Sunday, 31 December 2017

এই বছর সেই বছর

এই বছর সেই বছর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এইতো সাথী বেশ করেছ এসেই গেছ।
নতুন সাজে আজকে তুমি কেমন আছ?
রাত জাগরণ বসে সারাক্ষণ তোমার অপেক্ষায়,
রাত বারোটা কখন হবে চেয়ে ঘড়ির কাঁটায়।
চেনা মুখ তবুও তুমি অচেনা পরিচয়ে,
পিছন চেয়ে আসছ ফিরে ঠিক সেই সময়ে।
পুরানো দিনের গ্লানি যত শিশিরে ধুয়ে নিয়ে,
শর্ষে ফুলের পাপড়ি মেখে অচেনা মুখ হয়ে।
গানে-গানে সুর মিলিয়ে পাখিদের কলতানে,
নিজেকে যতোই গোপন কর তবুও নিয়েছি চিনে।
পারলে কি আর লুকাতে আদল নিজের পরিচয়,
চিনেছি গো চিনেছি খুব চাঁদনি রাতের আলোই।
তোমার আমার আগের মত একত্রে বসবাস,
উঠছে ডুবছে চন্দ্রসূর্য তারাই ভরা আকাশ।

Wednesday, 27 December 2017

প্রণয়ী মন

প্রণয়ী মন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কিচিরমিচির পাখির ডাকে
ঘুম ভাঙতে দেখি।
সূয্যি মামা পূব আকাশে
মারছে উঁকিঝুঁকি।।
শর্ষে ফুলের মাথায় মাথায়
রোদ উঠেছে ওই।
পুষ্প জৌলুস রোদের হাসি
মন হল তন্ময়।।
স্বর্ণ থালায় পূবের আকাশ
মাঠে সোনার আলো।
ইচ্ছে করে মাখতে গায়ে
ঘর লাগেনা ভালো।।
শর্ষে ক্ষেতের মাঝে মাঝে
মাথা তুলেছে বক।
অশথ গাছের পাতায় পাতায়
রঙিন রোদের ঝলক।।
শিশিরে ভিজে লুটোপুটি
মৌ-হামিঙের স্নান।
কেউবা দোলে শর্ষে ফুলে
গাইছে মধুর গান।।
আলতো শিশির শীর্ষঘাসে
স্বর্ণ বিন্দু ঝরে।
মনটা কোথায় হারিয়ে গেছে
আসেনা কাছে ফিরে।।


Monday, 11 December 2017

স্পষ্ট কথা


স্পষ্ট কথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মন যা চাই, 
বলে ফেলি তাই।
সত্যকে ব্যক্ত করে
সুখী হতে চাই।
যদি কথা স্পষ্ট, 
ক্ষণিকের কষ্ট। 
বিশ্বাসে আশ্বাস, 
ঈশ্বর সহায়। 
প্রিয়জন পথ খুজে
আমতা কথায়।

Friday, 8 December 2017

অনুগ

অনুগ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বজ্র, তুফান, জলোচ্ছ্বাস, আগ্নেয়গিরি খেলার মাঝেও দিবানিশি তুমি।
জর্জরিত ক্ষতবিক্ষত তবুও হওনি কপট , মাগো তুমি যে সহনশীলনি।।
আঘাতে বজ্র তুমি, বিনয়ে গলিত তুমি, তুমিই তো বিশ্ব জীবের মা।
মমতায় বাঁধো মোরে, দিওগো ঠাঁই প্রশস্ত প্রাঙ্গণে তোমারি, ফিরিয়ে দিওনা।।
বল একবার ফিরাবে না আর, রাখিবে আবৃতে তোমারি বক্ষে ধরে।
হরিৎ ঘেরা তোমারি প্রাঙ্গণে, যেমন আছি থাকবো আমি যুগযুগান্তরে।।
কখনো বক্ষে তোমারি, কখনো দুয়ারে, কখনো তোমার শিতলা প্রাঙ্গণে।
ফিরায়ে দিয়েছ বারবার, এসে গেছি কতবার, সে হিসাব রাখিনি মনে।।

