Tuesday, 27 January 2015

নির্মম নারী

নির্মম আমার মা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বাঘিনী কেন হিংস্র হবে এই ধরণীর পরে,
নিজ সন্তান করছে পালন আদর যত্ন করে।
মাগো তুমি করলে আমায় নির্মমতায় নিধন,
চেয়েছিনু হতে আমি তোমাদেরই একজন।
অন্ন যদি জোটে তোমার লাগতো কত আর?
এক মুষ্টি ধরিয়ে দিলে তাতেই হত আমার।
বিলীন হত তোমারই সুখ এইতো ছিল ভয়,
ফলের ভারে ছিন্ন বোঁটা তাই কখনো হয়?
তোমার পাশে ছায়া হয়ে ঘুরছি আমি সদা,
দেখবে তুমি কেমন করে নয়নে দিয়ে পর্দা।
রাত্রি কালে ঘুমাও যখন তখন আমি আসি,
তোমার বুকে মাথা রাখি তখন একটু হাসি।
ভোর হতে ফিরে আসি তোমার কাছ ছাড়ি,
একা একা খেলে বেড়াই নাইকো ঘর বাড়ি।
তোমার কথা ভাবি যখন ঝরে নয়ন জল,
ধরে রাখি, না হয় তোমার স্বর্গ রাস্তা পিছল।
আত্মা মোর জ্বলে সদা কে করিবে শীতল,
মুছে দিও অশ্রু মাগো দিয়ে শাড়ির আঁচল।
অগ্নি দগ্ধে দগ্ধ আত্মা সহিতে পারিনা আর,
স্বর্গ মর্ত্য সব হারিয়ে পেলামনা কোন ধার।
ভুলটি যদি করে থাক তুমিতো আমার মা,
ঈশ্বর যেন করে তোমার এই অপরাধ ক্ষমা।
শুনতে কি পাওনা মাগো মোর এই ক্রন্দন,
তোমার পাপ মাথায় মাগো বইছি সারাক্ষণ।


-----------------------------------
নিষ্ঠুর হতে দূরে থেকো মায়ের জাতি জন
মমতাময়ি নামের সম্মান রাখিবে সারাক্ষণ
-----------------------------------

Monday, 26 January 2015

রসগোল্লার বিচি

রসগোল্লার বিচি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বলতে লজ্জায় মরি তবু না বললে নয়।
রসগোল্লার বিচি আবার কেমন রূপে হয়?
অবাক ছেলের নামটি ছিল তপন কুমার রায়।
মরছে রোগে তবুও তপন ঔষধ নাহি খায়।।
দাদুর সাথে ছিল তার অতীব ভালবাসা।
তাইতো ভেবে সবে মিলে পেল অধিক আশা।।
দাদু ভাবলো রসগোল্লায় ঔষধ দিব পুরে।
না দেখিয়া খেয়ে ফেলবে অতি তাড়া করে।।
দেখে যদি থাকে তপন রসগোল্লায় এ-কি।
বলবো আমরা সবে মিলে রসগোল্লার বিচি।।
এইতো ভেবে তপন রায়কে দাদুর কাছে দি।
অবাক ছেলে বললে দাদু আমায় বলবে কি?
দাদু বললে শোনরে তপন ভালবাসি তোরে।
রসগোল্লাটি খেয়ে ফেল অতি তাড়া করে।।
শুনে তপন বললে দাদু আড়ালে গিয়ে খাব।
মানতে যদি না পারতো আবার পালিয়ে যাব।।
অবাক ছেলে দাদুকে বলে ঘরের পিছে গেল।
রসগোল্লাটি খেয়ে আবার দাদুর কাছে এল।।
দাদু বলে খেয়েছ তপন রসগোল্লাটি সম্পূর্ণ।
নইলে তোমার মারের চোটে করবো মাথা চূর্ণ।।
অবাক ছেলে বললে দাদু রসগোল্লাটা খেয়ে।
গাছ বেরোবে আশা করি বিচিটা পুঁতে দিয়ে।।

