April 2016

শূন্য এ ভুবনে

শূন্য এ ভুবনে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বসে আছ হৃদয় জুড়ে,
রাতের স্বপ্ন ঘিরে।
ক্ষয়িত চন্দ্র আমি নাকি,
পূর্ণিমার পরে।
খসে পড়া তারা বুঝি
জ্বলন্ত ভূমিতে,
মুখ থুবড়ে পড়ি বারবার
তোমাকে ধরিতে।
আঁধার কালো আমি বুঝি
আলোকে ঘিরে।
সাড়াতেও পাইনা দেখা
ভুবন শূন্য তীরে।
মেঘ হয়ে ভেসে বেড়ায়
তোমার তাড়নায়।
সব ইচ্ছা হারিয়ে যায়
শূন্য আঙিনায়।
মায়াজালের বেড়িতে ঘিরে,
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে।
অচল এক পঙ্গু আমি,
পড়ে তোমার ধাঁধেঁ।

বাকি কথা হবে পরে

বাকি কথা হবে পরে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আজকে নাহয় থাকনা কিছু,
বাকি কথা হবে পরে।
নতুন হয়ে বলবো সেদিন,
তোমার আমার ছোট্ট ঘরে।
রঙিন আলো রঙিন ফুলে,
আবদ্ধ হবো দুইজনে।
কাঁসর শানাই বাজবে কত,
পাহারা দিবে লোকজনে।
মনের যতো কইবো কথা,
জমানো মনের বাসনা।
বিনা সুতোই গাঁথবো মালা,
কোনদিন আর ছিঁড়বেনা।
রিনিঝিনি বাজবে কাঁকন,
তোমার দুটি হাতে।
কাঁকন ছন্দে বাজবে হৃদয়,
পুষ্পঘরে নিভৃতে।
হলুদ গন্ধে মাতবো দুজন,
উদাস হবো উদ্বেগে।
নতুন করে দেখবো তোমায়,
সারা রাতি জেগে।

√ বৈশাখী বাঙালি

বৈশাখী বাঙালি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এ উহারে ডেকে বলে ফিসফিসিয়ে কানাকানি,
নতুন বছর নতুন খবর সবার হল জানাজানি। 
নতুন সাজে বাংলা আবার নতুন সবুজ পাতায়,
নাই সংঘাত বিভেদ বিবাদ নতুন ভালোবাসায়।
লালপেড়েতে সাদা শাড়িয় বধুরা এ্যালো চুলে,
আটপৌরেতে পাড়ার মেয়ে খোঁপা বাঁধে ফুলে।
দোলনচাঁপা শাখায় শাখায় মৃদু হাওয়ায় দোলে,
কাঁঠালচাঁপা পাতার আড়ে সুবাসে কথা বলে।
লাউ কুমড়া গাছে গাছে জড়িয়ে ধরে লতা,
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা মানুষে মানুষ একাত্মা।
স্বর্গ মোদের গর্ব মোদের সুখ-সাগরে হাবুডুবু, 
এক নামেতে চেনা সবার বৈশাখী বাঙালী বাবু ।
আমরা সবাই বাঙালি বাবু থাকিনা জাতপাতে,
নিত্য দিনে বৈশাখ মাসে বুনো পাখিদের সাথে।
কথায় কথায় বলছে সবাই ইলিশ পান্তাভাত,
আকাশ ছোঁয়া দামের কথা লাগায় কজন হাত?
শাকের সাথে ইঁচড় ভাতে কাঁচা আমের ডাল্।
আমির গরিব খাবে সবাই বাংলার মোটা চাল্।
হাতের কাছে হাত বাড়ালে গাছে গাছে ঝুলে,
চিচিঙ্গা ঝিঙা করলা বেগুন দেশী মাছের ঝলে।
উচ্ছে পটল লাউ কুমড়া বারো মাসের আলু,
সাহেব ছাড়া গর্ব মোদের আমরা বাঙালি বাবু।



Sunday, 10 April 2016

√ ভবঘুরে

ভবঘুরে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আমি এক দিশাহারা পথের পথিক,
কোথায় কখন থামবে জীবন,
তার নাই ঠিক।
পথই আমার জীবন সাথি,
পথে পথে দিবারাতি।
শৈশব কথা মনে করি,
ফুটপাতের সেই হামাগুড়ি।
জনবহুলের পদতলে,
খেয়েছি কত গড়াগড়ি।
সেসব কথা থাকনা বাকী,
আজকের দিনে বাউলগীতি।
বিনা সুতোই বাজিয়ে বীণা,
গান গেয়ে হয় বাউলানা।
কেউ জানেনা আসল ঠিকানা,
দুই চোখ সবার একটি কানা।
বাউল গানে দেশে দেশে,
জনবহুল পথের ধারে।
কেউবা বলে পাগল নাকি,
কেউবা দেখে ভবঘুরে।
কানাকানি করছে আবার,
আমি নাকি বেজন্মা।
তবে কি ওরা জানে সবাই,
আমার মায়ের ঠিকানা?

