Tuesday, 18 August 2015

বাস্তব সত্যি


বাস্তব সত্যি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ভালবাসার নেশায় ঘুরি অবুঝের এই মনে,
দিন চলেনা বাবা মায়ের আমি চলি মান্যে।
পকেট আমার খেলার মাঠ তবু ভালবাসি,
চিরদিনের মিথ্যা কথায় ভুলে যায় প্রেয়সী।
ভাবীকালের চিন্তা ভাবনা দূরে যায় সরে,
প্রেম স্রোতে সাঁতার দিই ভাবী কথা পরে।
ভালবাসার ঘর বেঁধেছি সুখ শান্তির আশায়,
দিনরাত্রি ঝগড়াঝাঁটি পড়শী লোকে থামাই।
আয়ের সন্ধান করব আগে প্রেম করব তবে,
মিথ্যা কথা বলছে সবাই অর্থ কি আর হবে?
মিঠাই রসে পিঁপড়া নামে উঠতে নড়েচড়ে,
ভাবেনি সে আগে কখনো উঠবে কেমন করে।
আদি কথা শুনে আসি পয়সাতে প্রেম নয়,
টিকতে পারে ভালবাসা তাই কখনো হয়?
প্রেম জ্বলনে জ্বলে মরি সবারে করি বারণ,
পয়সা ছাড়া প্রেম জীবনে পথেই হবে মরণ।

Monday, 17 August 2015

পারের ঘাটে অনুতাপী


পারের ঘাটে অনুতাপী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ন্যায় অন্যায় করি যদি সমীপে সবার,
নই আমি একেবারে অযোগ্য ক্ষমার।
কুড়োকুড়ি মারামারি তোমাদের সনে,
করেছি অবুঝে সব রেখোনা আর মনে।
শৈশবের কালে হয়তো করেছি অবুঝে,
ক্ষমা করে দিও ভুল প্রস্থানের কালে।
পাই যেন ঠাঁই আমি সবার আশির্বাদে,
ফুলের গন্ধ ভরা মুক্ত বাতাসের সাথে।
টিপটিপ হাসি দিব নীল অঙ্গনের গায়ে,
ইশারায় দিব ডাক প্রীতির তারা হয়ে।
আসি যদি ফিরে পূনঃ তোমাদের মাঝে,
চিনে নিও রেখো মোরে হৃদয়ের ভাঁজে।
সময় বহিয়ে যায় কুলে তরী ভিড়ে,
খুশি মনে দাও বিদায় যাব পরপারে।
কাছে এস সবারে দিই প্রীতির চুম্বন,
ভুলিবেনা দাও একবার আমারে বচন।
ধর্মকথা দিয়ে কানে মুখে দিও জল,
কুচানলের আত্মা যাবে হইয়া শীতল।

Wednesday, 12 August 2015

শেষ দেখা

শেষ দেখা 


আব্দুল মান্নান মল্লিক


পথচলা বন্ধু একটাই মোর সাথে,

পথের শেষপ্রান্তে যষ্টি মোর হাতে।

ব্যর্থ সংসার নিয়ে কি আর হবে!

ঘুরে বেড়াই পথে পথে জীবনের প্রাক্কালে।

চলতে চলতে পথ, নিয়তির একি খেলা,

অদূরে যায় দেখা কুম্ভের মেলা,

চক্ষু ফিরাতে দেখি, পথের এক ধারে,

ছিন্ন শুভ্র ভূষণে, বৃদ্ধা এক নারী পড়ে।

মনের কাছে প্রশ্ন করি,

কেগো তুমি, বৃদ্ধা নারী?