Saturday, 28 October 2017

কলি কথন

কলি কথন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কলি কালের ক্ষিপ্ত মানুষ মানির হারায় মান,
ভালো কথায় কান মেলেনা কলির বর্তমান। 
অতীতের সেই কথাগুলো ক'জন রাখে মনে?
রঙ মেখে আজ সঙ সেজেছে ভুলে গেছে ধনে।
ধনসম্পদের নেশায় মানুষ ভাবে তাসের ঘরে,
গোলকধাঁধায় পড়ে কেউবা হোঁচট খেয়ে মরে।
কলি যুগে দেখছি কতো কে কার ভূষণ পরে, 
যায়না চেনা নারী পুরুষ কলির ঘরে ঘরে। 
সত্য ত্রেতা দ্বাপর যুগের ইতিহাস নাই ঘরে,
সংস্রব হারায় সম্ভ্রম হারায় কলির হাত ধরে।
ফেলে আসা পথগুলো সব ইতিহাসের পাতায়,
কেউনা কেউ তুমি আমার আজ আর মনে নাই।
কে'বা গুরু কে'বা শিশ্য কে'বা কার পরাধীনে,
নিজের কথায় ব্যস্ত সবাই কে কার কথা শুনে।
কলিকালের জগতরে ভাই ছল চাতুরী প্রবঞ্চনা,
যে যার মত চলছে মানুষ কেউ করেনা মানা।



Wednesday, 25 October 2017

বর্ষার বিদায় বেলা

বর্ষার বিদায় বেলা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এলরে এল, এল বৃষ্টি ওই,
ঘোলা জলে হাঁসেরা সব খেলছে থৈথৈ।।
দু'দিনের এই বর্ষা বাদল বৃষ্টি ঝরে পড়ে,
শীত এলরে শীত এল মেঘের ভেলায় চড়ে।
কাঁপছে ইঁদুর ঢিবির উপর শালিক গাছের ডালে,
পদ্ম পাতে ফড়িং নাচে ব্যাঙেরা নাচে জলে।
এলরে এল, এল বৃষ্টি ওই,
আকাশ তলে মেঘের ছায়া সূয্যি মামা কৈ??
পুকুর পাড়ে জল উঠেছে ছলাৎছলাৎ ঢেউ,
প্রভাত কালের সূর্যটাকে দেখল না আজ কেউ।
যেদিকে চায় অস্পটে সবুজ বেড়ায় ঘেরা,
এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া মেঘেদের ঘোরাফেরা।
এলরে এল, এল বৃষ্টি ওই,
পাড়ার ছেলে বৃষ্টির জলে করে হৈচৈ।।
সারস সারসী নিস্পন্দে কাপছে জলাধারে,
গাছের ডালে মাছরাঙাটি ভাবছে ওই পারে।
টোকা মাথে কাস্তে হাতে ফিরছে চাষী ঘরে,
ছেদি ভায়া ধানের খেতে কি জানি কি করে।
এলরে এল, এল বৃষ্টি ওই,
জলের মাঝে রুই কাতলা ডাঙায় উঠে কৈ।।

Wednesday, 18 October 2017

বিষন্নতা

বিষণ্ণতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পথিক সবাই দিনে দিনে যায় আমারে ভুলে,
শৈত্যগন্ধে বসেনা কেউ আমার ছায়াতলে।
এক পায়েতে খাড়া আমি দাঁড়িয়ে পথের ধারে,
আনাগোনা মাঠের পরে চায়না কেউ ফিরে।
রোদ দুপুরে ছিলাম সবার ভালবাসার সাথে,
হিম শীতলে হয়তো বুঝি আসিনা কারো স্বার্থে।
বিষাদ ক্লান্ত পথচারী প্রাণ জুড়াত হেথায়,
গাভীর পাল চরত মাঠে বসতো রাখাল ছায়ায়।
পত্রবিতানে ছত্র ধরি আসেনা আর কাছে,
সার্থ ছাড়া বন্ধু হারায় কে আর আমার আছে।
উঠত বসত আসত সবে কইত আলাপনে,
চৈত্র মাসের গোপন কথা সবই লুকাই মনে।

