Saturday, 31 October 2015

কুহক বন্দি

কুহক বন্দি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পালক বিহীন মন তবু আকাঙ্খিতে
ভাসমান শূন্য পথ দূর দিগন্তে,
গগনতলে মেঘেদের সাথে
ইচ্ছেতো করে উড়তে।
ওদের দুহাত ধরে।
যেতে মন সেথায় ছটফট অস্থিরে।
বাউলিয়ার একতারা সুর গানে
সৃজন সেই পথ পথোচারণে,
হাঁটা পথ ওই যে গাঁ দূরে,
পারিনা রহিতে চুপ ঘরে,
কখনো ভাবি নির্জনে করি বিচরণ।
করি ঘোরাঘুরি গোটা জগৎটায়।
স্থলে জলে গগনো মহীধরে,
নিরাশার ভাবনা অন্তরে।
মায়াজালের কুটিরে।
বুঝিনা পাগল মন কখনো আবার,
সুন্দর ওই ছোট্ট পাখিটা হয়ে।
অপারক তবু অমনি করে
পুষ্পপাঁপড়িই খেলতে,
হরিৎ মাঠের প্রান্তরে।
অজানা কোনো আশায় নভস্বানে
ছুটন্ত অবিরাম কখনো ঘুর্নণে,
করে আশা আজও চরাচরে।
রয়ে যায় অপূর্ণ আশা,
ইচ্ছেটা যেমন করে।
ওরে মন পাগলা, মিথ্যা ঘোর নেশা,
হবে কি পূরণ, মনের যত আশা?
চুপ থাকা ভালো খুশি অন্তরে,
যতটুকু সম্বল তেমনি করে,
হবে কি আর ইচ্ছা করে?

Friday, 30 October 2015

উপকারের প্রতিদান

উপকারের প্রতিদান
আব্দুল মান্নান মল্লিক
নির্বাক দাঁড়িয়ে আমি তোমাদের স্বার্থে,
কাটে মোর দিবারাত্রি মাঠের পাশ পথে।
প্রাণ বাঁচাতে শত প্রানীর যুগিয়েছি অন্ন,
স্রস্টার প্রগাঢ় সৃজন তাইতো আমি ধন্য।
মায়ের আঁচল সমান মায়া মমতা দিয়ে,
ছায়াতলে রাখি সবার আমি ছাতা হয়ে।
ছায়া ঘেরা উঠান মোর ছায়া দিয়ে সবার,
তবু মোরে করে আঘাত চালিয়ে কুঠার।
নীরব থাকি ক্ষত সহি করিনা প্রতিবাদ,
শুনিতে পাওনা তাই হৃদয়ের আর্তনাদ।
করে কেউ খাদ্য পশুর ছিঁড়ে পালি পাতা,
ঘাতে ঘাতে হয়ে যায় অবসন্ন জোড়তা।
কেউ করে খড়ম পায়ের গৃহসজ্জা খাট,
কেউ মোরে জ্বালাই আগুন করে চৌপাট।
শান্ত হয় ক্লান্ত পথিক ছায়াতলে আমার,
করেনা কেউ কদর মোর সহি অত্যাচার।
গুণাগুণ গাইবে সেদিন কেউ যাবে ভুলে
অনলে দহন নয়ত ভাসবো নৌকা জলে।
রেখে গেলাম প্রশ্ন মোর তোমাদের কাছে,
দিয়ে গেলাম সবটুকু কতটুকু আর আছে?

Tuesday, 27 October 2015

দুমনা

দুমনা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কারবা বাড়ির বউগো তুমি
নামছ হেলে দুলে,
মাছ ধরতে ছিপ ফেলেছি
ঢেউ দিওনা জলে।
সরিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল
উঠাও বদন খানি,
মোড়ল বাড়ির বউ নাকিগো
কেমন করে জানি?
আলতা আলতা পা দুখানি
জলে সাঁতার দিয়ে,
মাছ ধরতে বিফল হলাম
তোমার দিকে চেয়ে।
ছিপের সুতো টানছে মাছে
দৃষ্টি তোমার দিকে,
মাঝ নদীতে ছিপটা ভাসে
জ্ঞান নাই সেদিকে।
সর্ষে ফুলের শাড়ির আঁচল
রোদের ঝিকিমিকি,
মনটা আমার হলো পাগল
কেমনে বদন দেখি।