Saturday, 24 January 2015

করি নিবেদন

 করি নিবেদন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভুল যদি হয়ে থাকে ভাই বোনদের কাছে।
ক্ষমা চাহি দ্বারে আসি সবারে সঙ্গ মাঝে!
ছন্দ বিহীন সূতা বিহীন মনের মালা গাঁথা।
তুলে নিও কাব্য মোর দিওনা মনে ব্যথা।।
ভালবেসে নিওগো সবে আমার এই গাথা!
মনের গভীরে দিওগো রেখে পূর্ণ কর খাতা।।
সিন্ধু সম মনের অন্তরে একটু জাইগা দিও।
ছন্দ বিনা কবিতা মোর সোহাগ করে নিও।।
চক্ষুকোণে দিওগো মোরে একটু খানি ঠাঁই!
নেত্রগোচরে রাখিও ঢেকে হারিয়ে না যায়!!
ঝড় বাদলের সময় কালে বন্ধ করিও আঁখি।
রক্ষা করিও মোর গাথা অক্ষিগোলক ঢাকি।।
নয়ন কোণে দিওগো রেখে একটু অকুস্থল!
কঠোর করে রাখিবে ধরে আবদ্ধের শৃঙ্খল।।
বড় আশা করি আজ এই প্রত্যাশা অন্তরে!
ফিরিয়ে দিওনা কেউ মনে রেখো চিরতরে!!

Thursday, 22 January 2015

আম ধুতুরার বাগান

আম ধুতুরার বাগান

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কেউবা করে চোর ডাকাতি কেউবা করে বাজনা,
কেউ কাহারে আঘাত দিয়ে করছে কত প্রবঞ্চনা।
দিনে রাতে চলছে আবার গঞ্জনার সাথে যন্ত্রণা,
এরই মাঝে চলছে কেমন পুজো নামাজ প্রার্থনা।
হরেক রকম মানুষের ভীড়ে চলছে খেলা সর্বক্ষণ,
পায়ের টক্কর খাচ্ছে যারা রবেনা তারা বেশীক্ষণ।
আড়াল থেকে ছুড়ছে পাথর মানব রূপি শয়তান,
তাদের সাথে মানুষের আজ দেখছি কত ব্যবধান।
পাথর ঘাতে যখম্ অনেক হারায় কেহ দেহ-প্রাণ,
কেউবা ছুটে বাঁচাতে চাই করছে এরাই পরিত্রান।
মন্দির আর গির্জা মোদের মসজিদে হয় আযান,
কেউবা এসে বাঁধায় দাঙ্গা এরাই হলো বেইমান।
ফল-উদ্যানে ঢুকে আবার করছে কেহ বিষপান,
ওই উদ্যানের মধ্যে দেখ মিস্টি ফলটি বিদ্যমান।
সৃষ্টির রহস্য বুঝতে নারী এইতো তাঁর অবদান,
ঘূর্ণি-পাকের এই দুনিয়ায় রবে শুধু সাক্ষ-প্রমান।

Wednesday, 21 January 2015

পারের তরী

পারের তরী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রং-বেরঙের মাঝে ভুলে, সাজলি নানা সাজে।।
পান্ডুলিপি শুণ্য করে, ভাবনা কেন আজে?
উল্লাস আর রং তামাশায়, ভবের এই খেলায়।
হাতের সময় ফুরিয়ে গেল, পারে যাবার বেলায়।।
নাইকো বাকী সময় বেশী, দেখরে ভেবে এবার।
সময় ভিক্ষা চাইলে দিবে, সাধ্য আছে কার?
সাদা পুঁথি হাতে যাদের,  করছে তারা রোদন।
পূর্ণ পুঁথি হাতে সাজিয়ে, আছে হাস্য বদন।।
পুঁথির হিসাব হাতে ধরে, বসে আছিস ওরে।
এপার ছাড়ি যেতে হবে, তোরে আপন ঘরে।।
হেলায় ফুরায় সকাল দুপুর, সন্ধ্যা এল ওই।
পারের ঘাটে বসে কাঁদিস, করিস কেন ভয়।।
খুইয়ে দিয়ে সারাটা দিন, পারের ঘাটে ভাবিস।
শ্রমে ফাঁকি দিয়ে কেন, মজুরি হিসাব করিস।।
তিনটে মাথার মালিকরে তুই, এখন উপায় নাই।
একটি মাথা ছিল যখন, ভাবনা ছিল কোথায়?
মজুরি তোর হেথায় নাই, সেথায় গিয়ে পাবি।।
পান্ডুলিপি ভরে যখন, ভব-পারে যাবি।
শুন্য হাতে আসার পরে, পুঁথি সাজিয়ে নিয়ে।।
যাবে শুধু পুঁথি তোর, সঙ্গী ছাড়ি দিয়ে।।
এটা আমার ওটা আমার, সবই রইলো পড়ে।
যাবার বেলা মিলবে যত, শুন্য হবে গড়ে।।
সঙ্গী সাথী কেউ যাবে না, পারে যাবার বেলা।
এদের নিয়ে পূরণ হল, ভবের মাঝে খেলা।।