হইতো অপেক্ষায় পারের ঘাটে,

করিয়া অতিক্রম পথ, পৌঁছে অধিক ষাটে।

নিস্তেজ হয়ে সর্বাঙ্গ, বাকশক্তি হারিয়ে,

অগণিত জনস্রোত, আসা যাওয়ার ভীড়ে।

দেখিয়া না দেখার ভান করে,

ডিঙিয়ে যায় যে যার কাজে ও ঘরে।

পারিলামনা যেতে সবার সাথে,

ধীরপায়ে যায় বৃদ্ধার কাছে।

শীর্ণ দেহখানি, আচ্ছাদিত সর্বাঙ্গ,

নিয়তির টানে প্রস্থানোদ্যত।

দেখিবারে নাই কেহ, মুখে দিতে জল,

পুণ্যস্থান? না, হেথা হেনস্থা দুর্বল।

ধৌত করে হস্তপদ গড়িছে জল মাটি বেয়ে,

দিতে পারেনা জীবন কেউ, ফোটা জল দিয়ে।

ভিজাইয়া মাটিতে ধুতির আঁচল,

নিঙড়ায়ে মুখে দিতে জল!

একি! চেনা সেই মুখ! ছন্দা আমার!

তোলো মুখ, কথা বল একবার!

নাই ছন্দা, আর নাই, ঐ আকাশে মিলাই!

ছিলো আজও স্মৃতি মোর, তোমার সিঁথাই।

চেয়েছিল বলিতে কিছু সময় বহিয়া যাই,

দেখা হল, হলনা কথা, যাবার বেলায়!

দুই পলক দেখেছিল মোরে,

পড়েছিল জল অশ্রু গড়ে।

আটত্রিশ বছর অগোচরে করেছ বহন,

মুছে দাওনি স্মৃতি মোর, ধন্য নারী জীবন।






সব্জির হাটে সস্তা মানুষ


সব্জির হাটে সস্তা মানুষ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

প্রাতের পানাহারের পরে,
বেরিয়েছি সব্জির বাজারে।
এইযে রামুদা কোথায় চললে?
এইতো ভাই, আশি টাকা ধরিয়ে দিয়ে হাতে গিন্নী বলে,
তালেগোলে সব্জি এনো, আজকের দিনটা চলে।
সামনে মানুষের ভীড় পথের ধারে,
রামুদা ভীড় ঠেলে ঢুকে যায় ভিতরে।
গলা বাড়াইয়া দেখি, একি!
কিল ঘুষি আর লাথি।
পড়ে পড়ে খাচ্ছে মার জানিনা কে ওই ব্যাক্তি?
হঠাৎ দেখি, রামুদা লাগায় দুই ঘুষি এক লাথি।
বাহিরে জিগাইলাম রামুদারে,
পূর্ণ ঘটনা শুনিবারে।
রামুদা বলে জবাবে,
জানিনা, কেন মারিছে সবে।
দেখাদেখি দুই ঘুষি এক লাথি,
দিয়ে যায় নইলে হবে দুর্নীতি।

Tuesday, 11 August 2015

বিভেদের মাঝে

বিভেদের মাঝে 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

মানুষে মানুষে কর বিভেদ মোচন।
করিতে সক্ষম যদি পশুরে পালন
পশুদের রাখ কত আদর যত্ন করে
নিজ জাতি মানব কেন থাকে পড়ে দূরে?
ধরাধামে মানুষ সেতো জাতি আপনার,
ভালবেসে নাওনি কাছে পশুরও সমান।
পশুপক্ষি মানব জাতি ফারাকে অনেক,
গেয়ে যায় গান মুখে মানুষে মানুষে এক।
তবু কেন সমাজে এত ভেদাভেদ,
ছোঁয়াছুঁয়ি কুসংস্কার মেটেনি প্রভেদ।
আকাশের জল মিশে পুকুরের জলে
হবে কি ভাগাভাগি গুরুর বাহুবলে?
সাদাসিধে মানুষগুলো করেছে বিশ্বাস,
সুযোগে করেছ তাদের একতার বিনাশ।
ভাঙে যারা সভ্য সমাজ যায়না তাদের চেনা,
বুলিয়ে হাত সবার গায়ে দিয়ে যায় সান্তনা।
ধর্মের ভয় দেখায় করিতে উপার্জন,
ভাঙনের মূলে আছে এরাই কারণ।
মুছে ফেল গ্লানি ঘুচাও মনের আঁধার,
ভুলে যাও কুসংস্কার কর নতুন সংস্কার।