Saturday, 14 October 2017

√ কুহকিনী অপ্সরী

কুহকিনী অপ্সরী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মোরা বনময়ুরী কুহকিনী স্বর্গের অপ্সরী,
ইন্দ্রসভা জয় করে আজ মর্তে এসেছি।
বন ময়ূরী নাচে আমরা পেখম মেলেছি।।
অনাবৃতে সম্ভ্রম বিলাই তাইতো মোরা বারাঙ্গনা,
মন ভুলানো আদল দেহে ত্রিভুবনের অঙ্গনা।
কতশত মুনি-ঋষি পড়লো অনায়াসে,
ধ্যানমগ্ন লঙ্ঘন করে রূপ জোয়ারে ভাসে।
মোরা বনময়ুরী কুহকিনী স্বর্গের অপ্সরী,
ত্রিভুবনটা ভুলিয়ে রাখতে কোমর বেঁধেছি।
নৃত্যে-নৃত্যে গানে-গানে ভুলিয়ে রেখেছি।।
শৌর্যের ঝাঁজে ধৈর্য হারাও এইতো গর্ব সার,
স্বজন পূজন সব হারিয়ে কে কখন হয় কার।
রূপ সাগরে ডুব দিতে সব লুটিয়ে পড়ে পায়ে,
ত্রিভুবনটা জয় করতে কলঙ্ক মেখেছি গায়ে।
রূপ জৌলুস ছড়িয়ে দিয়ে নজর কেড়েছি,
মোরা ছলচাতুরী রূপান্তরি বাঞ্ছা পূরণ করেছি।
মোরা বনময়ুরী কুহকিনী স্বর্গের অপ্সরী,
ইন্দ্রসভা জয় করে আজ মর্তে এসেছি।
জাঁকজমক সব লণ্ডভণ্ডয় সফল হয়েছি।।

Thursday, 17 August 2017

শরতের দোলনা

শরতের দোলনা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পাখির গানে রবির হাসি,
আকাশ ভরা আলো।
মন চঞ্চল আলো ঝলমল,
লাগছে বেজায় ভালো।
থাকব না কেউ বদ্ধ ঘরে,
আয়রে ছুটে আয়।
ঘাস-শীর্ষে আলোক হাসে,
শরতের গান গায়।
নদীর চরে পতিত মাঠে,
হারিয়ে যায় মন।
যেদিকে চায় ফুলে-ফুলে,
শুভ্র কাশবন।
শাপলা ফোটে খালে-বিলে
পদ্ম পুকুর জলে।
নানা রঙের ফুল ফুটেছে,
টবে কেউ স্থলে।
পাকা দিনের রঙ ফুটেছে,
ওই যে বারবেলা।
কখন আমি হারিয়ে গেছি,
সাজিয়ে মেঘের ভেলা।

Tuesday, 27 June 2017

অজ্ঞাত বেলা

অজ্ঞাত বেলা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পদে-পদে প্রহর গুনিস
আলোর পথ চেয়ে।
মেঘে-মেঘে দিন ফুরিয়ে
সূর্য গেছে ডুবে।
সকাল হবে ভাবিস মিছে
আসবে কিনা ভোর।
ভাঙন পাড়ে ঘর বেঁধেছিস
বৃথাই জীবন তোর।
কেউ কি জানে ঘূর্ণন চাকা
থামবে কোথায় কখন।
হাঁটু-জলে মরবি ডুবে
থাকে যদি মরণ।

Thursday, 22 June 2017

√ প্রতীক্ষা

প্রতীক্ষা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কতদূরে রয়েছ সাথি
ফিরে এসো আজ কাছে।
তোমার পরশ গাত্রে, বাতাসে গন্ধ ভাসে, স্মৃতি আজো জেগে আছে।।
মনে পড়ে সাথি, বৃষ্টি-ঝরা দিনের কথা? তুমি আমি গাছতলে।
কদম্ পাতার নৌকা গড়ে ভাসিয়েছিলে বৃষ্টির জলে।।
বর্ষাদিনে ভিজবো দুজন পুষ্পধারায়।
বিরহ বিজনে কদম্বতলে তোমার অপেক্ষায়।।
যেদিন গেছে এসেছে ফিরে শুধু তুমি বিনে!
পুষ্প পাপড়িই ঘোলা-জল পথে বৃষ্টি-ঝরা দিনে।।
ইচ্ছে বড় ভিজতে সাথে আবার তেমনি করে।
বাদল দিনে তোমার কথা বারবার মনে পড়ে।।
চাইনা কিছু তোমায় ছাড়া এ জগতে আর!
তুমি আমার গৌরব ছিলে গায়ের অলঙ্কার।।
একাকিনী এপারে আমি তুমি ওপারে।
বুঝেও অবুঝ আমি মন চায় ফিরে-ফিরে!!