Tuesday, 20 January 2015

শুভ নববর্ষ

শুভ নববর্ষ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সাজিয়ে রাখি বরণডালা তোমার অপেক্ষা করি।
তাড়াতাড়ি এস এবার কর না আর দেরী।।
উঁকি মেরে দেখছ কেন আমরা কেমন আছি।
এইতো সবে হয়েছি আজ তোমার কাছাকাছি।।
হিমের ছোঁয়া লাগে যদি ভয় করছ তাই।
মিলেমিশে থাকব মোরা হিমকে ভয় নাই।।
আনন্দে আজ মাতোয়ারা ধরাধামের মাঝে।
আসবে কেমন করে তুমি দেখবো নতুন সাজে।।
ভাঙবে কখন সুপ্তি তোমার তাকিয়ে আছি সবে।
ভাবছ তুমি আসবে তখন? যখন বারোটা হবে।।
ডাকবে যখন ভোরবেলাতে কিচিরমিচির পাখি।
কেমন করে বন্ধ রাখবে তোমার দুটি আঁখি।।
দূর করে দাও গ্লানি যত ঘোমটা দাও খুলে।
প্রভাতকালে দেখবে তোমায় নানা রঙের ফুলে।।

Saturday, 17 January 2015

সন্ধ্যামণি

সন্ধ্যামণি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

সন্ধ্যামণি, সন্ধ্যামণি তোমায় দেখবো বলে।
দেখা মোরে নাহি দাও ফোট সন্ধ্যা হলে।।
দিবালোকে থাক বন্ধ কি অপরাধ তোমার!
নিশি কালে খোল অক্ষি হেতু বড় মজার।।
নিজ মনে ভাব কেন? নিশি মোর আপন।
অলি আবরু করে চুরি তাই কর গোপন?
নাহি লাগে জোনাকিদের দিবালোকে ভাল।।
তাই শুধু রাত্রি হলে দেয় মোরে আলো।।
জোনাকিদের কথা তুমি কেন যাও ভুলে।
নিজ রূপে সুখী থাক সন্ধ্যামণি কূলে?
একা বসে থাক শুধু নিশি ভোগ করে।
বৃথা রূপে কর বড়াই যত প্রাণ ভরে।।
না দেখে তোমারে কেউ নিশি জাগরণে।
মূল্যহীন রূপ তোমার সৃষ্টি অকারণে।।
নিশিকাল শেষে তুমি বৃন্ত ছিন্ন হবে।
না লইব হাতে তুলে দূরে পড়ে রবে।।
নিজ বলতে নিশি তোমার দিবা কেউ নয়?
অভিশাপ দিয়ে গেলাম যেন নাশ হয়!

ঝরা ফুলের ব্যথা

ঝরা ফুলের ব্যথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বৃন্ত ছিন্ন হয়ে মুই পড়ে মাটির উপর।
কেউ-তো মোরে চিনলো না আজ, হয়েছি এখন পর!
বৃন্ত-যুক্ত ফুলগুলো সব লতা-পাতায় হাসে।
মৌমাছিরা সারি সারি ওদের কাছেই আসে।।
গাছের নীচে পড়ে মুই উর্ধ্ব দিকে চাই।
আঘাত লাগে প্রাণে তবু, মোর কেহ নাই?
মাটির বুকে জাত মুই মাটিই মোর ঘর।
কেউ-তো মোরে চিনলো না আজ, হয়েছি এখন পর!
প্রভাতকালে ছেলেরা সব ফুল তুলিতে আসে।
হেলায় পড়ে থাকি তবু নিল না কেউ পাশে।।
পদে পদে ছিন্ন হয়ে দূরে যায় সরে।
পদতলে পড়ে কখনো কাঁদি প্রাণভরে।।
ঝরাফুলের ব্যথা শুধু তুমিই জান ঈশ্বর।
কেউ-তো মোরে চিনলো না আজ, হয়েছি এখন পর!
কেউ বা এসে ঝাঁটিয়ে দিয়ে দূরে ফেলে মোরে।
কেউ বা দেখে শুকনো পেয়ে অগ্নি কেমন ধরে?
হতাম যদি বৃন্ত-যুক্ত সুন্দর ফুল-খানি।
রাখত মোরে আদর করে, সাজাতো ফুলদানি।।
ঝরা-ফুলের ব্যথার মাঝে তুমিই আছ ঈশ্বর।
কেউ-তো মোরে চিনলো না আজ, হয়েছি এখন পর!