Monday, 26 October 2015

স্বপ্ন দেখা সত্য

স্বপ্ন দেখা সত্য

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিশ্বাস কর বা নাইবা কর
আসে কি যায় তাতে।
গান শুনিয়ে নাচ দেখেছি
জল পরীদের সাথে।।
কখনো নিজে পাখি হয়ে
নীল গগনের দেশে।
ডানা মেলে উড়তে থাকি
বলতে লজ্জা কিসে।।
মিথ্যা কথা বলতে নারি
সত্য পথেই চলি।
সত্য পথের পথিক আমি
সত্য কথায় বলি।।
নীল আকাশে জ্বলে উঠি
ওই তারাদের সঙ্গে।
সাগর তলে দেখি কেমন
নাচতে থাকি তরঙ্গে।।
কখন নির্জন পুকুর পাড়ে
যেথায় কেহ নাই।
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ
কোন দিকেতে যায়।।
স্বপ্নের কথা ব্যাক্ত করি
মিথ্যা কিছুই নই।
পাইনি সত্য বাস্তব খুজে
স্বপ্ন প্রকৃত হয়।।

Saturday, 24 October 2015

সময়ের প্রথা

সময় সরণী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হারানো সময় কভু ফিরিবে কি আর?
বলিতে বলিতে যায় এমুহুর্ত আবার।
অবরূদ্ধ হবে সবার চলন ঘুর্ণন গতি,
চিরতরে বহিয়া যাবে সময় নিরবধি।
ঘটন আর অঘটন সব কিছু জড়িয়ে,
স্বকীয় পথ ধরে যায় সময় দৌড়িয়ে।
স্বীয়কক্ষে চলে সময় যেন প্রতিজ্ঞায়,
অদৃশ্যের শিহরণে অনুভূত সংজ্ঞায়।
মনের পাখিটা যেন ভাবে মনে মনে,
সময়ের অপেক্ষায় উড়িবে তৎক্ষণে।
সময়ের ভাবনা কেউ ভাবে সর্বদায়,
ক্ষয়িত করে কেউ অতি অবহেলায়।
প্রশ্বাসের পরে যখন ফিরিবেনা শ্বাস,
ভুলে যাবে সবকিছু সময়টা আশ্বাস।
অসময়টা মিথ্যা কথা বলি বারংবার,
তখনও ছিল সময় ভাবিও একবার।


Wednesday, 21 October 2015

√ অবিনাশি

অবিনাশী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পাখিদের গানে গানে মৃদু বাতাসে,
সোভিত মর্তভূমি প্রাতের উদ্ভাসে।
আকাশের সিড়ি বেয়ে ছুঁয়েছিলে ভুমি,
যেথায় দুজন কেবল আমি আর তুমি।
উষ্ণতার আলিঙ্গনে মাতোয়ারা দু-জন,
খোলা মাঠ গগন-তলে যেথায় নির্জন।
রূপের জৌলুস তোমার ঝরে স্বর্ণাভায়,
চমকিত ধরণী-পৃষ্ঠ আচ্ছাদিত সমুদায়।
স্বর্ণাভ্র ছড়িয়ে দিয়ে মোর সারা গায়,
রঙ খেলায় মত্ততা প্রাতের বেলায়।
উড়ে পড়া গায়ে মোর আলতো অনিলে,
দেহ-মর্দন মত্ত নিগূঢ়ে শাড়ির অঞ্চলে।
বয়ে যায় সময় যত হইয়া উত্তেজিত,
ভিজে যায় ঘর্মে মাটি মর্দনে নিপীড়িত।
সম্মুখের পথ মোর আছে কিছু বাকী,
তুমি কেবল চিরকাল রহিবে একাকী।
প্রেমের নিষ্পত্তি কবে কে তা জানে,
মনে রেখো জীবনী মোর প্রেম বন্ধনে।
কালো আঁধার জীবন হবে নইলে তুমি,
তোমার পরশ পেয়ে শোভিত মর্তভূমি।