Saturday, 8 August 2015

চাওয়া

চাওয়া

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিবেক দেখায় পথের আলো দ্বন্দ্ব বাধে মনে,
কেউবা করে চোর ডাকাতি কেউবা মরে ধনে।
ধন তৃষ্ণাই হৃদয় জ্বলে ঘুম আসেনা রাতে,
মানিক চুরির আশায় থাক মরবে সর্পাঘাতে।
সাগর জলে ঝাঁপিয়ে পড় মোতি পাবার আশ,
লোভের সীমা ছাড়াও যখন হয়'যে প্রাণনাশ।
জ্যোতিই গড়া জন জীবন লাগে যদি কাজে,
মণি রতন খুজবে তোমায় ধরা দিবে নিজে।
সুখের বাগান অন্তর মাঝে ভাবছো কেন দূরে,
পেয়েছ কি সুখের সন্ধান সারাটা জগৎ ঘুরে?
বৃথাই বসে ভাবছ মিছে কোথায় সুখী জীবন,
খুজলে পাবে দিব্য দৃষ্টিই গুপ্ত মনের কোণ।
সুখের আশায় সময় গেল জীবন গেল ক্ষয়, 
দিনের শেষে থাকবে নিজের কর্ম আপন হয়।
অন্তর জ্যোতি জ্বলবে যখন হবে সরল মন,
দীনের মাঝে বিলিয়ে দিবে আপন রত্নধন।

Wednesday, 5 August 2015

√ দাও আমার অধিকার

দাও আমার অধিকার

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কতটুকু এনেছিলে. ছিল যত অধিক তাহার?
তবে কেন বঞ্চিত আমার অধিকার?
ভাগ করে দাও সবার সমান সমান,
সহে গেছে দুর্বল তোমাদের অপমান।
দিনে দিনে করেছ তোমরা গরীবের লুট,
ছিনিয়ে খেয়েছ যার সম্মুখে তুলেছ ঢেকুর।
তোমাদের সুখ আর গরীবের হাহাকার
সহে গেছে নিরবে তোমাদের অত্যাচার।
গ্রীবা উঁচায়ে দেখিয়ে দম্ভ কর আস্ফালন,
নির্মমতায় করেছ ভোগ কাঙালের ধন।
ধরাধামে প্রবেশি দেখি আমার সব ফাঁকা,
দিবারাত্রি ঘূর্ণন গতি একদিকের চাকা।
ধনকুবের ধনীর দুলাল হও হুশিয়ার,
নইলে অবাধে ধরবো তীক্ষ্ণ তলোয়ার।
অধুনা ঘুরিবে চাকা চতুর্দিকে সমান,
জাগিয়া উঠিবে এবার দুর্বলের মান।


Tuesday, 4 August 2015

স্মৃতির আড়ালে তুমি


স্বরচিত কবিতা

স্মৃতির আড়ালে তুমি

গেয়ে যায় গান আমি তোমার কবিতায়,
খাতা কলম ছেড়ে দিয়ে রয়েছ কোথায়।
তুমি কবি আমি গায়ক ছিলাম দোহে জুটি,
ফেলে গেলে একা মোরে তুমি নিলে ছুটি।
বিলিয়ে দিই গান আমি তোমার কবিতার,
ভেসে যাবে বাতাসে সুর কম্পনে বারবার।
এপার অপারে মোরা দুজনের ব্যবধানে,
বাতাসে বহিবে সুর বলবে তোমার কানে।
শুরুতে সমাপ্তি তোমার কাব্যগীতি গাথা,
বাকিটা কি থেকে যাবে মানব জীবন কথা?
করজোড়ে মাগি আমি কাছেতে তোমার,
সুপ্তি কালে দিও তোমার বাকি কবিতার।
আড়াল হতে দেখ মোরে করিও আশির্বাদ,
নির্মাণ হবে নতুন ভূবন সঙ্গীতের আস্বাদ।
মুছিবে না কোনোদিন আর স্মৃতির ভূবন,
বাতাসে ভাসবে তোমার কবিতার গুঞ্জন।
অশ্রুজলে ভাসবো তবু গাইবো সারাক্ষণ!
কবিতার স্মৃতি তোমার প্রীতির সম্ভাষণ!