গরীব চাষী

গরীব চাষী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

প্রভাত হলে মাঠের পরে গৃহস্তের কাজে যায়।
অন্ন পেটে থাকে নাকি খোঁজের কেহ নাই।।
মাথে ছাতি দিয়ে মালিক জমির আলে বসে।
ফসল কত পাবে তাই মনের অংক কষে।।
গরীব চাষী সারাটা দিন কষ্টে খেটে মরে।
কখনো বা জলে ভিজে কখনো ঘর্ম ঝরে।।
ঢেলার আঁচড় লাগে পায়ে রক্ত ঝরে পড়ে।
অনেক কষ্ট সহ্য করে সোনার ফসল গড়ে।।
কটি খানা অসাড় হয় ফসল কাটার ফলে।
জীর্ণ হাতে শিরটি ওঠে জমি চাষের হলে।।
গরীব চাষীর নাইকো বিরাম এইতো জীবন তার।
দু, মুষ্টি অন্নের লাগি খাটবে কত আর?
অন্ত, হীন দুঃখ তবু, মূল্য কেন হীন।
পরের ঘরে তোলে ফসল যায় না চাষীর দিন।।

পোড়ো মন্দির (অধিক্ষিপ্ত মন্দির)

পোড়ো মন্দির (অধিক্ষিপ্ত মন্দির)

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অনেক দিনের পোড়ো মন্দির নির্জনে থাকে পড়ে।
সেথায় কেহ চায় না ফিরে আসে না তার ক্রোড়ে।।
ব্যবহার হীনে হেলিত হয়ে ইঁট পড়িছে খসে।
কক্ষ মাঝে আগাছা ঝাড়ে রয়েছে মন্দির বসে।।
পূজারী না আসে পোড়ো মন্দিরে উপাসনার লাগি।
খুজে ফিরে তারা কোথায় হবে ফল-মূলের ভাগী।।
পোড়ো মন্দির রবে না পড়ে পূজারী না এলে।
করিবে পুজো কুনো বেঙ সেথা সমস্ত কাজ ফেলে।।
প্রভাতের জল পড়িবে না সেথা পোড়ো মন্দির ভাবে।
ফুলের মধু আপনা হতে ঝরিয়া পড়ে যাবে।।
নাইবা পড়ুক নর-কর ফুল পোড়ো মন্দির পরে।
আগাছার ফুল প্রভাত হলে নিজেই যাবে ঝরে।।
সন্ধ্যায় কেহ আসে না সেথা প্রদীপ জালিবার লাগি।
আগাছার জোনাকি তারাই রয়েছে প্রদীপের মতো জাগী।
সঙ্খ বাঁশী বাজায় না কেহ দিবাকে বিদায় দিতে।
বিদায় লয় ইটের ফাঁকের ঝিঁ-ঝি পোকার গীতে।।
হায় ভগবান যার কেহ নাই তুমিই রয়েছ তার।
পোড়ো মন্দির থাকে না পড়ে তুমিই লয়েছ ভার।।