Sunday, 18 October 2015

√ প্রত্যাগত দেবীমাতা

প্রত্যাগত দেবীমাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সঙ্কট তরিকায় মাগো করেছ দেরি,
পড়লো মনে আজ বুঝি বাবার বাড়ি?
সামগ্রী উপকরণ যত তোমারি জন্য,
তোমার আগমনে মাগো আমরা ধন্য।
পদতলে দিও মাগো একটুখানি ঠাঁই,
সঙ্কটকালে কর উদ্ধার বড় অসহায়।
দশভুজি রণসজ্জায় স্বসস্ত্র বজ্রমুঠে,
অবসান কর পাপের পূজিব একনিষ্ঠে।
এইটুকু দাবি মোদের তোমার নিকট,
অভিযোগ কর গ্রহন হয়োনা বিকট।
মুছে দাও গ্লানি যত জাতি ভেদাভেদ,
সন্তান তোমারি মা-গো তবুও বিভেদ।
কর আজ ভিন্ন মোচন সবাই সমান,
সর্ব জীবের সেরা হবে মানুষ মহান।
সর্বনাশা সবার সাথে অসুরের দল,
বিচরণ দিনে-রাতে স্বর্গ মর্ত্য ভূতল।
আচ্ছাদনে আজও তারা দৈত্য অসুর,
কেন তবে আজ মানুষ অধিক নিষ্ঠুর।
নাহি হত ভাগাভাগি হিন্দু মুসলমান,
সূচনায় হয়ে যেত অসুরের অবসান।
ধীক্কারি যুম্বাসুর বালা জারজ জনম্,
জন্তু-দানব আলিঙ্গনের বংশ অধম।
কর মাগো আজ তুমি ওদের নিধন,
নইলে অনলে দহন হইবে ত্রিভূবণ।
কন্ধরে ধোতি-প্রান্ত করি করজোড়,
অস্ত্রাঘাতে কর মাগো অসুর নশ্বর্।
আরাধনায় হয়ে যদি অণুমাত্র চ্যুতি,
ক্ষমা করে দাও মাগো সেবাতে ত্রুটি।


Friday, 16 October 2015

খলসি বিলের মাঠে

খলসি বিলের মাঠ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

জানলা দিয়ে কে ডাকেরে,
রাত দুপুরের পরে।
মাছ ধরতে যেতে আমি,
মরবো নাকি জাড়ে?

এখনো অনেক বাকী আছে,
ভোর বেলাটা হতে।
যীন পরিতে আসবে তেড়ে,
যাবোনা এত রাতে।।

সূর্যের আলো ফোটার আগে,
আসবি ফিরে তুই।
খলসি বিলের মাঠে ধরবো,
কাতলা মৃগেল রুই।।

সঙ্গে আনতে ভুলিসনা যেন,
রেশন ভোটের ছবি।
বিশ্বাস পাইনা রাতে কারো,
যীন পরীটা হোবি।।

যখন যেমন ইচ্ছা তেমন,
কখনো সুন্দর নারী।
কখনো ছাগল গরু-ভেঁড়া,
কখনো মেয়ে বুড়ি।।

যীন পরীরা ডুবিয়ে মারে,
খলসি বিলের জলে।
রাত্রি বেলায় জলের ধারে,
কাউকে একা পেলে।।


Tuesday, 13 October 2015

অস্ফুট কবিতা

অস্ফুট কবিতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কবিতার প্রচলন যুগযুগান্তরে
কবিতা ছিল তখন ছন্দাকারে
মৃত্তিকা গভীরে পেয়েছিনু হাতে
প্রাচীনের লিপি মলিনে চিত্রিতে
পুরাণের কাব্যকথা মনে হয় বটে
খোদাই এ চিত্রলিপি ছিল নিভৃতে
বুঝিবারে সঙ্কট হইয়া অসহায়
আবরিত মলীনে ছিল নিষ্প্রভায়
পড়েছিনু প্রযত্নে কিছু হ্রস্বকায়
চিত্রলিপি ছিলো পাথরে খোদাই
হইতো গণেশ হবে ভেবেছি মনে
কার্ত্তিকের চিত্র যেন অন্য কোণে
মলিনের বিভেদে অস্পষ্টে লিপি
খোদাই-এ আবদ্ধ নাম দূর্গা দেবি
মহাশক্তির অধিকারী যুগল কেশরী
কেশরী আরোহী পৃষ্ঠে বাহক শ্রীহরি
অস্পষ্টে ছিল নাম কবি কোনজন
শতপ্রণাম করি তবু কবি গুরুজন


