Friday, 26 June 2015

নাইবা পেলাম স্বীকৃতি


স্বরচিত কবিতা

নাইবা পেলাম স্বীকৃতি

বৃক্ষশাখায় ঝুলে আছি ফুটন্ত ফুল আমি,
নুয়ে পড়বো ছুঁতে সবার পদতলের ভুমি।
ফুল হয়ে ফুটে আছি নাইবা পেলাম কদর!
কতশত লোকের কাছে পেয়েছি কত আদর।
ফুটা ফুল বৃক্ষশাখায় পায়নি আজ স্বীকৃতি!
তাই বলে কি হয়ে থাকি কুঁড়িতে আকৃতি?
বাসে যদি সবাই ভাল সার্থক জীবন মোর,
দুহাত বাড়ায় ভালবাসার খুলে দিয়ে দোর।
দেবতা মুকে জায়গা দিল নিজের পদতলে!
চাইনা আমি স্বত্বাধিকার ফুটে আছি আহলে।
খুকুমণি আদর করে হাসিতে ধরে আমায়,
নিষ্পলকে আমার দিকে চেয়ে থাকে সদাই।
ছোট পাখি প্রজাপতি চুম্বনে আদর করে,
মিস্টি সুরের গান শুনিয়ে ভ্রমর যায় উড়ে।
চাইনা আমি তোমার কদর ভূবনের অধীশ্বর,
ফুটার আগে চেয়ে ছিলো স্বর্গরাজ্যে ঈশ্বর।
করোনা দূষণ প্রভাব দিয়ে ভূবনের অধীস্বর,
কালির আঁচড় দেখে যদি কুপিত হবে ঈশ্বর।

Thursday, 25 June 2015

হারানো খাতা

হারানো খাতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

শৈশবে লিখেছিনু কিছু কাব্যের কথা,
আজও পেলামনা সেই হারানো খাতা।
স্মৃতিকথা লুকায়ে কিছু অন্তর গভীরে,
খুজিতে অপেক্ষায় আমি অন্তর দ্বারে।
পদ্মদিঘীর কাব্য কথা লিখা ছিলো খাতায়,
ছোট্ট পাখি চাঁন করেছে পদ্মজলের পাতায়।
কাঠকুড়ানি মেয়েটা যেন ঘুরে প্রতিকায়,
জীবনীর কথা তার ছিল আদ্য পাতায়।
দুটি বলদ ডাকাই ছেদি কালোতে সাদাই,
স্কন্ধে লাঙল ছেদির কথা কাব্যের খাতায়।
সারিতে চাষীরা মাঠে কেটেছিল ধান,
রাখাল ছেলে গাছতলে গেয়েছিল গান।
তুলো ছলে অম্বুদ যেমন দেখিয়া মিলায়,
মনে পড়ে কখনো যেন আবারও হারায়।
সর্বহারা হয়ে গেছি হারিয়ে কাব্যখাতা,
যেথায় আছে থাকে যেন হয়ে অমরতা।

Sunday, 21 June 2015

ব্যর্থতা

ব্যর্থতা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কুঞ্জ পাড়ায় শুনে আসি কবিগানের পালা,
দুই কবিয়াল তর্ক করে মিটেনা সারা বেলা।
ধরেছিলাম ছোট্ট ভুল কবিয়ালের কথায়,
মাটিতে আর পা পড়েনা বুদ্ধি কত মাথায়।
পকেটে তাই কলম রাখি বাঁধা খাতা হাতে,
ভুল ধরেছি কবি হয়েছি কথা বলি আস্তে।
ভূষণ বেশ বদলে পরি পাজামা পাঞ্জাবি,
স্কন্ধে ঝোলা ঝুলিয়ে রাখি হয়ে গেছি কবি।
একে একে দুই লাইন লিখি কাব্য কথা,
প্রসংশার আস্বাদন খুঁজি রাস্তায় অযথা।
পাঁচ দশটা লোক যদি দেখি কোনখানে,
হইতো বা ভেসে আসে মোর নাম কানে।
গাঁয়ের রাস্তা ঘুরি যখন উঁচু করি গ্রীবা,
সবারে দিই মুখ দর্শন গোঁফে দিয়ে তা।
নাচানাচি করবে বুঝি মুকে মাথায় তুলে,
তাইনা ভাবি ঘুরি ফিরি সংসার কর্ম ভুলে।
পথে ধরে শুধাই কারো শুনেছ কিছু ভাই?
বলে দিল মুখের উপর তোমার কথা নাই।
জোনাকিতে জ্বলে থাকি ভাবি চন্দ্র রবি,
বুঝিনাতো আজও আমি কেমনে হয় কবি।