শহর ও গ্রাম

শহর ও গ্রাম

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভাল লাগেনা শহর আমার উঠান ছাড়া ঘরে,
দিনে রাতে ভুগছে মানুষ ম্যালেরিয়া আর জ্বরে।
কারখানা আর তেলের গাড়ি ধোঁয়ায় অন্ধকার,
যেদিকে চায় ইঁটের বেড়ি আচ্ছন্ন চারিধার। 
বৃষ্টির দিনে নীচু তলার অর্ধেক জলের তলে,
গাড়ি-ঘোড়া থমকে দাঁড়ায় অটো ডুবে জলে।
পথ চলতি মানুষগুলো সব কাছা ধরে যায়,
হাঁটুর উপর জল উঠে যায় চলতে আছাড় খায়।
চেনা মানুষ অচেনা হয় শহরে করে বাস, 
পরিচয় হীনে পাশ কেটে যায় সম্পর্ক করে নাশ। 
গ্রামের মানুষ শুধাই কুশল দিয়ে আপন পরিচয়, 
সাত পুরুষের নাম শুধিয়ে কেউতো আমার হয়।
মুক্ত বাতাস খোলা আকাশ সবুজ ঘেরা মাঠ, 
গ্রামের মানুষ আমরা সবাই নাই কোনো ঝঞ্ঝাট।
তেমাথা কোনো পথের পরে মানুষের কোলাহল,
হাসিঠাট্টায় দিন চলে যায় বাঁধাই না কেউ গোল।
খুন-খারাবি, মার-দাঙ্গা পালালো গ্রাম ছাড়ি,
শান্ত গ্রাম, অনেক আরাম শহরে বাড়া-বাড়ি।
তাইতো বলি গ্রামের ছেলে গ্রামকে ভালোবাসি, 
সবুজ ঘেরা সবুজ ক্ষেতের আমরা গ্রামের চাষী।

ভুলেছ তুমি, আমি নয়

ভুলেছ তুমি আমি নয়

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এসেছি তোমার দ্বারে ! দাবিটা নিয়ে।
হারিয়েছি সব কিছু, তোমাকে দিয়ে।।
জন্মান্তর হয়ে তুমি, ভুলিয়াছ সব।
বাকরুদ্ধ আমি আজ, হারিয়েছি রব।।
অধিকার ছিল মোর, তোমার সমান।
কেন আজ লাঞ্চিত, আর অপমান?
চিনেছ যদিও তুমি, অচেনার ভান।
কেমনে রাখিবে তুমি, নিজ সম্মান?
সেদিনে ছিলাম মুই, তোমারই সাথি।
সরায়া ফেলিছ দূরে, মারিছ লাথি।।
কেমনে বুঝায় তোমায়, বন্ধনের মায়া।
সেদিনে ছিলে তুমি, আমারই ছায়া।।
পশুকুলে জন্ম মোর, কিসের কারণ।
তুমিও তো ছিলে সঙ্গী, করনি বারণ?
বড় আশা করেছিনু, উদর পূরণ।
হইবে তোমার দ্বারে, দিই দরশন।।
বিনিময়ে পদাঘাতে, ঠেলিলে দূরে।
উঠানেতে পড়ে তব, যায়নি সরে।।
অস্পষ্ট দেখি তোমায়, নয়নের জলে।
দুর্ভাগ্য সঙ্গী আমার, নিজকর্ম ফলে।।
করিতে পারিনা আমি, তোমারে দুশি।
দর্শন পেয়েছি আজ, হয়েছি খুশি।।
জন্মান্তরে পেলে তুমি, সুখেরই ঘর।
কর্মগুণে আজ আমি, তোমারই পর।।
অনাদরে নিপীড়িত, তোমারই কেউ।
ভুলিতে পেরেছে সাগর, নিজস্ব ঢেউ?
ভুলেছ তুমি মোরে, নব জন্মান্তরে!
চিরতরে থাক সুখী, প্রত্যাশা অন্তরে!!

শহুরে বাবু

শহুরে বাবু

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

শহুরে বাবু গৌরব করে , শহরে করি বাস,
গৈ-গাঁয়ের সব গেঁয়ো চাষী, কেটে মরে ঘাস।
আমি কেমন শহুরে বাবু, গর্ব করি তাই,
গেঁয়ো ভুত সব ব'কলমে, বিদ্যা পেটে নাই।
ধুলো গায়ে কাদা মাখা, থাকে বার মাস,
খালে, বিলে, মাঠে খাটে, গেঁয়ো গ্রামে বাস।
তাইতো তাদের ঘৃণা করি, ছোট-লোকের দল,
জঘন্য সব পেত্নীর বাচ্চা দেখতে অবিকল। 
নৌকায় উঠে বসেন বাবু নৌকা ডুবে ঘাটে, 
বাবু হলেন কাবু সেদিন বয়স অধিক ষাটে।
বিদ্যা ভারি ছিল বাবুর , সাঁতার ছিলনা জানা,
হাবু-ডুবুর জলটা খেয়ে, বালিশ হয় পেট-খানা।
শিক্ষার দম্ভ ভুলেন বাবু ভাবেন পড়ে জলে,
সাঁতার যদি থাকতো জানা, উঠে যেতাম কূলে।
কখনো ডুবে কখনো ভাসে, শহুরে বাবু কেমন?
মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়, তালটি ভাসে যেমন।
চিৎকার শুনে গেঁয়ো চাষি, ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে,
সাঁতার দিয়ে জাপটে ধরে ডাঙায় টেনে তুলে। 
একটা জুতো পায়ে বাবুর, একটা ভাসে জলে,
বুকের উপর টাই-টা ছিলো, ফেঁসেঁ গেল গলে।
গঙ্গার জল খেয়ে বাবুর, ওজন হল ভার,
ষাট কেজিতে ছিলেন বাবু, শত কেজি পার।
হোঁস ফিরে তার দম্ভ চূর্ণ, আপতকালিন দিনে,
গেঁয়ো ভুতেরা ছিল তাই, বাঁচলেন বাবু প্রাণে।

