Thursday, 29 October 2020

শরতের ওপারে


শরতের ওপারে 

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

স্তব্ধ আকাশ নিশ্চল বাতাস থম-থম পরিবেশ, 
বর্ষা-বাদল পেরিয়ে এবার শরতের প্রান্তদেশ।
শরৎ হাওয়ায় ঢেউ তুলেছে শুভ্র কাশ ফুলে,
কোথাও পতিত নগ্ন মাঠে রাখাল গরুর পালে।
শস্য সবুজ কচি পাতা ঢেলার ফাঁকে ফাঁকে, 
সর্ষে বোনা কোথাও মাঠে পায়রা বসে ঝাঁকে। 
সবুজ মাঠে ধানের কলি চাষীর মুখে হাসি,
জলপ্রান্তে শাপলা ফোটে কলমি পাশাপাশি। 
বাঁশ বাগানের ডোবা পারে জঞ্জাল ভরা কেঁউ,
শুভ্র ফুলে মাথা তুলেছে চাইনা ফিরে কেউ।
কত-শত আগাছার ফুল অনাদরে যায় ঝরে, 
অনাবাদি কোথাও মাঠে কাশফুলে মন কাড়ে।
বাসা বাঁধতে ব্যস্ত ঘুঘু ঘরের আনাচ-কানাচ,
শিশির-পাতায় প্রভাতকালে ছোট্ট পাখির নাচ।
ঝরে পড়া শিউলি ফুলে শরতের সকালবেলা। 
জড়িয়ে ধরে শিশিরে সিক্ত দূর্বাঘাসের গলা,
মেছো মানব মাছ ধরতে হাল ধরেছে ডিঙায়,
হাওড় জলে নৌকা বিঁধে শাপলা লতাপাতায়। 
অদূরে ওই মাথার উপর শুভ্র মেঘের ভেলা,
বক উড়ে যায় শুভ্র ডানায় বয়ে নিয়ে বেলা। 

Friday, 4 September 2020

শ্রাবণধারা

শ্রাবণধারা 

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

সাতসকালে বৃষ্টি শুরু আকাশ ঘোলা ঘোর, 
অদূরে ওই গাছের মাথায় উড়ছে পায়োধর। 
কালো গম্ভীর মেঘের ঘটা অবিরাম গুড়গুড়, 
বজ্র জিগির কানে ফাটে ভয়েতে বুক দুরদুর। 
কখনো গর্জন আকাশ ফাটা কড় কড় কড়, 
কখনো ছিটকায় অগ্নি গোলা ধরণীর উপর। 
পথের উপর ঘোলা জলে ঝাঁকে হাঁসের দল, 
অবাধ বেলায় বৃষ্টিয় ভিজে খেলছে অনর্গল। 
গাছে গাছে বন পাখিরা ভাবছে বসে ডালে, 
হুক্কাহুয়া শিয়াল কাঁদে মাঠে জমির আলে।
কুক কুক কুক বন মুরগী কুঞ্জবনের আড়ে,
শাবক ঝাঁকে অনুসারী পানা পুকুরের পাড়ে।
খাল কিনারে ডাঙায় উঠে বেঙের কলরব, 
ঝগড়াঝাটি দ্বন্দ্ব বন্ধ পাখিরা গাছে নীরব। 
ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে পরাগ যায় ধুয়ে, 
বৃষ্টির জলে মাধবি লতা ঢলে পড়েছে নুয়ে।
বিষন্নতায় ঘরের কোণে কাটায় দিবস রাত,
খড়ের ছাউনি মাটির ঘরে টোপায় বৃষ্টিপাত।
বৃষ্টি ফোটা আশীর্বাদ হয়ে ধনীর ঘরে ঘরে,
গরীব কাঁদে দুঃসময়ে খিদের জ্বালায় মরে।