Saturday, 20 June 2015

পারিনা আর হাসতে

পারিনা আর হাসতে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হেসেছিলাম সেদিন জানতামনা কাঁদতে,
নিয়তির পরিহাসে পারিনা আর হাসতে।
হাসতে আমিও চাই পারিনা চেষ্টার অন্তে,
প্রজ্বলিত দীপ ছিল জানতো ভালবাসতে।
শৈশব কালে তুমি হাসিয়েছ আদর করে,
দিয়েছিলে কতবার হাসিতে প্রাণ ভরে।
হাসি দেখে কান্না আসে যদি কেউ হাসে,
গাঙ বাঁধ ভাঙে যেমন দুচোখ জলে ভাসে।
নিভে যায় দীপ যেদিন সহসা অজান্তে,
মুছে যায় হাসিমুখ কারও আদর পেতে।
হাতের দীপ নিভে যায় অন্তর পুড়ে অনলে,
হৃদয় শুকায় যখন বন্যা আসে অশ্রুজলে।
অবিরাম ঝরে পড়ে অশ্রুজলের ফোটা,
অকালে ছিন্নবৃন্ত অসম্পূর্ণ ফলের আঠা।
তুমি বিনা শৈশব কাল ধরাধামে আঁধার,
বৃন্ত ছিন্ন কচি পাতা পাইনা কোন আধার।
ভালবাসা দিয়ে যারে ধরেছি আঁকড়ে,
সবকিছু মিথ্যা প্রমাণ জননীর বাহিরে।

Friday, 19 June 2015

চুরির ফল


স্বরচিত কবিতা

চুরির ফল

ঝিপ ঝিপ বৃষ্টি মাঝে,
চুরিতে যায় আমগাছে।
দুটো আম পেয়ে কাছে,
আর দুটো অগ্রে আছে।
ছাড়াতে আম খোসা,
পিঠে বসে কত মশা।
আম রসে শিক্ত হাতে,
পারিনা মশা তাড়াতে।
খেয়ে পিঠ লাল করে,
হু-হু মোর জ্বালা ধরে।
ঘেউ-ঘেউ ধেয়ে আসে,
নিরুপায় হয় অবশেষে।
মালিকের ওই ডাল কুত্তা,
ছুটে পালাই কোন রাস্তা।
দিয়ে ঝাঁপ প্রাণ বাঁচাতে,
মালিক আসে লাঠি হাতে।
টপকে যায় কাঁটা বেড়া,
মালিক পিছে কুত্তার তাড়া।
মালিক ছুড়ে হাতের লাঠি,
ফেলে দিলাম আম দুটি।
দৌড়ে পালাই মাঠ মাঝে,
প্রাণটি ফিরে দেহের কাছে।
কানমুলি ভাই করি শপথ,
ছেড়ে দিয়ে চুরির এই পথ।
আম চুরিতে পেলাম শিক্ষা,
চেয়ে খাব করবো ভিক্ষা।