ক্ষণিকের ধনী

ক্ষণিকের ধনী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ক্ষণিক আগে ছিলাম আমি গ্রামের এক দুঃখী,
কপাল জোরে হয়েছি আজ সবার উপর সুখী।
আশায় আশায় সংসার গড়ি স্বপ্ন হল পাকা,
যেদিকে চায় ডানে, বামে টাকা আর টাকা।
পুকুর ভরা মাছের চাষ বাগান ভরা আম,
শস্য ক্ষেতের মাঝে মাঝে কাঁঠাল আর জাম।
দূরের মাঠে দেখছি যতো ধানের জমি সব,
গোপাল গঞ্জের মাঠের কথা গমের সাথে যব।
আইরি ক্ষেতের বেড়ি দিয়ে মুসুরি আর ছোলা,
মনের আনন্দে তুলবো ঘরে ভরে যাবে গোলা।
গোশালাতে গাভীর পাল লালচে, কালো, সাদা,
রাখাল আমার বড়ই ভাল, ডাকতো সবে হাঁদা।
মোড়ল বলে ডাকতো সবে গাঁয়ের লোক-জনে,
মাটিতে আর পা দাঁড়ায় না গরম ধরে মনে।
বিচার আচার করি ভাল ন্যায় বা অন্যায়,
সবাই বলে ন্যায্য বিচার সন্দেহ নাই তাই।
আম বাগানে গিয়ে দেখি পাড়ার এক ছোঁড়া,
আমায় দেখে ভয়েতে তার চক্ষু ছানা-বড়া।
রাগের বশে বিকট হলাম দিলাম কষে থাপ্পর, 
মাটির উপর আছড়ে পড়ে কান্না করে জোর।
কান্না শুনে জেগে দেখি আমার ছোট্ট খোকা,
নিজের হাতে ছেলে মেরে হলাম মস্ত বোকা।
কোথায় গেল জমিদারি কোথায় গেল টাকা?
ঘুম ভাঙতে চেয়ে দেখি আগের মতোই ফাঁকা!

আমরা মানুষ

আমরা মানুষ 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

এক মাটিতে জন্ম মোদের একই রক্তে গড়া প্রাণ,
এক কদমে চলবো মোরা করবো না কেউ অভিমান।
নিজ স্বার্থ ছাড়বো মোরা ভাই বোনেদের ভালবাসবো,
নয়ন জলে ভাসবোনা কেউ তুষ্টি হাসি সবে হাসবো।
পথেই জীবন পথেই মরণ রব মোরা তাদের পাশে, 
দুঃখীর দুঃখের ভাগী হব কষ্ট মোদের যত আসে।
হাভাতে আর রোগে শোকে কেউবা নিরাশ্রয়  অশ্রুপাতে,
হেন ভাবে রবে কেন, আমরা তাদের পাশে থাকতে? 
সবে মিলে করবো শপথ গড়বো জীবন মমতা দিয়ে,
আমরা সবাই মানব জাতি নবীন প্রবীণ ছেলে মেয়ে। 
হিন্দু মুসলিম জৈন খ্রিস্টান তাতে কি আর আসে যায়? 
একটি মায়ের সন্তান মোরা জাত বিচারে কাজ নাই।
দুর্নীতি আর সমাজবিরোধী মানব জীবন ছারখার,
সহানুভূতিয় বাঁধবো তাদের করবো জাতির সংস্কার।