Tuesday, 28 June 2016

ঘুমিয়ে আছে মা

ঘুমিয়ে আছে মা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নিশানা ওই রাঙা মাটির ভিতরে,
মা কি আজও ঘুমিয়ে চিরতরে?
এই বুঝি ডাকবে এবার আয় সোনামণি,
দুহাত বাড়িয়ে নিবে বুকের মাঝে টানি।
ঘুমায়োনা মাগো তুমি ঘুমায়োনা আর!
কতদিন পাইনি মাগো আদর তোমার।
ঘুমায়োনা মাগো আর দেখো ফিরে এসে,
নতুন মা এসে আজ তোমার জায়গায় বসে।
স্বপ্ন দেখে কাঁদি যখন তোমাকে মনে পড়ে!
নতুন মা মারে আর বলে মারবো আছড়ে।
বাবা হয়তো জেগে বলবে ওরে সোনামণি,
নতুন মায়ের কথা শুনে দেয় ধমকানি।
বুকে মরে কান্না মাগো ডুকরে চিত্ত ভিতর,
নতুন মায়ের কথায় বাবা আমার আজ পর!
নতুন মা বলে আমার জ্বলে যায় পিত্ত,
তোমার কথা শুনলে পরে উত্তপ্ত উন্মত্ত।
কোথায় মাগো দুধুবাটি কে খাওয়াবে দুধু,
ঘুম আসেনা রাতে আমার তোমার ভাবনা শুধু।


Monday, 27 June 2016

√ নিশুতি গাঙের মাঝি

নিশুতি গাঙের মাঝি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অথৈ গাঙের মাঝি আমি গাঙে ভাসায় নৌকা,
ছুটে চলে নৌকা আমার উজান ভাটায় বাইয়া।
ঢেউয়ের দোলে নৌকা দোলে বৈঠা হাতে একা,
ভাটিয়ালি গান গেয়ে যায় ভাটায় ভাসে নৌকা।
গাঙই আমার জীবন সাথি গাঙের জলে ভাসি,
দিন গড়ে যায় রাতের মাঝে তারার মুচকি হাসি।
ওই যে উঠে আবার ডুবে চন্দ্রসূর্য নদীর বাঁকে,
কুলুকুলু ঢেউ বলে যায় গান শুনাচ্ছ কাকে?
দিবারাত্রির মুখোমুখি লাঠির মাথায় নম্পবাতি,
সাঁঝের বেলায় জ্বালিয়ে রাখি জ্বলে সারারাতি।
নির্জন রাত অন্ধকারে ভয় শিহরণ কুলুধ্বনি,
রাত জাগরণে বসে নৌকায় একলা জাল বুনি।
মরাখেকো কুকুর শিয়াল ঘোরাঘুরি রাত্রিকালে,
হয়তো বুঝি ছিঁড়ে খাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে।
রাত-বিরেতে নদীর বাঁকে ভাঙে যখন পাড়,
ডুবু-ডুবু নৌকা আমার হাত-পা হয় অসাড়।
কাশবনে ঐ ঢালুপাড়ে নির্জন এই আঁধার রাতে,
বিড়াল নাকি কাঁদছে শিশু ভাটিয়ালির সাথে।
গা ছমছম! ভয় শিহরণ! বজ্রে হৃদয় বাঁধি,
নদীজলে শব ভেসে যায় ক্ষণিক পথের সাথি।
গাঙে ভাসি বারোটা মাস ভগবানের আশীর্বাদ, 
সংসার বাঁচাতে ব্যস্ত জীবন পাইনি সংসার স্বাদ

Thursday, 23 June 2016

আকাশের কান্না

আকাশের কান্না (b.k প্রকাশিত)