Thursday, 18 June 2015

রঙ খেলে বসন্ত


স্বরচিত কবিতা

রঙ খেলে বসন্ত

ঝিরিঝিরি বাতাস বহে, উল্লাসিত প্রাণে,
নব ঋতুর কল্লোল, আর পাখিদের গানে।
হলুদ লাল সোনালি, সবুজে বাংলা ঘেরা,
রাতের আগমনে আকাশ, মেঘমুক্ত তারা।
মৌ-মৌ গন্ধে ভরা, মাতোয়ারা বাতাস,
পাতা ঝরা শাখায় , ফুটে আছে পলাশ।
দল ছাড়া মৌমাছি, উড়িছে হেথা সেথায়,
আনাগোনা আমবনে, মধুপানে ব্যাস্ততায়।
যেদিকে তাকাই দেখি, মাধুর্যের শোভায়,
পাখিদের উৎসব বসে, শিমুলের শাখায়।
 মালতী মাধবী বকুল, আরও কৃষ্ণচূড়া,
হলুদের শাখা ভরা, দাঁড়িয়ে রাধাচূড়া।
বসন্তের ডঙ্কা বাজে, জেগে ওঠে বঙ্গ,
হরিদ্রা ভূষণে রঞ্জিত, নব সাজের গন্ধ।
তরুণীরা খোঁপা বাঁধে, রক্তিমার ফুলে,
আহ্লাদীর অহঙ্কারী, হাঁটুনি হেলেদুলে।
কাঞ্চন ফুল ফুটে, বেরঙে আরও রঙে,
প্রজাপতি মধুপান, করে নানান ঢঙে।
চড়া নিচু পথ ধারে, কোথাও আছে বাঁক,
গাছতলাতে ঝগড়া করে, শালিকের ঝাঁক।
বসন্তবৌরী পাখি, শুকনো ডালের উপর,
বাসা বাঁধার ব্যাকুলতায়, করিছে কোটর।
খুলে যায় মন জানালা, অনুরাগের ছোঁয়া,
উল্লাস মন মানেনা বারণ, করিতে অক্রিয়া।

Saturday, 13 June 2015

সজাগ হও

 সজাগ হও

আব্দুল মান্নান মল্লিক

টিক টিক ঘড়ির কাঁটা, 
অজানা এক পথ হাঁটা, 
একাকী রয়েছ বসিয়া দুর্বারে
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
নীরে ভাসা পদ্ম কলিকা, 
ভুলে গেছ অতীত মমতা, 
ধ্যান মগ্ন মনোযোগ সহকারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
পদ্মমুল প্রকোষ্ঠে  ধারণ, 
বন্ধ অক্ষি কিসের কারণ, 
তব মগ্ন বিরাজিত অন্ধকারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
বানিয়ে ঘর সাগর তীরে, 
শাখা ভরা লোহিত নীরে, 
হস্তপদ রয় সঙ্কুচিত আকারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
নবম দরজা বন্ধের মাঝে, 
সদা ধক-ধক অন্দর বাজে, 
তবু কেন নীরব সুপ্তি আঁধারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
পরিপক্ক সম হইয়া গঠন, 
জাগে সাধ দেখিতে ভূবন, 
বিরত হও লোহিত পানাহারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 
প্রস্ফুটিত হও নয়ন পত্রে, 
পুর্নাঙ্গ কায়া ধারণ অত্রে, 
ধরণীতে পদার্পন ইত্যনুসারে। 
বসতি বাড়ি লোহিত সাগরে। 


Thursday, 11 June 2015

বৃষ্টির কবলে


স্বরচিত কবিতা

বৃষ্টির কবলে

স্কুলের পড়া শেষে, ফিরিতে মাঝ পথে,
অঝোরে বৃষ্টি শুরু, নাই কেউ সাথে।
মনে পড়ে যায়, ভুলেছি আনিতে ছাতা,
জামা কাপড় ভিজে যায়, ভিজে বইখাতা।
ক্ষিপ্ত গগন যেন, চমকে উঠিছে বারবার,
পেয়েছে দিন আজ, হয়েছে গগন দুর্বার।
দড়ি ছেঁড়া গরু, ভিজিয়া ছুটিছে দূরপানে,
পিছনে রাখাল ছুটে, বেসামাল হয়ে ক্রন্দনে।
কাকেরা ঝিমরে বসে, কড়ই গাছের ডালে,
চাতকেরা আনন্দ করে, গগনে ডানা মেলে।
পথের ধার বেয়ে, শাপলা ফুলের পুকুরে,
বৃষ্টির আঘাত সহে, ডুবে উঠে বারেবারে।
বিষুর চায়ের দোকান, বৃষ্টি পড়া ঝাপসায়,
কিছু লোক দাঁড়িয়ে, দেখি আমি আবছায়।
দৌড়াতে পিছলে পড়ি, কর্দম মাখা দেহ,
দোকানে উঠি যখন, চিনতে পারেনা কেহ।