Monday, 19 June 2017

বৃষ্টি ভেজা ফুল

বৃষ্টি ভেজা ফুল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কিবা সকাল দুপুর বিকাল
আকাশ মেঘে ছেয়ে
বর্ষাকালে গড়িয়ে আকাশ
কাঁদছে অশ্রু-নুয়ে
জলে ভাসে জলজ ফুল
লতা জলের তলে
কেউ ফুটেছে বৃক্ষ শাখায় 
ভিজছে বৃষ্টি জলে
খালে বিলে শাপলা কুমুদ 
কলমি ফুটে কাছে।
যেদিকে চায় মন ভরে যায় 
পাড়ের গাছে-গাছে।।
এলোমেলো মাতাল হাওয়া 
পাপড়ি ঝরে পড়ে 
শাপলা কুমুদ লম্বা বোঁটায়
কে কার উপর চড়ে
বৃষ্টি দিনের ফুলের শোভন
কদম্ব আর কেতকী। 
টগর ফোটে কামিনী ফোটে
নাম না জানা কতকি।।
ডোবার মানান কলমি ফুলে
হেলেঞ্চা ধারে-ধারে।
চোখ ধাঁধানো কুমড়ো ফুল
ঘাসফুলে মন কাড়ে।।
কলাবতী আর নয়নতারা
বাড়ির আশেপাশে।
গন্ধরাজ আর দোলনচাঁপা
পাতার ফাঁকে হাসে
কোথাও ফোটে শিয়ালকাঁটা
পতিত ঝোপে-ঝাড়ে।
কোথাও আবার নলখাগড়া
জঞ্জাল জলা-ধারে।।
পত্রে-পত্রে লুকিয়ে কোথায়
কাঁঠালচাঁপার ঘ্রাণ।
বৃষ্টিয় ভিজে উঠলো জেগে
ফুলের নতুন প্রাণ।। 


Thursday, 15 June 2017

রাতের সুবাসে

রাতের সুবাসে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দূর থেকে ছড়িয়ে সুবাস কি লাভ বল তাতে,
পার যদি ডাকো কাছে এই জোছনা রাতে।
কি হবে আর ভাবনা নিয়ে একলা জেগে রাতি,
তোমার ধুলি মাখবো গায়ে করব মাতামাতি।
নিশি গন্ধে ভরিয়ে দিও খুলে মনের জানালা,
নিভিয়ে দিও পুষ্পরসে উষ্ণ মনের জ্বালা।
শুভ্র বদনে বিনীত কেন লজ্জা দাও বিলিয়ে,
মুখ তোল আজ আঁখি খোল মাথা উঁচিয়ে।
তুমি আছ আমি আছি নির্জন এই শুভক্ষণে,
চাঁদের পত্নী সারিতে হাসে ওই দূর গগনে।
দিনের বেলায় নীরব থাক গন্ধ ছড়াও রাতে
পুষ্পরসে সিক্ত হব তোমার সাথে মেতে।

Friday, 9 June 2017

পথের সাথি

পথের সাথি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কোথায় আমার আস্তানা,
কি যে মনের বাসনা।
পথভুলা এক পথিক আমি,
পথই আমার ঠিকানা।
কেউবা নামে পাগল ডাকে,
কেউবা দেয় গালি।
যেমন খুশি বলুক লোকে,
আমার তাতে কি?
কেউবা গড়ে দালানবাড়ি,
আমি কুড়াই নুড়ি।
পথ হারিয়ে পথের সাথে,
খেলছি লুকোচুরি।
পথের ধুলো গুনতে গুনতে,
পূবের আকাশ রাঙা।
পথের শেষে পথ হারিয়ে,
উঠতে ভাঙে ডাঙা।
অজ্ঞাত মোর জনম কথা,
কে ছিল মোর মা।
কোন ভূমিতে পতিত আমি,
মনে পড়েনা গাঁ।

Thursday, 25 May 2017

ঐতিহ্য

ঐতিহ্য

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কি মহিমায় গড়িলে ভুবন,
ওগো মম মালিক সাঁই।
যখন যেমন ভাঙো গড়ো,
তোমার লীলা বুঝা দায়।।
শোভন ভূষণ সব দিয়েছ,
শতবীনা পাখির গানে।
শতরঙে ফুলের বাহার,
জগত ঘেরা সবুজ রঙে।।
শীর্ষ গাছে রোদের কিরণ,
ওই যে মাঠের দূরে।
কেউনা কেউ ডাকছে পাখি,
সতত মধুর সুরে।।
ব্যজন স্রোত বাঁশকোটরে,
রুহু-রুহু বাজায় বাঁশি।
জোনাকি বাতি নিশি কালে,
লক্ষকোটি তারার হাসি।।
দিনের আলো মুক্তো ভাবি,
সোনালী রাতের ঝলক।
যেদিকে চাই চোখ জুড়ানো,
সবুজ ঘেরা পালক।।
চালক বিহীন চলছে আজো,
ইশারা দিয়ে চন্দ্রসূর্য।
নিখুঁত হাতের কুদরত কলা,
সবই তোমার মাধুর্য।।
জলের স্রোত বইছে আজো,
গড়িয়ে পড়ে ঢালে।
এক ঠেলাতে চালাও যেমন,
চলছে উপস্থিত কালে।।