Thursday, 20 August 2020

আকাশের অস্তিত্ব কথা

 আকাশের অস্তিত্ব কথা


আব্দুল মান্নান মল্লিক 


উদ্বেগে খুজে তার শুরুতে জীবন, 

আশয় তার পাখা মেলে করে নিরীক্ষণ। 

কি আকার কি বর্ণ তার নাম শুধু সার,

কেন্দ্রবিন্দু কোথায় তার হয়নি উদ্ধার। 

দূর হতে বহুদূর দৃষ্টির সীমানায়, 

কেউ ভাবে রঞ্জিত আকাশটা নীলিমায়।

বয়ে যায় ঝড় যদি উঠে জলচ্ছাস,

ভূমিকম্পের শিহরণে অনড় আকাশ। 

অহরহ আকাশটায় দুর্যোগ গর্জন, 

নাই তার অনুভূতি নাই তার শিহরণ। 

মেঘেদের ওঠানামা আকাশটা মলিয়ে,

তবুও অটল দৃঢ় অবিনশ্বর অক্ষয়ে।

কোথায় অস্তিত্ব ঠাঁই, শূন্যটা কোথায়, 

কোথায় তার প্রান্তদেশ বস্তু অকায়।

অগণিত নাম ডাক অলীক কল্পনা, 

শূন্যতেও অদৃশ্য বহুবিধ জল্পনা।

গুণী জ্ঞানী জনে-জনে আসে যায় যত,

নিষ্পাদনে মতান্তর পাইনি তার অস্তিত্ব। 

ক্ষয়ে ক্ষয়ে একদিন বিনাশ হবে বিশ্বটা, 

রয়ে যাবে কৌতূহল অবশিষ্ট আকাশটা,

গননার রাশিফল অবশিষ্ট রহস্য,

যত মত তত পথ গুরু কি'বা শিষ্য। 


Sunday, 16 August 2020

বনিতা নির্যাতিতা

 বনিতা নির্যাতিতা 


আব্দুল মান্নান মল্লিক 


স্বামীর ঘরে নির্যাতিতা লক্ষী বনিতা,

স্বামীর প্রহারে লক্ষী নিকৃত লাঞ্ছিতা।

ননদের জ্বালাতন আর স্বামীর প্রহার, 

কুলবধূ লাঞ্ছিতা শাশুড়ীর অত্যাচার। 

ক্ষুধার জ্বালায় কাটে দিন সমুদায়,

ক্ষণে এক মুঠো নয়তো ব্যগ্র ক্ষুধায়। 

দিনে দিনে বাড়ে জ্বালা নিভৃতে সহে,

হাসিকান্না মানা তার সদা থাকে ভয়ে!

সংসারে ক্ষয়-ক্ষতি আসে যদি অল্প,

সব দোষ কুলবধূর গড়ে ওঠে জল্প।

অক্লিষ্ট কর্মযোগে শুনে অশ্লীল গালি, 

হাসি মুখে সহে তবু যেন এক পাগলি।

শাশুড়ির কানভাঙানি ননদের কান্না,

ছলনার বশে স্বামী অবাধ্য উত্তেজনা। 

রোষাগ্নির পদাঘাত চুলের মুঠি ধরে,

শত কষ্টে কৃতজ্ঞ বণিতা স্বামীর ঘরে।

ঠেলে দিয়ে বলে স্বামী ঠাঁই নাই ঘরে,

তবু ভুলে পিতৃগৃহ চেয়ে থাকে দূরে। 

অপেক্ষায় কাঁদে বনিতা পথের ধারে,

অশ্রুজলে রাত্রিযাপন বাড়ির বাহিরে।

অনাদরে ডাকে যদি স্বামী একবার, 

ভুলে যাবে লক্ষী সব দুঃখ অনাচার। 

কুলবধূ নির্যাতিতা যদি স্বামীর ঘরে,

দুর্বিষহের বিষবৃক্ষ অনটন সংসারে! 