Sunday, 2 August 2015

বন্যা বনাম বৃষ্টি ( ১৯৭৮ )

বন্যা বনাম বৃষ্টি ( ১৯৭৮ ) 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হাঁক পাড়ে দৌড় দৌড় ঘরবাড়ি ছেড়ে,
বাঁধভাঙা গাঙ-জল ওই আসছে তেড়ে।
ক্ষণিক পরে উঠান ভরে পথের উপর জল,
কেউবা গুচ্ছে লোটা কম্বল যা-কিছু সম্বল। 
কানু বাবুর পুকুর যেই ছিলো পথের ধারে,
আচম্বিতে এক পলকে সেটাও গেল ভরে। 
যতই বাড়ে ভয় আতঙ্ক অধিক বাড়ে জল,
কেউ কাঁদে কেউ বাঁধে পুঁটলি বৃষ্টি অনর্গল। 
ছুটোছুটি দৌড়াদৌড়ি কেউবা কোমরজলে,
কেউবা সাঁতরে জলে ভাসে ভিটামাটি ফেলে। 
ইস্কুল ঘরের ছাদে ভিজে কেউবা বৃক্ষ শাখে,
প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত নিজের কে কাহারে দেখে।
বন্যার জলে বৃষ্টির জলে সর্বনাশার খেলা,
ঐ দেখা যায় জলে ভাসে নরু ভায়ের চালা।
গোঁজের গরু দড়ি ছিঁড়ে ছুটে যে যার মতো, 
বন্যাজলে বাঁশ বাগানে লাশ বেঁধেছে  কতো।        
গাঙের জলে কোমরজলে মানুষ অনাহারে, 
কারো বোঁচকা শীর্ষদেশে ভাবতে জল বাড়ে।
আছড়ে পড়ে গাঙের জল মাথায় জলধর, 
জলস্রোতে উপড়ে পড়ে শ্যামলালের ঘর।
বট গাছটি ছিল যেথায় বাঁধের কোল ঘেঁষে, 
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হল জলের তলদেশে। 
মরণ তথ্য মাথার পরে কাক পাখিদের ডাক,
জুটলো যত বিপদ্দশায় গাঙ চিলেদের ঝাঁক।
নাইরে বাড়ি নাইরে ঘর নাইরে পরিত্রাণ, 
জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে বড় বড় দালান।
গোগোঁয়ানি শব্দ গম্ভীর বন্যার ঘোলা জলে,
ভেসে গেল দৃশ্য মাঝে ছেদির ছোট ছেলে।
বুড়ো বুড়ি কাঠের গুঁড়িয় জলে ভেসে যায়, 
বউ বাচ্চা নিয়ে বলাই কলা গাছের ভেলায়।
সাঁতরে কারো প্রাণ বাঁচুয়া কারো প্রাণ যায়,
মরা মানুষ ভাসে জলে শকুনে ঠুকরে খায়।
জলসোতে শব শৈশব জলে ভাসে অদূরে,
ঘূর্ণিপাকে মাথার উপর ঝাঁকে শকুন উড়ে।
মাতৃস্নেহ করুণা অসীম ঘটনা বন্যা কালে, 
মৃৎপাত্রে ভাসিয়ে ছেলে নিজে ডুবে জলে।