√ রসের সাগর জ্যৈষ্ঠ

রসের সাগর জ্যৈষ্ঠ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রসে ভরা জ্যৈষ্ঠ মাসে আকাশ বাতাস মাতাল,
আম আনারস পাকলো লিচু অবশেষে কাঁঠাল।
রংবেরঙের পাখিরা গাছের মিষ্টি ফল খেয়ে ,
নৃত্য করে শাখায় শাখায় মিষ্টি গান গেয়ে।
পাকা ফলের গন্ধে ভ্রমর গুনগুন গেয়ে উড়ে,
গাছে গাছে পাখির কল্লোল সারা বাংলা জুড়ে।
বদের আঁটি কাঠবিড়ালি বেহায়াপনা লেজুড়ে,
ভোজন হেলায় নষ্টের গোড়া ফলে ক্ষত করে।
ঝরে পড়ে পাকা খাজুর মাটিই গাছের গোঁড়ে,
পাড়ার মাছি জুটলো এসে ভন-ভনিয়ে উড়ে।
কখনো বা পাকা কাঁঠাল গাছের থেকে পড়ে,
ফলের ঝুড়ি আমীর গরীব সবার ঘরে ঘরে।
হীমসাগর আর রানীভোগ মিষ্ট আম ল্যাংড়া,
ইচ্ছা করলে টকের স্বাদ খেও গাছের আমড়া।
বলবো কত আমের কথা যায়না এতো বলা,
খাজুর জাম বাঙ্গি পাকে আরও পাকে কলা।
কামরাঙা আর সফেদা গাব রসে ভরা স্বাসে,
চাইলে খেতে তাও পাবে জৈষ্ঠ মাসের শেষে।


বাংলার শরৎকাল


বাংলার শরৎকাল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ছিন্ন মেঘের ভিন্ন পথ নীল গগনের গায়ে,
চাতক উড়ে মত্ত হয়ে শিশির কোণা খেয়ে।
রোদের উপর সাঁতার দিয়ে ছায়ার ঘুরাঘুরি,
শরৎকালে রোদ ছায়াতে খেলছে লুকোচুরি।
দূর দিগন্তে মাঠের পরে ফুল ভরা কাশবন,
মেঘের ফাঁকে রোদের চমক শীর্ষে চনমন।
বিহগগীতি শিউলি শাখায় উড়ছে মধুকর,
শরৎ কালের রূপের ঝলক হতাশ মনোহর।
ডাহুক ডাকে বৃক্ষ শাখে ডাহুকী খাত পাড়ে,
কুঞ্জবনে পাপিয়ার পিউ ভেকেরা জলাধারে।
ধোঁয়া ধোঁয়া নীহার ওড়ে ঐ যে দূরের পানে,
সুরের ছন্দে মত্ত বাতাস রাখালীয়ার গানে।
মাছরাঙাটি বসলো ডালে দৃষ্টি পুকুর জলে,
রং-বাহারি দেহের গড়ন অধর বাহার লালে।
ছাতিম জারুল চাঁপা ফুটে আরও ফুটে বেলি,
প্রজাপতির পাখনা ঘাতে ঝরে পড়ে শিউলি।
সন্ধ্যাতারা ফুল ঝরে যায় শরৎ প্রাত কালে,
নয়নতারা ফুলগুলো সব শীর্ষ গাছে দোলে।
গুনগুন সুরে ফুল ফুটিয়ে ভ্রমর যায় উড়ে,
মোদের গৌরব ঋতুকন্যা সারা বাংলা জুড়ে।

Thursday, 8 October 2015

আজব শহর কলকাতা

আজব শহর কলকাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

স্বীয় চোখে দেখেছিনু ঘটনা একদিন,
আট দশ হবে বয়স দেহ অতি ক্ষীণ।
হাত পাতিয়া দাঁড়াইল দরজার দ্বারে,
শিয়ালদহের অন্নশালায় রাস্তার ধারে।
বাবু সাহেব বেরিয়ে চক্ষু লাল করে,
এক চোড় মারে গালে গায়ের জোরে।
ছেলেটি উঠিয়া বলে জোড়ে হাত দুটি,
এবার তো দিবে বাবু এক টুকরো রুটি?
এই কথায় রাগে বাবু যেন পাগলা হাতি,
রুটি বিনা মারে বাবু বুটোপায়ের লাথি।
গলা ধাক্কায় ফেলে দিয়ে পথের উপর,
অপবাদ দিয়ে বলে বেটা পাক্কা চোর।
আমারই মতো সেথায় ছিলো যতজন,
সাহসে আসেনা কাছে কোন একজন।
কলকাতার শিয়ালদহ আজব শহর,
কারও বাস রাজভবন কারও নাই ঘর।
মারামারি কাড়াকাড়ি করে আবর্জনায়,
কুকুরের খাবার কাড়ে অশ্রুজলে খাই।
কাউকে দেখেনা কেউ আজব শহরে,
জল তেষ্টাই যদিও কেউ সম্মুখে মরে।
এই শহরে যদি কেউ আসে প্রথমবার,
অশ্রুজলে ফিরবে বাড়ী দেখে অনাচার। 


