বন্যা বনাম বৃষ্টি ( ১৯৭৮ )
আব্দুল মান্নান মল্লিক
হাঁক পাড়ে দৌড় দৌড় ঘরবাড়ি ছেড়ে,
বাঁধভাঙা গাঙ-জল ওই আসছে তেড়ে।
ক্ষণিক পরে উঠান ভরে পথের উপর জল,
কেউবা গুচ্ছে লোটা কম্বল যা-কিছু সম্বল।
কানু বাবুর পুকুর যেই ছিলো পথের ধারে,
আচম্বিতে এক পলকে সেটাও গেল ভরে।
যতই বাড়ে ভয় আতঙ্ক অধিক বাড়ে জল,
কেউ কাঁদে কেউ বাঁধে পুঁটলি বৃষ্টি অনর্গল।
ছুটোছুটি দৌড়াদৌড়ি কেউবা কোমরজলে,
কেউবা সাঁতরে জলে ভাসে ভিটামাটি ফেলে।
ইস্কুল ঘরের ছাদে ভিজে কেউবা বৃক্ষ শাখে,
প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত নিজের কে কাহারে দেখে।
বন্যার জলে বৃষ্টির জলে সর্বনাশার খেলা,
ঐ দেখা যায় জলে ভাসে নরু ভায়ের চালা।
গোঁজের গরু দড়ি ছিঁড়ে ছুটে যে যার মতো,
বন্যাজলে বাঁশ বাগানে লাশ বেঁধেছে কতো।
গাঙের জলে কোমরজলে মানুষ অনাহারে,
কারো বোঁচকা শীর্ষদেশে ভাবতে জল বাড়ে।
আছড়ে পড়ে গাঙের জল মাথায় জলধর,
জলস্রোতে উপড়ে পড়ে শ্যামলালের ঘর।
বট গাছটি ছিল যেথায় বাঁধের কোল ঘেঁষে,
জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হল জলের তলদেশে।
মরণ তথ্য মাথার পরে কাক পাখিদের ডাক,
জুটলো যত বিপদ্দশায় গাঙ চিলেদের ঝাঁক।
নাইরে বাড়ি নাইরে ঘর নাইরে পরিত্রাণ,
জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে বড় বড় দালান।
গোগোঁয়ানি শব্দ গম্ভীর বন্যার ঘোলা জলে,
ভেসে গেল দৃশ্য মাঝে ছেদির ছোট ছেলে।
বুড়ো বুড়ি কাঠের গুঁড়িয় জলে ভেসে যায়,
বউ বাচ্চা নিয়ে বলাই কলা গাছের ভেলায়।
সাঁতরে কারো প্রাণ বাঁচুয়া কারো প্রাণ যায়,
মরা মানুষ ভাসে জলে শকুনে ঠুকরে খায়।
জলসোতে শব শৈশব জলে ভাসে অদূরে,
ঘূর্ণিপাকে মাথার উপর ঝাঁকে শকুন উড়ে।
মাতৃস্নেহ করুণা অসীম ঘটনা বন্যা কালে,
মৃৎপাত্রে ভাসিয়ে ছেলে নিজে ডুবে জলে।