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ও আকাশ তোমার কান্নায় এত জল,
প্লাবিত পথঘাট সিক্ত করেছ ভূ-তল।
ফুরিয়ে যায় অশ্রুজল কাঁদবে কত আর,
পারিনা দিতে তোমার অশ্রুজলে সাঁতার।
ক্লান্তির প্রশ্বাস ধোঁয়া যায় উড়ে উড়ে,
মেঘেদের ঘোরাফেরা আকাশ চত্বরে।
ঝরে পড়ে ফুলদল ভেসে যায় জলে,
অশ্রুজল ফুরাবে নাকি এই বর্ষাকালে।
ঘুটর ঘুটরী ঝিমরে রান্না ঘরের চালে,
ফুলকুঁড়ি ঝুলে পড়ে কান্নার জলে।
সাজানো বাধবী লতা পড়েছে হেলিয়া,
মুর্ছা যায় টবের ফুল ফুটন্ত ডালিয়া।
স্তব্ধ কন্ঠসঙ্গীত মলীনে বৃক্ষ শাখায়,
তোমার কান্নায় বসে পাখিরা অসহায়।
ঠাঁই বসে থাকি আমি যেন এক প্রহরী
বারান্দায় টিনের চাল বাজে যেন ঠুংরি।
বন্ধ কর কান্না এবার বলছি বারবার,
দিবারাত্রি অশ্রুজল সহিব কত আর।
আকাশের রং হারায় ধরণী আঁধার,
কান্নার জল তোমার কত আছে আর।
কত প্রাণী নিরানন্দ তোমার কান্নায়,
গুচ্ছে পুত্তিকা জলে ভাসে অসহায়।

√ হয় কে উন্মাদ

হয় কে উন্মাদ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আমি নাকি উন্মাদ বলে সর্বজন,
বহুরূপী ধারণে কেউ হয় গুণীজন।
সুখের আসন গড়ি সুখী মত্ততায়,
রঙবেরঙের পরিধানে দেখি নগ্নতায়।
আতশকাচ খুলে দেখি সরিয়ে যবনিকা,
দৃশ্যমান বহিরাবরণ হৃৎ অশ্লীল আবর্জনা।
ধুলোবালি মলিয়ে গড়ায় রাস্তায় যখন,
শুধাওনি কুশল মোর কোনো একজন।
পথ কুড়ে তুলেছিনু তেলেভাজা হাতে,
কুকুরেরা কাড়ি নিল শিয়ালদহে ফুটপাতে।
চোখে দেখে যায় সবে উন্মাদ আমি,
জনবহুল ভীড়ে শুধু দেখে অন্তর্যামী।
শান্তির ঠাঁই শুধু উন্মাদনা জীবন,
হারিয়েছ সম্পদ গর্বে সততার মূলধন।
ক্লান্তির অবকাশে ঠাহরি দাঁড়িয়ে,
হরষিত হর্ষধ্বনি বাজে চতুর্দিকে।
আঙুল তোলে মোর পানে করে পরিহাস,
ধ্বনিত বাজে কর্ণে হাসির উল্লাস।
ওদের হাসিতে হাসে মোর অন্তর,
চেপে রাখি হাসি তবু বুকের ভিতর।
তবু সাধ জাগে মন থাকিতে উন্মাদ,
পাইবে কি খুজে মোর জীবনের অনুবাদ?
ওদের সাথে মোর এইতো তফাৎ,
বলিতে পারে ওরা, হয় কে উন্মাদ?


Monday, 20 June 2016

মেঘ কন্যা

মেঘ কন্যা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কোথায় আছে মেঘকন্যা
কোথায় তার দেশ।
কেমন করে বৃষ্টি ঝরায়
উড়িয়ে কালো কেশ।।
ওই যে আসে মেঘ কন্যা
বর্ষা আষাঢ় মাসে।
পুষ্পকলি যায় যে ভিজে
পাপড়ি পড়ে খসে।।
প্রজাপতির রঙ ধুয়ে যায়
তারই নয়নজলে।
ভরিয়ে দিলে সবুজ গাছে
রঙিন সাদা ফুলে।।
মাধবীলতা যায় যে ঝুলে
বৃষ্টি ঝরা ভারে।
মেঘ কন্যা লুকিয়ে আছে
মেঘের আড়ে আড়ে।।
খসে যাওয়া গুল পাপড়ি
যায় যে জলে ভেসে।
পদ্ম ফোটা দিঘীর জলে
পদ্ম কুসুম হাসে।।

Sunday, 19 June 2016

আমি একা নাকি?