Wednesday, 10 June 2015

ঝড়

ঝড়

আব্দুল মান্নান মল্লিক

দৌড় দৌড় দৌড় এল পশ্চিমা ঝড়,
নীল গগনের গায়ে মেঘের তোড়জোড়।
বালকেরা ছুটে পালায় পথের উপর,
ধুলো বালি উড়ে পড়ে চোখের ভিতর।
আঁকাবাঁকা পথ ধরে তড়িতের চমক,
সারি ভেঙে মেঘে হারায় উড়ন্ত বক।
বৃক্ষ শাখা ভেঙে পড়ে পথের উপর,
বাতাসের সাথে উড়ে চাক ভাঙা ভ্রমর।
বেসুরো বাঁশি বাজে বার্তাবাহী তার,
মেঘে ঢাকে সূর্য ভূবন দিনে অন্ধকার।
গাছতলে পড়ে কত পাকা পাকা জাম,
খুঁটে আনতে বিফল হয় ঝড় অবিরাম।
ভয়েতে কাঁপিতে থাকে প্রবীণ কানাই,
মন্ত্রপাঠ করতে থাকে বসে বারান্দায়।
চকিতের শিকার হয় মন্ত্রপাঠ কালে,
শুনিয়া মেঘের গর্জন মন্ত্র গেলো ভুলে।

Friday, 5 June 2015

অন্তর্হিত দীপশিখা

অন্তর্হিত দীপশিখা 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বাজবেনা কোনদিন আর প্রণালীর রাগিণী,
গাইবেনা কেউ আর তোমাদের জীবনী।
সারেগামা গেয়ে গেছে ধ্বনিত হারমনি,
অন্তরে বাজে আজও মনোযোগে শুনি।
ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালী আরও পল্লীগীতি,
মেঠো সুর বহুদূর বাজে সংগীত বিলিতি। 
সেদিনের বঙ্গ আজি রঙ্গ কালের স্রোত, 
ভুলে গেছে তোমাদের বর্তমান জগত।
ধ্বনিত কাঁসর ধ্বনি বেণু বাঁশির সুর,
প্রাণবন্ত সঙ্গীত ছিল আজ বহুদূর।
ধারাবাহিক সুরেলা ধ্বনি হৃদয় প্রাঙ্গণে,
স্মৃতিগুলো ভাসে আজও নিঃসঙ্গ নির্জনে।
ঢোল বাজতো বক্ষ মাঝে বাঁশির সুর কানে,
তান কুরাকুর নাকুর নাকুর তারও ছিল মানে।
ধিতাং ধিতাং তাং তাং ছিল তবলার বল,
এক টাকাতে একটা পটল বলে গেছে ঢোল।
অধুনা এই বাদ্যধ্বনি হারিয়ে যায় গান,
বেসুরো রাগিণীর তাল জ্বালা করে কান।
ঝগড়ার অপধ্বনি ধ্বনিত অধুনা গান,
রূপান্তর হয়ে গেছে পাতাল আসমান।

Thursday, 4 June 2015

মাতৃ স্মৃতি


মাতৃ স্মৃতি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ফেলে আসা দিন বুঝি ফিরিবেনা আর,
কিছু স্মৃতি ভেসে আসে সম্মুখে আমার।
বুঝিবারে আছে ধরায় মাতৃ হারা জন,
অকালে হারিয়ে মাতা সদা পুড়ে মন।
শৈশবের স্বপ্ন আঁকা ছিল সেদিন যত,
সব কিছুর কারণ হয় মাতৃত্বে বঞ্চিত।
সেদিনের চন্দ্র আজও দিয়ে যায় দীপ্তি,
ভাষ্কর তেমনি আছে কমেনি তার শক্তি।
তবু কেন রূপান্তর আমার এই জীবন,
অপূর্ণ গেছে রয়ে কল্পনা আঁকা স্বপন।
সব কিছু বিলীন হয়ে দৃশ্যের অগোচরে,
নিজেকে হারাতে চাই তবু আসি ফিরে।
খালি গাঙের জলোচ্ছাস আছড়ে কুলে,
বালির বাঁধ ভাঙে মোর প্লাবিত ভূতলে।