Tuesday, 6 October 2015

রঙের জেল্লা

রঙের জেল্লা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দেখছি মানুষ নকল সবাই,
খাঁটি আছে কয়জনা।
আসল মানুষ আছে কোথায়,
করছে সবাই প্রবঞ্চনা

আমিষ খেয়ে বড়াই করে,
মুখের অধিক থাবা।
খাচ্ছে যাদের মেরে ধরে,
দেখায় তাদের সেবা।।

মোণ্ডা মিঠাই খেতে দেখি,
আরও দধি ছানা।
রইলোনা আর খেতে বাকী,
তবু কেন ঝালবাসনা।।

মানুষ নাকি জীবের সেরা,
ভূবনের এই মাঝে।
চালচলন তার হয় অপরা,
ঘুরছে নানান সাজে।।

আসল নকল কারে বলি,
গোলক ধাঁধার খেলা।
সবটা যেন গুলিয়ে ফেলি,
যায়না মুখে বলা।।

করেনা নির্ণয় ভালো মন্দ,
যেমন ইচ্ছাই চলে।
হিংসা বিদ্বেষ লাগাই দন্দ্ব,
সম্পর্কের কথা বলে।।

অশ্লীল ভাষা যে মুখেতে,
গাইছে মধুর গান।
মধুর বুলি দিবস ও রাতে,
শুনলে জ্বলে প্রাণ।।

নিজের গৌরব নিজে করে,
সবার উপর মানুষ।  
পশু পাখিরা লজ্জায় মরে,
হয়েছে মানুষ বেহুঁশ।

বুঝে ভালো মানুষের সাথে,
বিবাদ লাগে যাতে।
যেথাই সেথাই ঝগড়া বাঁধে,
কুলমান আর জাতে।।

কবিতা নয় মনের কাকুতি ,
দেখছ শুধুই ছন্দ।
পশুপক্ষী নাকি মানুষ সত্যি,
মনের মাঝে দন্দ্ব।।

Sunday, 4 October 2015

শুন্য পিঞ্জর

শুন্য পিঞ্জর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সিকতায় ভূষিত ঘর হৃদনদী তীরে,
নদীজলের ঢেউ লাগি ভাঙে অচিরে।
এপার ভাঙ্গিয়া গঠন অপারে নীড়,
খালি পড়ে থাকে মোর হৃদনদী তীর।
স্তব্ধ স্রোতের ধারা তোমায় ছাড়া,
পড়ে থাকি নির্জনে আমি দিশাহারা।
ঘরের ঘরণী যেন জীবন সঙ্গিনী,
ছেড়ে যায় ওপারে আমি একাকিনী।
হৃদাঙ্গনে ছিল যত ভাবনা আমার,
নিমেষে হারিয়ে যায় স্বপ্নের আকার।
সোহাগের ঠাঁই দিয়ে অস্থি পিঞ্জরে,
তামস্র নির্জনে বিরাজ অজ্ঞাতসারে।
বাঁশরী বাজাই বাঁশী মৃদু বাতাসে,
ধকধক বেজে যাও শ্বাস ও প্রশ্বাসে।
করিনি কশুর কিছু ধরে রাখিবারে,
তথাপি পারিনি রক্ষিতে অন্তরে ধরে।
অন্তরে আশা যত তোমাকে নিয়ে,
প্রসারি ধোঁয়া হয়ে গেলে ব্যথা দিয়ে।