Sunday, 2 August 2020

অনৈক্য

অনৈক্য

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ব্রতে মগ্ন আকারে কেউ, কেউবা নিরাকারে, 
স্বার্থান্বেষী সম্পদ লুটতে বিভেদ সৃষ্টি করে।
দিকভ্রান্ত পথের পথিক হোঁচট খেয়ে মরে,
শীর্ষাসনে কৌশল বাঁধে দন্দ্ব বাঁধাই ঘরে।
চক্ষু থাকতে অন্ধ যারা কষ্টে খেটে মরে,
ধর্মযাজক ইচ্ছা যেমন হাতের পুতুল গড়ে।
শীর্ষাসনের মানুষ ওরা হুকুম করে যেমন, 
বেকুব মানুষ শান্তশিষ্ট ওদের ইচ্ছা মতন। 
ভূষণ প্রায় রাজার বেশে সিংহাসনের ঘরে,
স্বার্থ ব্রতে ব্যস্ত ওরা জীবন অকর্মন্য কুঁড়ে। 
অক্লেশে লাভের আশে হরেক রকম কৌশল, 
সংস্রব ওদের চোখের বালি সর্বনাশার দল।
ভেদাভেদের বাসা বাঁধে মহামিলনের মাঝে,
ফুসমন্তর কানে কানে কিবা সকাল সাঁঝে।
এ-উহারে চিনতে নারে এইতো জীবন সার,
কেমন করে চলব তবে মানব জনম বেকার।
গুরুভার আর দায়ভার দিলাম যখন হাতে,
চলতে মানা মিলেমিশে তোমার আমার সাথে।
বিধিনিষেধ বানাই ওরা শীর্ষে আসন পেতে,
ধর্ম বাঁচাই কেমন করে নামহীন মানবজাতে।
সরল পথের মানুষেরা চলতে সরল পথে,
শীর্ষাসনের মানুষ ওরা বাঁধে জাতপাতে।
গড়ব ভাবি সভ্য সমাজ ভালোবাসায় মুড়ে,
জাতবিচারে দ্বন্দ্ব বাঁধে রুখবো কেমন করে?

নিদর্শন

নিদর্শন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কখনো-সখনো অদূর উদ্যানে
দৃশ্য গোচর।
খসে পড়া ইঁট নির্জনে,
সাক্ষ্য ঐ ভাঙা ঘর।
নাচেনা আর বাইজি সেথা,
বসেনা সুরা-পানের আসর।
খণ্ডিত পিয়ালা সুরা-পান করা,
হয়তো বা আজও মাটির ভিতর।
আরও সেথা শুকিয়ে যাওয়া,
রক্ত দিঘির পারে ভগ্ন খঞ্জর।
কষ্টে ঠাহরি, হয়তো গজ-অস্থি,
কখনো ভাসে মাটির উপর।
রাত দুপুরের পর?
ওড়না উড়ানো বাইজীর পদধ্বনি ,
ঘরের চত্বর। 
কাঁকন বাজে রিনিঝিনি, 
যদি হয় চাঁদ হারানো ভোর।
আছে কিনা কেউ কি জানে,
তাদের বংশধর।
হয়তো বা জীবিত
নিভৃতে গুনিছে প্রহর।
শুকানো রক্তাক্ত গায়ে,
আজও কাঁদে ঐ পলাশীর প্রান্তর।
কোথায় গজ, অশ্ব।
কোথায় সৈনিক লোক-লস্কর।
কেউ জানে কি তাদের খবর?

Tuesday, 28 July 2020

গাঁয়ের মেয়ে শহুরে বউ

গাঁয়ের মেয়ে শহুরে বউ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

শিশু ছিলাম ভালোই ছিলাম
পাড়া গাঁয়ের মেয়ে।
ভাবতে ভাবতে বড় হলাম
আকাশ পানে চেয়ে।।
আমের বনে শাখায় শাখায়
গাইতো কোকিল গান।
বসন্ত দিনের পাগলা বাতে
জুড়িয়ে যেত প্রাণ।।
উঠান গাছের মাথায় মাথায়
জ্বলতো সারারাতি।
জ্বলে একবার নিভে আবার
জোনাকিদের বাতি।।
ভাল লাগেনা শহর আমার
চলে কলের গাড়ি।
গ্রাম ছেড়ে আজ শহরে দেখি
পোড়া মাটির বাড়ি।।
সঙ্গী-সাথি সব ছেড়ে আজ
পর হল মোর ঘর।
গ্রাম ছেড়ে আজ শহুরে মেয়ে
মা-বাবা হয় পর।।
কোকিলের সুরে সুর মিলিয়ে
কুহু কুহু গেয়ে।
কোথায় যেন খড়ের ছাউনি
ভাঙা পাঁচিলের গায়ে।।
উঠান ভরা চাঁদের আলো
মায়ের মুখের হাসি।
সব ভুলে আজ হলাম আমি
দূরের শহরবাসী।।
বাবার স্নেহ মায়ের আদর
ছিলাম শিরোমণি।
ঘর ছেড়ে আজ পরের ঘরে
দেবতার পূজারিণী।।
শৈশবের সেই দিনগুলি সব
ফেলে আসা গাঁয়ে।
লাভ নাই আজ মনে রেখে
আমি যে শহুরে মেয়ে।।