Wednesday, 10 May 2017

√ ঈর্ষার পতন

ঈর্ষার পতন 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দেখতে পাওনা সৃজক তুমি শুনতে পাওনা কানে,
ঈর্ষানলে জ্বলছে ভূবণ মরছে মানুষ প্রাণে।
কি প্রয়োজন শোভন ভূবণ কি প্রয়োজন সৃজন,
কি প্রয়োজন জীবের প্রেরণ এতো আয়োজন? 
যেথায় ভুবন হরিৎ রঙে, গগন ভরা আলো,
জীব ছাড়া কেউ দেখবে কি আর হোক না যতই ভালো?
জীবের মাঝে সৃজক তুমি বাঁচাও দিয়ে আহার, 
তবে তাদের রক্ষা কর ঈর্ষা থেকে উদ্ধার। 
নির্মমতায় জীবহত্যা জীবের মাঝে তুমি,
তবু কেন নীরব তুমি, তুমি যে স্রষ্টা অন্তর্যামী। 
সৃজক তুমি পালক তুমি সবার মাঝেই তুমি,
তবু কেন আমরা মানুষ পাপের অনুগামী?
ঈর্ষানলে পুড়ছে মানুষ পুড়াতে চাই কারে?
দাবাগ্নি যেমন গহীন বনে ধ্বংস স্বয়ং অচিরে। 
যেথায় কোবরা কেউটের বাসা নেউল সর্বনাশা,
সেথায় স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ লীলা অগ্নিগর্ভ ঈর্ষা।
ঈর্ষার আগুন পোষ মানানো এতই সোজা নয়,
নিজের আগুনে ভস্ম নিজে তবেই ঈর্ষার ক্ষয়।




Monday, 1 May 2017

মেঘে ঢাকা আকাশ

মেঘে ঢাকা আকাশ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আজকের দিনটা মেঘলা,
সারাদিনটা, কিবা এবেলা আর অবেলা।
ধোঁয়াশা আকাশটা ছুঁয়ে দূরের মাটি,
তবু কেন যেতে চাই অপারে দৃষ্টি।
বৈশাখী মেঘ ওই করে আনাগোনা,
মা বলে আজ বুঝি বাইরে যেতে মানা।
ভাবনায় গালে হাত গড়িয়ে যায় বেলা,
কি করে চুপ থাকি ঘরের কোণে একলা।
কান্নার তোড়জোড় চোখে নাই জল,
কালো মেঘে আকাশটা পরেছে কাজল।

Sunday, 30 April 2017

√ মনন

মনন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে,
আজ তুমি রয়েছ কতদূরে।
তবুও আমার হৃদয় জুড়ে,
বেদনার ঘরে অশ্রুনীরে।
নির্জনে, কখনো একা জীবন নদীর ভাঙা তীরে।
স্মৃতি যত লুকিয়ে থাকা অলক্ষ্যে অগোচরে।
আমা হতে বহুদূরে হৃদ কোটরে।
উদ্বেগ অন্তিমে হারিয়ে ভব,
আত্মিক মননে ক্ষণিক আসক্ত।
কাঁকন ধ্বনি বাজিয়ে কানে,
ডাক দিয়ে বলে যেন ক্ষণেক্ষণে। এই শুনছো?
মন্দিরে রয়েছি আমি কেন এত ভাবছ?

Sunday, 23 April 2017

√ পরম্পরা

পরম্পরা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

শয়নে স্বপনে জাগরণে সদা ক্রন্দনে,
মনকাননে মনেমনে তোমারে সন্ধানে।
মিলেনি দেখা লক্ষকোটি ঋক্ষভিড়ে,
যেথা থাকো তত্ত্ববাক্যে চিত্ত-নিবিড়ে।
বৃথায় খুজি অলীক পথে ত্রিভুবনে,
তোমার আমার বসতবাড়ি এইখানে।
স্পর্শকাতর দিনে রাতে আসা যাওয়া,
বুঝেছি হে বাঁধনহারা অবাধ হাওয়া।
মৃগ নিজের গন্ধে মরে খোঁজ করে,
আমি মরি তোমার সাথে এক ঘরে।
তুমি বিনা শূন্য ভুবন আঁধার আলো,
কেমন করে জন্ম নিত মন্দভালো।