আমি একা নাকি?

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নাইবা সাথে থাকলে তুমি
এই নিশুতি রাতে।
জানালা পারে সুবাসে ঐ
হাসনাহেনা সাথে।।
রাত জাগরণে চন্দ্র তারা
বৃক্ষাগ্রে জোনাকি।
জাগে ঐ পেঁচক পেঁচকি
আমি একা নাকি?
মৌগন্ধে বাতাস মাতাল
ফুলের সুবাসে।
ভোরের পাখি গান গানে
বসবে কাছে এসে।।
জমিয়ে রাখা মনের কথা
কব রাতের সাথে।
তোমার কথা ভুলে যাবো
এই নিশুতি রাতে।।
চন্দ্রালোকে রাতের সোহাগ
পাখির গান শুনে।
ভুলে যাবো তখন তোমায়
পড়বেনা আর মনে।।

Thursday, 16 June 2016

ফিরে আসা দিনটি

ফিরে আসা দিনটি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আলোছায়ার হাসিকান্না
বাদল দিনের বেলা।
ফিরে পেলাম দিনটি তবু
তুমি তো এলেনা।।
জীবন নদীর তীরে একা
হয়তো পাবো দেখা।
সকাল দুপুর বিকেল গেল
সিধা সাঁঝের বেলা।
আছ কিনা বলতে পার
মেঘের আড়াল হয়ে।
তোমার অপেক্ষায় চেয়ে চেয়ে
সময় গেল বয়ে।।
এমন দিনে ভাসিয়েছিলে
জীবন নদীর ভেলা।
না বলে যাও একটি কথা
ফিরে যাবার বেলা।।
তোমার আমার হৃদয় মাঝে
নিয়তি সারা বেলা।
জীবন নিয়ে খেলছে শুধু
পুতুল বিয়ের খেলা।।

Wednesday, 15 June 2016

নিপীড়িত ধরণী

নিপীড়িত ধরণী 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

নিপীড়িত ধরণী আজ করে দাও শীতল,
বৃষ্টি তুমি ঝরে যাও দিবারাত্রি অবিরল।
গর্জে ওঠো ইচ্ছা যত ফাটিয়ে আকাশ, 
ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও হোক নব উদ্ভাস।
ধুয়ে দাও আবর্জনা পথের ধুলোবালি,
নির্মল হোক ধরণীটা বাগের কুসুমকলি।
হৃদয় প্রাঙ্গণ জুড়ে শয়তান করে বাস,
বজ্রাঘাতে গুঁড়িয়ে দাও পুরা কর আশ।
ধ্বংস কর দুষ্টু আত্মা পাপের খুঁটিনাটি,
নবরূপে আসবে ফিরে দূষণ মুক্ত খাঁটি।
লালে লালে চলছে খেলা হোলি অনর্গল,
অশ্রুজলে মুছে দাও মাতৃভূমির আঁচল।
ফিরে এসে দেখব আবার নতুন সূচনায়,
ওঁজলা মুক্ত হবে খুলে যাবে নব অধ্যায়। 


Tuesday, 14 June 2016

পক্ব কথা

পক্ব কথা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রঙে ঢঙে যায় কি চেনা
কাঁচা নাকি পাকা।
তাল পাকলে কালো রঙে
চুল কেন হয় সাদা।।
বয়স পাকলে কেমন করে
ভাঙে দাঁতের বেড়া।
একটি বলতে দুটো ফাউ
যায়না বচন ঘেরা।।
সুপারি পাকলে শক্ত কেন
পাকলে নরম আতা।
গাব পাকলে হলুদ বরণ
গুপ্তে পাকে সফেদা।।
তুঁত পাকলে কালো কালো
আরও কালো জাম।
তবে কেন পাকলে এমন
হরেক রঙে আম।।
দিন পাকলে মাসের গঠন
মাস পাকলে বছর।
ঘুমের ঘরে রাত পোহালে
দেখবে কখন ভোর।।
মেঘ পাকলে বৃষ্টি ঝরায়
গর্জে আকাশ ফাটা।
কেমন করে পূর্ণিমা রাতে
চাঁদ পাকলে গোটা।।