আসছে বন্যা

আসছে বন্যা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

জলমগ্ন মাঠ ঘাট সব অঝোর বৃষ্টি ধারায়,
থামবে কবে ভাবছে সবে ঠিকঠিকানা নাই।
ভ্রান্ত পথের হাঁসের দল ঘোলা জলে থৈ থৈ,
পুকুরের জল পথের উপর ডাঙায় উঠে কই।
কেউ কাঁদে কেউ অর্থ লুটে ধনী বাঁধে ফাঁদ,
গরিব কাঁদে ঘরে ঘরে শিশুদের আর্তনাদ।
আলুর কেজি চল্লিশ টাকা ষাট টাকাতে পটল ,
লঙ্কা পিয়াজ আদা রসুন লবণ ডাকে অটল।
বন্যার সাথে ঘূর্ণিঝড় সান্ধ্য বার্তায় প্রকাশ,
দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি গাঁয়ের মানুষ হতাশ।
ঘরবাড়ি সব ভাঙবে ঝড়ে কি'যে হবে উপায়,
ভাসবে নাকি ডুববে জলে কোথায় হবে ঠাঁই?
হুঁকোর সাথে ছাতা হাতে মতি দাদুর দৌড়,
মরতে পারে জলে ডুবে মায়া ছাড়েনা হুঁকোর।
বলছে কেহ ছুটে আসি বাঁধ ভাঙবে রাতে,
গঙ্গাজলে ডুববে গ্রাম নাইকো সময় হাতে।
পুঁটলি হাতে কম্বল মাথে তুলছে কেহ ছাদে,
গাঁয়ের মানুষ ছুটোছুটি বাচ্চা বুড়ো কাঁদে।
বৃক্ষ শাখায় বাঁশের বেদী নির্মাণ করে ছেদি,
চালের বস্তা কলসি হাঁড়ি তুলছে ঘটিবাটি।
গরু ছাগল ডাকাই কেহ পালায় পল্লী ছাড়ি,
বোঝা মাথায় জলে কেহ করছে তাড়াতাড়ি।
মহ্যম পুরের পল্কা বাঁধ জলের সমান সমান,
কোথাও বাঁধে ছলাৎছলাৎ নাইকো পরিত্রান।
রহিম মোড়ল সাহস দিয়ে, বলে সবার সাথে,
গাঁইতি কোদাল ধর হাতে বাঁধবো বাঁধ রাতে।


Saturday, 25 July 2020

পুরানো দিনের কথা

পুরানো দিনের কথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ইচ্ছা করে লিখতে কিছু পুরানো দিনের কথা।
মাটির ঘরে বাঁশের বেড়া ছাউনি তালের পাতা।।
চকমকিতে জ্বলত আগুন গাঁয়ে কি'বা শহরে
পিদিম আলো ধনী দরিদ্র জ্বলত সবার ঘরে
টোপর বাঁধা গরুর গাড়ি রাঙা মাটির পথে।
বউ চলেছে শ্বশুর বাড়ি ঘোমটা টেনে মাথে।।
জামাই যেত শশুর বাড়ি ধুতির কোঁচা ধরে।
শাশুড়ি লাজে ঘোমটা টানে বধূ লুকাই ঘরে।।
চিতল পিঠা তিলের পিঠা শালের দানা গুড়।
কলমা ধানের মুড়ি ভাজা খাস্তা কুড়মুড়।।
হাতচাপড়া ভাপা পিঠায় খাজুর গুড়ের ক্ষীর।
ধুম পড়েছে পাড়ায় পাড়া কিবা গরীব আমির।।
ঢেঁকীয় কোটা ধুকির আটা ভোর বেলাতে ধুম।
ঢেঁকি হাঁকে ধপাস ধপাস ভাঙাই পাড়ার ঘুম।।
বলাই দাদুর গল্পের কথা মিথ্যা ঝুড়িঝুড়ি।
হাসতে পেটে খিঁচুনি ধরে বারান্দায় গড়াগড়ি।।
পেত্নীর বাঁসা তেঁতুল গাছে শেওড়া গাছে ভুত।
মিথ্যা কথায় মন ভরেছে দাদুর গল্প অদ্ভুত।।
পঞ্চগ্রামীন আচার বিচার শাসন ছিল কঠোর।
সাজা পেতো গাঁয়ের যত বদমাশ আর চোর।।
নেশাখোর আর জুয়ারি যত পড়তো যদি ধরা।
মাথা নেড়িয়ে মাথায় ঘোল ঘুরাত সারা পাড়া।।
 