Saturday, 22 April 2017

হাসিতে দিও বিদায়

হাসিতে দিও বিদায়

আব্দুল মান্নান মল্লিক

যেদিন দুচোখ জুড়িয়ে যাবে
নিভে যাবে জ্বলন্ত বাতি।
ভুলে থেকো খুশিতে হাসিতে
ক্রন্দনকে করনা সাথি।।
দিবস ও রজনী একটি একটি
চলে গেছে কতো বছর।
হেসেছ গেয়েছ কেঁদেছ কতো
মিশিয়ে অধরে অধর।।
পথের শেষে দেখবো সেদিন
তোমার মুখের হাসি।
কথা দিলাম আসব আবার
তোমার পাশাপাশি।।
তোমার হাসি বাজবে কানে
দূর দিগন্ত পারে।
হাসবে তুমি কাঁদবে জগত
কেঁদোনা চিৎকারে।।
দুখের আসন পেতোনা গো
হাসিতে দিও বিদায়!
চৈতন্য সত্তা স্রষ্টার দরবারে
শীতলায় পাবে ঠাঁই!!

Friday, 14 April 2017

বৈশাখের প্রতিবেদন

বৈশাখের প্রতিবেদন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আসিস না আর বৈশাখ তুই কবির কবিতাই,
সবার আশা নিরাশ করে কেমনে ঘরে ঘুমাই।
বসন্ত আজ ডাক দিয়েছে জায়গা করেছে খালি,
পূরণ করতে এলাম আমি সবার চোখের বালি।
কেউবা ডাকে বরণডালায় কেউবা দেয় গালি,
আমি নাকি ঝড়ঝাপটায় করি শুধু খামখেয়ালি।
তার কবিতায় করতে আসি দুষ্টুমি আর শয়তানি,
ভালোবাসার সাড়া দিতে কবির কাছে বদনামি।
নবরূপে সাজাই জগৎ পেলাম তবু লাঞ্ছনা,
কবির চোখে আমি নাকি দিতে আসি গঞ্জনা।
আসতে মানা কবির কথা তার কবিতার পাতাই,
সবাই ডাকে ভালবেসে গোটা কবিতার খাতাই।
প্রথম দেখি বিশ্বটারে অবর্জনায় গেছে ভরে,
ঝড়ঝাপটায় ধুয়ে দিয়ে সাজাই নতুন করে।
পুরানো দিনের গ্লানি যত করতে আসি নশ্বর,
কেউ বুঝুক আর নাইবা বুঝুক জানে শুধু ঈশ্বর।

Wednesday, 12 April 2017

চৈত্রের সীমান্তে

চৈত্রের সীমান্তে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নাইরে বৃষ্টি নাইরে দৃষ্টি শুকাই অশ্রুজল,
চৈত্র দিনের তপ্ত হাওয়া বইছে অনর্গল।
বসন্ত পাখি ডাকেনারে গাহেনা মধুর গান,
তপ্ত আকাশ তপ্ত বাতাস শুকিয়ে যায় প্রাণ।
একে একে দিন ফুরিয়ে চৈত্র মাসের শেষ,
পায়ে পায়ে উড়ছে ধুলো পুড়ছে সারা দেশ।
নতুন পাতা শুকিয়ে ঝরে বৃষ্টি ঝরেনারে,
জল পিপাসায় দেহ শুকাই অশ্রু গড়েনারে।
খালবিল সব শুকিয়ে গেল চরে ভাবে বক,
পানকৌড়ি শুকায়নারে নীরস ডালে পালক।
ভোঁদড় কাঁদে শেওড়াতলে শুষ্ক অশ্রুজলে,
মরা গাঙে ভেকের কান্না অন্তর পুড়ে অনলে।
স্বপ্ন সবার বাঁচার আশা কষ্ট বেদনা ভুলে,
অদূরে ওই আশার আলো মৃগতৃষ্ণা জলে।


Friday, 10 March 2017

আয় আয় আয়

আয় আয় আয়

আব্দুল মান্নান মল্লিক

টিকটিক পায়রা আমার,
আকাশ ছুঁয়ে যায়।
বাড়ির ছাদে সর্ষে ছিঁটাই,
আয় আয় আয়।
আদর দিয়ে চুমা দিলাম,
কাঞ্চন মালা গলে।
মেঘ কন্যার খবর নিতে,
যাসনে যেন ভুলে।
মেঘকন্যা ঘুমিয়ে বিভোর,
মেঘের উপর ভেসে।
মেঘরাণী তার পাশেপাশে,
ভাসিস তুই বাতাশে।
অজ্ঞাত পথ মেঘের দেশে,
যাসনা অনেক দূরে।
আমার কথা মনে করে,
আয়রে ফিরে ঘরে।