Saturday, 3 October 2015

তবুও হয়নি কথা

তবুও হয়নি কথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

জমানো গুপ্তকথা বলিতে তোমায়,
জাগে মনে বারবার অপেক্ষায় তাই।
দুটো কথা বলি যদি, যদি হয় দোষ,
হয়না স্পর্ধা তাই,  হৃদয়ে  আপসোস।
আজ নয় কাল বলি, ভাবি যতবার,
বলিতে আসিয়া ফিরে গেছি বারবার।
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে রাতে,
পার হয়ে গেছে রাত পাখিদের ডাকে।
সোনালী আলোর ঝলক দুর্ব্বার শিশিরে,
তোমার হাসি যেন, রেখেছে শিশির ধরে।
সোনালী শিশির যেন ছল-ছল নয়নে,
হাসিতে খুজে কারে, চেয়ে মোর পানে।
দেখিবার আশে, তোমার বাড়ীর পাশে,
ঘোরাঘুরিতে, সন্ধে তারা বিদ্রূপে হাসে।
সারাদিন পর সন্ধের অবশেষে,
সোনালী আলোয় সূর্য গেছে মিশে।
ঢলে পড়ে পূর্ণ  শশী দিনান্তের শেষে,
সারাদিন ব্যর্থ মোর, ঘরে ফিরি নিরাশে।

Friday, 2 October 2015

এসো এসো দেবী মাতা

এসো এসো দেবী মাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নতুন নতুন সাজসজ্জায় মোণ্ডা-মিঠাই ভাঁড়ে,
পরিজনদের আনা-গোনা মা আসছে ঘরে।
সাদা শাড়ী লাল পেড়েতে করবে দেবী বরণ,
বধূরা জটলায় বরণডালায় নানান উপকরণ। 
রঙবেরঙে গাঁয়ের মেয়ে করবে দেবী বন্দনা,
সোনার সাজে আসবে এবার দুর্গা দেবী মা।
বায়না ধরতে ঢাকির ভিড় মঠের প্রাঙ্গণে, 
ধুনুচি নাচে নাচবে সবে পড়ার লোকজনে।
আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষ ঐ যে আসে পুনর,
সমারোহ আর উল্লাসিত বাংলার প্রতি ঘর।
বোমবাজি আর ঢাকের শব্দ মা আসবে ঘরে,
রণসজ্জায় কেশরী পৃষ্ঠে নগ্ন হাতিয়ার ধরে।
মুড়ি মুড়কি হরেক নাড়ু ঘরে ফলের ডালি,
উলুধ্বনি ডাকছে সবে বাংলার অলি-গলি।
দগ্ধ ঘি তার গন্ধ ছড়াই বাতাস হল মাতাল,
ধুপের ধোঁয়া সান্ধ্য-শাঁখে সারা বাংলা উত্তাল।
ব্যস্ত মানুষ কেনাকাটায় হাট বাজারের ভীড়ে,
গরীব দুঃখীরা শূন্য হাতে কাঁদছে অশ্রুনীরে।
কেনাকাটা হয়নি যাদের ঘরের কোণে চুপ,
কেমন করে দেখবে তারা দেবী মায়ের রূপ?
মদের নেশায় পয়সা উড়ে কুবের আত্মহারা,
ঘরের কোণে গরীব কাঁদে বইছে অশ্রুধারা।
নিজের মতো ভাবতে পার তবেই সবাই সুখী,
সমাজের এই ভালোবাসায় মা যে হবে খুশি।
স্বর্গভুমিই বসে মাগো করছো কি আজ তুমি?
অসুরেরা করছে উৎপাত জ্বালিয়ে মর্ত্যভুমি।
সিঁদুর থালায় গগন-ভেদি তোমার অপেক্ষায়,
পুবের রবি ছড়ায় আলো রঞ্জিত ভূবনটায়।
পদ্মপুষ্প বিল্বপত্র আড়ম্বর প্রদীপ শিখায়,
শত আটেক পূর্ণ প্রতি তোমার অপেক্ষায়।
দৃষ্টি দিয়ে গলাও পাথর পুষ্প পাঁপড়িই তুমি!
বিনাশ কর দানব কুলের বাঁচাও মর্তভূমি।
কখনো শীতল কখনো অগ্নি কখনো সংযমী,
কখনো স্বর্গ কখনো মর্ত্য কখনো অন্তর্যামী।
কখনো তুমি উদারতা কখনো অসুর মর্দিনী,
দুঃসাহসী নারী তুমি সর্ব শক্তির অধিকারিনী।
রূপ হইতে রূপান্তরে কখনো এসেছ ঊমা,
বরণ করতে ডাকবো এবার দুর্গা দেবী মা। 
একশত আটে অবতরনে দুর্গা হয়ে যখন,
দুর্গতি নাশ করেছ তুমি করে অসুর নিধন।
এযুগ ওযুগ যুগ-যুগান্তর তুমিই এক নারী,
নারীর আদর্শ ধন্য মা-গো রূপের বলিহারি।