Friday, 8 April 2016

বৈশাখীর স্পর্ষকাতর

বৈশাখীর স্পর্ষকাতর 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বসন্ত সাজিয়ে গেল মনোহর সৃস্টি,
হিংসায় জ্বলিসনা আর দিসনা কুদৃষ্টি।
বৈশাখের স্বীকৃতি বছরের শুরুতে,
প্রবেশিয়া ভাঙচুর করে যাস অক্ষান্তে।
গর্জে ওঠে মেঘ যখন ডাকে কড়কড়,
শান্ত বাতাস পাগল হয়ে বয়ে যাস ঝড়।
দায়ভার নিয়ে আসিস করিতে নশ্বর,
আকাশে ফাটিয়ে বাজি বয়ে দিস ঝড়।
ধনিদের পাথুরে ঘর এড়িয়ে নজর,
ভেঙে দিস গরীবের ছোট ঝুপড়ি ঘর।
উল্লাসিত বৃক্ষশাখা কচিকাঁচা পাতায়,
নির্মম হৃদয়ে তুই জ্বলে উঠিস হিংসায়।
প্রহর গুনেছে মানুষ উন্মত্তের ঝড়ে,
কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া পলাশ গেছে ঝরে।
বয়ে যাস ঝড় যখন দেখিয়ে মহত,
পশুপাখি হারায় প্রাণ কেউ হারায় পথ।
বাসা ছাড়া পাখিদের মরণপণ লক্ষণ,
ঝাঁক ছাড়া পাখিগুলো খুজে প্রিয়জন।
কেউ ডিমে দেয় তা কারো বাসায় ছা,
হিংসার কবলে নশ্বর পুরা করিস ইচ্ছা।
ছুটে আসিস নভ ভেদি অগ্নির গোলা,
বৃক্ষশীর্ষে আগুন জ্বলে সর্বনাশা খেলা।
যেখানেই আছিস তুই সেইতো ভাল,
তোর পরশে মলিন হবে জগতের আলো। 


Thursday, 7 April 2016

দিশাহারা পথচারী

দিশাহারা পথচারী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বয়ে গেছে দিন সব
সম্মুখে ভারী রাত্রি।
আমি এক দিশাহারা পথচারী।
চন্দ্রপ্রদীপ নিভে গেছে,
নাহয় মেঘে ঢেকে আছে,
বিক্ষিপ্ত হয়েছে তারাদের সারি।
আমি এক দিশাহারা পথচারী।
জমাট বেঁধেছে মেঘ অন্ধকার,
নিজেকে হারিয়ে খুজি বারবার।
চেনা পথ আঁকাবাঁকা,
ধুলোয় পড়েছে ঢাকা।
দেখাও হে পথ, পথের দিশারী।
আমি এক দিশাহারা পথচারী।
পদতল হতে বহুদূরে
মৃত্তিকা ধীরেধীরে যায় সরে।
বাতাসে হারায় শ্বাসপ্রশ্বাস,
এই বুঝি প্রলয় আভাস।
তবু চলে টিকটিক জীবন্ত ঘড়ি।
আমি এক দিশাহারা পথচারী।
চেয়ে দেখি চারিদিক
জ্ঞান হারিয়ে দিগ্বিদিক।
পথ হারিয়ে পথের পথিক ঘুরি,
আমি এক দিশাহারা পথচারী।

সন্ধানের অবসান

সন্ধানের অবসান

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভূবন গোলাকারে
দিবানিশি ঘুরি চক্রাকারে,
হন্যেতে ভূবন গোলাধারে।
অবশেষে সপ্তসাগর পেরিয়ে
উপস্থিতি ভূবন কিনারে।
ঢালু ভেঙে যায় যতবার, পাড়ে উঠিবার
শত চেষ্টা করি।
ফিরে আসি পুনর জলাধারে
খেয়ে গড়াগড়ি।
সকাল দুপুর পেরিয়ে শেষ বিকেলে,
শত চেষ্টা যায় সবই বিফলে।
যতটুকু ছিল আশ্বাস, হারিয়ে বিশ্বাস
অজান্তে রয়েছি পড়ে, চোরাবালির গড়ে
ক্রমান্বয়ে তলিয়ে যায় গলায়গলায়
সর্বাঙ্গ ঢাকি।
মস্তক শুধু ক্ষণিকের অপেক্ষায় বাকি।
তবু আছি ব্রতের সাথে জাগি।