Wednesday, 8 March 2017

প্রায়শ্চিত্ত

প্রায়শ্চিত্ত

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিশ্বটারে দেখতে পেলাম,
নারী তোমার জন্য।
তোমার দীক্ষায় শিক্ষা নিয়ে,
মানুষ হলাম গন্য।
বলপ্রয়োগ করব না আর,
হবনা আর বন্য।
তোমার গর্ভে জন্ম মাগো,
গড়বো জীবন ধন্য।
একদিন দুদিন চোদ্দ কুড়ি,
রাত করেছ পার।
জীবন মরণ সংগ্রাম করে,
জনম দিয়ে আহার।
তোমার ব্রত করব মাগো,
করব না ভুল আর।
ভুল যদি হয় ভুলের বশে,
যোগ্য কর ক্ষমার।

Tuesday, 7 March 2017

রঙবাহারি দেশে

রঙবাহারি দেশে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

চলতে চলতে থমকে দাঁড়াই,
রঙবাহারি দেশে।
কখনো লাজে মেঘের মোমটা,
কখনো ভাস্কর হাসে।
রঙ-বেরঙের শাখায় শাখায়,
ছাউনি সবুজ পাতায়।
ফাগুন মাসের ফাগুন হাওয়া,
খুলেছে নতুন অধ্যায়।
অধরে অধর প্রেম আলিঙ্গন,
গগন মিশে ধরায়।
দূরের আকাশ মাঠের শেষে,
আবির রাঙা থালায়।
ডানা মেলেছে প্রভাতকালে,
ফুলের পাপড়ি ওই।
প্রজাপতি আর ফুলের রঙে,
ফাগুনের পরিচয়।
হেথায় ওড়ে বুড়ির সুতো,
এলোমেলো বাতাসে।
বূনো ফুলে সৌরভ ছড়াই,
রঙবাহারি দেশে।


Saturday, 18 February 2017

√ কলঙ্কিতা

কলঙ্কিতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মন দিয়েছি ভ্রমর বন্ধু,
তোর গুঞ্জন গানে।
ভালোবাসার চুমন দিলি,
ব্যস্ত মধু পানে।
আল ফুটিয়ে বিষ ঢেলে তুই,
হারিয়ে গেলি উড়ে।
বিষের জ্বালায় জড়সড়,
পাপড়ি গেল ঝরে।
শুঁকবেনা কেউ হাতে তুলে,
পায়ের আঁচড় দেখে।
নিঠুর বন্ধু ভিন দেশেতে,
ফুলের রেণু মেখে।
গোলাপ হয়ে ফুটেছিলাম,
পাশের বাগানে।
ছলাকলায় মন ভাঙালি,
এই ছিল তোর মনে?
কলঙ্কিতা গোলাপ আমি,
গন্ধ সারা গায়ে।
শত-ডুবে যায়না গন্ধ,
গঙ্গাজলে ধুয়ে।


বসন্ত বিলাপী

বসন্ত বিলাপী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সুখের দিনে দুখের কথা,
বলব খুলে আজ।
মুখের উপর বলছে ওরা,
ঋতুরাজ না ফন্দিবাজ।
কারও ঘরে সুখের বসত,
ওই এলরে ফাগুন।
মন পুড়ে ছাই কয়লাকালি,
কারও ঘরে আগুন।
কুলের কথা ভাবছে বসে,
বসন্তকালে আজ।
ওপারেতে পুকুরপাড়ে,
ষাঁড়াই তালগাছ।
থৈথৈ সব হাঁসের পাল,
ঘাঁটছে কাদাজল।
শুকনো খালের চরে ভাবে,
পানকৌড়ির দল।
খালের জল শুকিয়ে কাদায়,
মাছের প্রাণ যায়।
মাছরাঙাটি শুকনো ডালে,
করে হায় হায়,
ছাদের কোণে অশ্রুজলে,
ঘুটর-ঘুটরি ভাবে।
চাষির ফসল ঘরে-ঘরে,
আহার কোথা পাবে।
সুখের নামে দুখের আসন,
কেউ তুলেনা ধরে।
সবুজ ঘেরা দেশের কথায়,
কেউ চাইনা ফিরে।