Monday, 20 July 2020

আমার ভুবন জন্মভূমি

আমার ভুবন জন্মভূমি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বাংলা আমার জন্মভূমি আমার ছোট্ট ভুবন,
তোমার কোলে জন্ম নিয়ে গর্বে ভরে মন।
যেথায় রাতে চাঁদের আলো দূর আকাশের তারা,
সেথায় আমার জন্মভূমি কালের স্রোতধারা।
গাছে গাছে জোনাকি বাতি পাখির গানে ভোর,
দিনের আলোয় বাংলা শোভন পুষ্পে মধু চোর।
যেদিকে চায় সবুজ ঘেরা চোখ ফিরে না আর
চোখ জুড়ানো মন ভুলানো আমার অহঙ্কার
বারো মাসে ছয়টি ঋতু সাজানো চমৎকার
রং-বেরঙের ফুল পাখিরা বাংলার অলঙ্কার
মাথায় মাথায় সারিতে হাঁটে মিটিমিটি হাসি,
তারায় তারায় যাচ্ছে ওরা চাঁদের মাসি পিসি।
জলপাখিরা সাঁতার কাটে শাপলা ফোটা জলে,
মেঘলা হাওয়া ঢেউ বয়ে যায় পারের কাশফুলে।
খাল বিল আর পুষ্করিণী কোথাও জলাভূমি,
সবুজ ঘেরা মনোরম সেতো আমার জন্মভূমি।
শিউলি ঝরা উঠান আমার কোথায় পাবো আর,
ঘর ছেড়ে যায় পথের ধারে বুনোফুলের বাহার।
রূপ জৌলুশ সুরভি বাতাস সারা বাংলা জুড়ে,
চাইনা আমার দালানকোঠা হোকনা ঘর কুঁড়ে!
এইতো আমার জন্মভূমি এইতো আমার ভুবন,
এইতো আমার সপ্তসর্গ এইতো আমার জীবন।


খুকুমণির আবেগ

খুকুমণির আবেগ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ঐ দেখ মা যাচ্ছে দেখা শশী মামার বাড়ি,
যাওয়ার কথা বললে কেন মনটা কর ভারী?
সেদিন তুমি বললে আমায় যাব দুদিন পরে,
কয় মাসেতে দুদিন মাগো সত্য বল মোরে।
টিকিট কেটে উঠব ট্রেনে একাই যাব চলে,
দেখতে যখন পাবে মামা উঠিয়ে নিবে কোলে।
কত গল্প শোনালে সেদিন শশী মামার লাগি,
মনে যখন পড়ে মাগো সারা রাত্রি জাগি।
মিছে কেন বললে তুমি টিপ দিবে মোর ভালে,
আদর করে তুলবে কোলে চুমা দিবে গালে।
কোথায় মাগো শশী মামা কোথায় গেল চুমা,
উপর দিকে চেয়ে থাকি আসে না শশী মামা।
ঐ দেখা যায় দিদিমাটি বসে গাছের তলে,
আমার কথা ভাবছে বুঝি দিয়ে হাত গালে
আর রবনা কোলে তোমার যাব দিদার দেশে ,
দিদার দেশের গল্প কথা বলবো ফিরে এসে
বল না মা গাছটির নাম দিদি মায়ের মাথায়,
ফুল নাই ফল নাই জড়িয়ে লতা পাতায়।
ধরণীটা রাতের বেলা বেজায় কেন কালো,
শশী মামা জালিয়ে রাখে সারা রাত্রি আলো।