Thursday, 9 June 2016

বঙ্গবাসী

বঙ্গবাসী 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

স্বর্গ মোদের গর্ব মোদের সবার উপর সেরা,
গাঁ ছেড়ে যায় মাঠপ্রান্তে সবুজ গাছের বেড়া।
চন্দ্র তারায় গগন শোভন ভূমি শোভন ফুলে,
সে তো আমার মাতৃভূমি নীল গগনের তলে।
পি-উ পি-উ পাপিয়া গাহে কুঞ্জবনের আড়ে,
কোথায় যেন ঘুঘুর ঘু লুকিয়ে ঝোপঝাড়ে।
ছন্দে-ছন্দে গুন-গুন ভ্রমর পুষ্প আলিঙ্গনে, 
ফুলের উপর মৌমাছিরা অস্থির মধু পানে। 
পদ্মপাতায় দাদুর বিরাজ ফড়িং ফুলে ফুলে, 
লতাপাতায় সাপ সাপিনী কালো গম্ভীর জলে।
কোথায় পাবে জগৎ জুড়ে বাংলা ভূমির মতো।
সোনার ফসল সবুজ ক্ষেতে দৃষ্টির নাই অন্ত,
বাংলা ভূমির মানুষরে ভাই বাংলার বোল বলি,
মোদের বাংলা গর্ব মোদের মিলেমিশে চলি।
আমরা নিখাদ বঙ্গবাসী তাইতো ভালোবাসি,
সন্ধায় বসে গল্পের আসর চাতালে ঠাঁসাঠাসি। 
কোথাও ঢালু উঁচুনিচু কোথাও জলাভূমি,
কোথাও পাড়ে শস্য ভরা চাষের উর্বর জমি।
নির্জন কোন মাঠের মাঝে বাঁশের বাঁশির সুর,
নীরব রাতে বাতাসে ভাসে দূর হতে বহুদূর। 
একই পথের পথিক মোরা থাকি পাশাপাশি, 
কে-বা ছোটো কে-বা বড় আমরা বঙ্গবাসী। 


Friday, 3 June 2016

বিচ্ছেদ

বিচ্ছেদ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হে বিধাতা তুমি তো সবই পারো,
শীতেল পরশে গড়িলে পুতুল অগ্নিতেও।
রূপান্তর কর সৃজন শীতলায় মন,
গড়ে উঠুক সুখময় দাম্পত্য জীবন।
বুদ্ধি বিবেক সব দিয়েছ দিয়ে যতো ধাতু,
হৃদয় গড় অগ্নি-জলে সব যেন ফালতু।
কেউ বলে সঙ্গিনী কেউ অর্ধাঙ্গিনী,
অনুগ্র হৃদয় কখনো হয় তেজস্বিনী।
স্বীয় হস্তে ভাঙে ঘর ভাঙে শাঁখা চুড়ি,
কপালের রাঙা দাগ মুছে তাড়াতাড়ি।
ললাটে নাই সবে করে আহা মরি,
নিমেষেই ভাঙে দিয়ে তুচ্ছজ্ঞানে তুড়ি।
লাগে যদি মনেমনে দুই মনের টক্কর,
বরফ গলেনা তবু ভাঙে সংসার ঘর।
বেষ্টনীর সীমা ছাড়া পড়ে কারো পা,
তবু দোহে দুষি তারা লিখে যায় বিধাতা।
দুটি মনে বাঁধে বাসা বড় কষ্ট করে,
ক্ষণিকে ভেঙে যায় নিমেষের ঝড়ে।