Wednesday, 15 February 2017

√ বসন্তের আগমন

বসন্তের আগমন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

পূব আকাশে আবির থালে সুয্যি মামার হাসি,
পুষ্প শোভন পাখির গানে আমরা পাশাপাশি।
ফুলে ফুলে ভ্রমর উড়ে এই বসন্তকালে,
শাখে শাখে বিহগ গীতি পুষ্প ডানা মেলে।
পুষ্পদলে ঘুমিয়ে কে ঐ রঙিন প্রজাপতি,
মৌ-গন্ধে ভ্রমর মাতাল রঙে মাতাল প্রকৃতি।
ফুলে-ফুলে আম্রকুশি এলরে ঋতুরাজ,
নবরূপে ফিরে এসেছে বাংলার সবুজ সাজ।
শিমুল ফুলে রঙ ধরেছে কোকিল কুহু ডাকে,
গাঙশালিকরা গান ধরেছে মরা নদির বাঁকে।
কিবা সকাল সন্ধ্যাবেলা পাড়ার ছেলেমেয়ে,
পুষ্পগন্ধে মাতোয়ারা বসন্তের ছোঁয়া পেয়ে।
গাঁয়ের বায়ে দূর দিগন্তে ধু-ধু আকাশ তলে,
কে যেন ঐ তরুণ তরুণী প্রেমের কথা বলে।
ফিঙে নাচে গাছে-গাছে বৈরি খুজে সাথি,
পেচক-পেচকী প্রেমের কথা বলে সারারাতি।

Friday, 3 February 2017

বসন্তের উঁকিঝুঁকি

বসন্তের উঁকিঝুঁকি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কোথায় যেন ডাকছে কোকিল কুহু-কুহু,
তবে কি আজ বসন্তের খবর হল শুরু?
ওই যে শাখে বৌরি ডাকে কুক-কুক,
সবুজ রঙে মাথায় ঝুঁটি লাল টুকটুক।
বউ কথা কও ডাকে পাখি ওই গাছে,
কাঠবিড়ালি লেজটি তুলে কেমন নাচে।
রোদ দুপুরে পথিক জিরায় গাছের তলে,
ছোট্ট পাখি দোল খেয়ে যায় মাধবী ফুলে।
ফুলের কুঁড়ি ভরে এল শাখায় শাখায়,
গাঁজা মৌ-এ ভ্রমর নেশায় শাখে ঘুমায়।
পত্র-মুকি ফুটবে কখন সেই অপেক্ষায়,
ওই বসন্ত আসবে প্রথম সবুজ পাতায়।

Sunday, 29 January 2017

পথের আলো

পথের আলো

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সৃজন স্রষ্টা সবার সমান,
বিরোধ মনের ঘরে।
জাতিবিচারে কি প্রয়োজন,
চলব সবার হাত ধরে।
জড় জীবের ঊর্ধে মানব,
বারবার ভুলে যায়।
মনের ঘরে অগ্নি জ্বলে,
মনুষ্যত্ব পুড়ে ছাই।
জাত বিচারে তুলছে মানুষ,
পায়ের ফাঁস গলায়।
পথ হারিয়ে গোঁড়ামি পথে,
পাপের বোঝা মাথায়।
হানাহানি আর কাড়াকাড়ি,
হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান।
এই মানুষের ভিড়ে মানুষ,
কেউবা আছে মহান।
সজাগ থেকো মানব সমাজ,
প্রহরী থেকো দ্বারে।
খুয়বে নইলে পারের পুঁজি,
দ্বন্দ্ব বাঁধে জাতবিচারে।

Monday, 16 January 2017

√ অনৈক্য

অনৈক্য

আব্দুল মান্নান মল্লিল

চক্ষু থাকতে অন্ধ ধন্দে,
শিরাপিড়াই ধরে।
শীর্ষাসনে কৌশল বাঁধে,
মাথা গরম করে।
ভেদাভেদের বাসা বাঁধে,
মহামিলনের মাঝে।
ফুসমন্তর কানে কানে,
কিবা সকাল সাঁঝে।
এ-উহারে চিনতে নারে,
এইতো জীবন সার।
কেমন করে চলব তবে,
মানব জনম বেকার।
গুরুভার আর দায়ভার,
দিলাম যখন হাতে।
চলতে মানা মিলেমিশে,
তোমার আমার সাথে।
বিধিনিষেধ বানাই ওরা,
শীর্ষে আসন পেতে।
ধর্ম বাঁচাই কেমন করে,
নামহীন মানবজাতে।
সরল পথের মানুষেরা,
চলতে সরল পথে।
শীর্ষাসনের মানুষ  ওরা,
বাঁধে জাতপাতে।
গড়ব ভাবি সভ্য সমাজ,
ভালোবাসায় মুড়ে।
জাতবিচারে দ্বন্দ্ব বাঁধে,
রুখবো কেমন করে?