Sunday, 19 July 2020

ভারত জোয়ান

ভারত জোয়ান

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মোরা ভাগ্যশালী ভারতবাসী গৌরব করি তাই।
মায়ের উক্তি সদা ভক্তি করেছি ধারন মাথায়।।
কুসুম কাননে পাখির গানে তোমার অলঙ্কার।
সুরভিগন্ধে মাতাল সমীরে মিশানো চমৎকার।।
শপথ-বাক্য পাঠ্ করেছি মায়ের চরণ ধরে।
রক্ষিব মোরা তোমার সম্মান ঝড়ঝাপটার পরে।।
মাতৃ আশিস্ মাথায় মায়ের হোকনা নিগ্রো পথ।
পূর্ণ করবো মায়ের উমেদ এইতে মোদের শপথ।।
এক দিকেতে জলের বাধা গিরিরাজ অপর দিকে।
আর এক দিকে বীর সৈনিক আমরা চতুর্দিকে।।
আঁচড় যদি লাগে তোমার থাকবোনা আর চুপ।
মেঘের অধিক গর্জে উঠবো দেখবে সেদিন রূপ।।
রক্তবিন্দু থাকতে দেহে নীরব কেন আর?
করবো নিধন্ বাধার বাধন্ ডাকি বজ্র হুঙ্কার।।
প্রতিরোধ নয় প্রতিশোধ চাই মন্ত্র করেছি সার।
আকাশ বাতাস কাঁপবে সেদিন ধরবো হাতিয়ার।।
ঘুমের ঘোরে আঁতকে উঠি বীর শহীদদের চিৎকারে।
রক্তের বদল রক্ত চাই আসবে সময় ফিরে।।
ওরে বীর শহীদের দল পথের সাথি আমরা অনুক্ষণ। জীবন মরন পণ করেছি করবো উমেদ পূরণ।।
মাতৃভূমি সে তো মোদের রক্তের জবাব নাই?
রক্তের বদল রক্ত চাই, রক্ত চাই রক্ত চাই।

আমি এক বুনোফুল

আমি এক বুনোফুল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বুনোফুল আমি এক তুলেছি মাথা,
অবজ্ঞায় রয়েছি পড়ে অস্তিত্ব বৃথা।
পিপাসিত জীবন মোর নিরাময় হৃদয়,
নিদারুণে মেলি পাখা সূর্যের আলোয়।
সাজানো সারিতে টবে ছাদের কার্নিশে,
ওরা শুধু দেখে মোরে বিদ্রূপে হাসে।
পাতা ঝরা একফোঁটা জলের আশে,
লালায়িত হয়ে আমি পড়ে তলদেশে।
আদরে পুষ্পিত ওরা সুবাস মধুর,
সমাদর পেতাম যদি হতাম মঞ্জুর।
দুইবেলা খোজ রাখে সকাল সন্ধায়,
জল দিয়ে যায় মালী ওদের ইচ্ছাই।
পূজারি মাড়িয়ে যায় ধুলি-মাখা পায়ে,
সহে যায় তবু আমি থুক ফেলে গায়ে।
কতো লোকের সমাগম তবু্ও রয় পড়ে,
পরশে দেখে না কেউ হোঁচটে যায় সরে।
দিক ভুলে আসে যদি ভোমরা ভোমরি,
গন্ধ শুঁকে পালাই উড়ে লজ্জায় মরি।
নীরসে সুরেলা ধ্বনি ভাবিতে নূপুর,
জলাভাবে ধ্বনিত পল্লব রোদ্র দুপুর।
বিষন্নতায় পথের ধারে ধুলোয় ধূসর,
রঙ হারিয়ে হারায় আকার কষ্টে ঠাহর।
শুষ্কতায় হারিয়ে রঙ আমি কুৎসিত,
পল্লবেও রঙিন ওরা পুষ্পতে নিশ্চিত।
দুঃখে ভরা জীবন মোর কাটে সারাক্ষণ,
কি নামে ডাকবে মোরে ভাবে কয়জন?