Wednesday, 6 April 2016

শুধু তোমার সাথে

শুধু তোমার সাথে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সাথী ওগো বল একবার রেখে হাতেহাত,
চল যায় দূরে ঐ নাই যেথা বাঁধন উৎপাত।
মেঘেদের সাথে নইলে বাতাসে ভেসে,
হারাতে চাই দুজন কোনো অজানা দূরদেশে।
হরিণের চাউনি যেথায় পাখিদের গান,
বৃক্ষরাজ যেথায় এলোমেলো ফুলের বাগান।
থাকবেনা বাধাবিঘ্ন হবে চেতনার উন্মেষ,
তুমি আমি গড়ব সেথায় নতুন এক দেশ।
দুজনে থাকব সেথায় জড়িয়ে লতাপাতাই,
পুষ্পগন্ধ বিহগগীতিই মাতব প্রেমের খেলায়।
ছোট্ট কুটির বাঁধব দুজন কাঁটাগাছের বেড়া,
নলখাগড়ায় গড়ব খুঁটি শুকনো পাতায় মুড়া।
ফুল কুড়াতে উঠবো দুজন যখন ভোরবেলা,
শ্যামলতাতে গাঁথবে তুমি বুনো ফুলের মালা।
বুনো ফুল খোঁপায় দিবো পুষ্পমালা গলায়,
মুড়িয়ে দিব সারা অঙ্গ গাছের সবুজ পাতায়।
দেখবে তখন কৃষ্ণ আমি তুমি আমার রাধা,
মাধবীলতায় দুলব দুজন কেউ দিবেনা বাধা।

Monday, 4 April 2016

বৃন্ত ছিন্ন আঠা

বৃন্ত ছিন্ন আঠা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ঝরে যদি পুষ্পকলি অকালে,
তবু মনে খুশি থাকো পলকে দেখে।
নাই আসতো যদি সে,
সাজানো বাগানে।
সাধ্য কি ছিল তোমার,
দেখিতে নয়নে?
গুণগান কর তাই দয়ার ভাণ্ডারে,
ডেকে বল খুশিতে অন্তরে।
হে দয়াময়, ঝরে যদি পুষ্পকলি
কালে অকালে।
দুঃখ কি আর তাতে!
তবু বড় খুশি আমি, দয়াতে তোমার।
দেখেছি ক্ষণিক নজরে!
যদি তুমি প্রশ্ন কর, একি?
নয়নে টপিছে ফোটা।
উত্তরিবো তব আমি,
অকাল বৃন্ত ছিন্ন আঠা!

Sunday, 3 April 2016

কাংসি মাঠের পরী

কাংসি মাঠের পরী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কাংসি মাঠের দূর প্রান্তে,
খড়ে ঢাকা গ্রাম।
মাঠের মাঝে দিন-দুপুরে,
পরি নাচে অবিরাম।

নীলা পরির বাসা সেথায়,
ছিল সবার জানা।
জাদু দিয়ে টানবে কাছে,
মানুষ যেতে মানা।

ঠাই দুপুরে কাংসি মাঠে,
দেখে আসি তারে।
উষ্ণ ঠোটের চোঁয়া দিয়ে,
হৃদয় চুরি করে।

দুই ডানাতে পিঠের উপর,
ময়ূর ঢঙে নাচে।
স্বর্ণ আভা গায়ের রঙে,
পায়ে নূপুর বাজে।

টেরা চোখের চাউনি ছিল,
মিষ্টি হাসির ভাজে।
হাসলে দন্তে মুক্তো ঝরে,
গড়ন পুতুল ছাঁচে।

আলতা ছাঁকা পায়ের রঙে,
ফুল গোলাপি গাল।
রূপ বাহারি নীল শাড়িতে,
হয়ে গেছি মাতাল।

Friday, 1 April 2016

লোহিত শৈবলিনী

লোহিত শৈবলিনী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

লোহিত শৈবলিনী স্রোত স্তব্ধ অগ্রসরে,
ধীরেধীরে অজ্ঞাতে দিন যায় সরে সরে।
সাগর পেরিয়ে কেউ হয়েছে পারাপার, 
তবু পাইনি খুজে আমি শৈবলিনীর ধার।
সন্তরণে ভেসেছি আমি শৈশব শৈবালে,
অনড়ে দাঁড়িয়ে আজ স্রোতহীন জলে।
যেতে থামি সন্তরণে অসাড় কৃশকায়ে, 
আপতন দাঁড়িয়ে নিতে হিসাব চুকিয়ে।
ফেলে আসা সময় যত পিছনে হারায়,
মুছে যাওয়া স্মৃতি কিছু ভাসে আবছায়।
শৈশবের সন্তরণ সেদিন ছুটোছুটি কূলে,
ভরেছে আজ শৈবলিনী অসচ্ছ জলে।