Wednesday, 4 May 2022

চাওয়া

চাওয়া

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বিবেক দেখায় পথের আলো দ্বন্দ্ব বাধে মনে,
কেউবা আশে মর্মপীড়ায় কেউবা মরে ধনে
ধন তৃষ্ণাই অন্তর দহন ঘুম আসেনা রাতে,
মানিক চুরির আশায় থাক মরবে সর্পাঘাতে।
সাগর জলে ঝাঁপিয়ে পড় মোতি পাবার আশ,
লোভের সীমা ছাড়াও যখন হয়'যে প্রাণনাশ।
জ্যোতি সৃষ্ট জীবনটা এই লাগাও যদি কাজে,
মণি রতন খুজবে তোমায় ধরা দিবে নিজে।
সুখ যে কাছে হৃদয় মাঝে ভাবছ মিছে দূরে,
পেয়েছ কি সুখের সন্ধান সারাটা জগৎ ঘুরে?
বৃথাই বসে ভাবছ মিছে কোথায় সুখী জীবন,
খুজলে পাবে দিব্য দৃষ্টিই গুপ্ত মনের কোণ।
সুখের আশায় সময় গেল জীবন গেল ক্ষয়, 
বৃথাই গণনা সুখ কামনায় নিজের পরাজয়
অন্তর জ্যোতি জ্বলবে যখন হবে সরল মন,
দীনের মাঝে বিলিয়ে দিবে আপন রত্নধন।

Monday, 25 April 2022

বলবে কাকে মা

বলবে কাকে মা


আব্দুল মান্নান মল্লিক



বলবো কি আর কালো কোকিলা তোকে,
লজ্জা নাই তোর আলতা দুটি চোখে ? 
সব পাখিরা বাসা বুনে বিষন্নে তুই ডালে,
বছর ঘুরে আসিস ফিরে সুখ বসন্তকালে।
বৃথাই জনম জীবনটা তোর কুহু কুহুই সার
কাকের বাসায় অণ্ড দিলি বাচ্চা হবে কার?
পরের বাসায় অণ্ড দিয়ে তাইরে নাইরে না,
বলতো শুনি নিজের বাচ্চা বলবে কাকে মা?
মাতৃভক্তি স্নেহমমতা জানিস কি আর তুই,
জনম গেল ভবঘুরে পেলিনা আর কিছুই 
দেশ বিদেশ ঘুরলি কতো আপন চিনলি না
কোথায় তোর বসত বাড়ি আসল ঠিকানা? 
ছোট্ট পাখি বাবুই চড়ুই করে হাসি-ঠাট্টা 
ঝড়ঝাপটায় উল্লঙ্ঘিত বৃষ্টিয় ভিজে গাটা
ধ্যান মগ্নে প্রহর গুণিস সারাটা জীবন ধরে 
বৃক্ষশাখে জীবন গেল ঠাই নাই তোর ঘরে 

Saturday, 9 April 2022

মাটির গাঁয়ে

মাটির গাঁয়ে 


আব্দুল মান্নান মল্লিক


ধুলো ভরা রাস্তার গাঁয়ে কাদা মাটির ঘর,

আদুড়ে আহ্লাদিত শিশু ধুলোর উপর।

মুঠোমুঠো সাজায়ে ধুলো মাটির খোলায়,

কখনো ছড়িয়ে রাস্তায় কখনো মাথায়।

খড়ের ছাউনি ঘর কোথাও পাশে টালি,

কোথাও বা ভাঙা ঘর পড়ে আছে খালি।     

থাপ্পড়ের ছাপ কারো দেওয়ালের গায়,

গোময় দণ্ড কারো আঙিনায় শুকায়।ছু

টোছুটি বালকেরা কি জানি কি খেলায়, 

এ উহারে করে তাড়া ছুটতে আছাড় খায়।

নাম না জানা খেলা, চোর পুলিশের দৌড়, 

এ উহারে বলছে ধরে বেটা পাক্কা চোর।

বটবৃক্ষ ছায়াতলে কাঁচা বাশেঁর মাচা,

কেচ্ছার ভিড় জমায় প্রবীন রহিম চাচা।

বিদ্যাহীনে কেচ্ছার ঝুড়ি রহিম চাচার,

নিত্য নতুন কথা যোগায় বড় মজাদার।

রাস্তার ধারেতে ছেদির মুদির দোকান,

বেচা কেনা করে আর খায় জর্দা-পান।

গড়ে পড়ে পিক তার ঠোঁটের কোণে,

নিচ্ছে বেশী দিচ্ছে কম দাঁড়ির ওজনে।

খক খক কাসিতে হাতে হুঁকায় কানাই,

সাধ্য দমে আগুন জ্বলে হুঁকার মাথায়।

ধোঁয়া ছেড়ে কথা বলতে চক্ষু হয় লাল,

কখনো বা অশ্রু গড়ে ভিজে তার গাল। 

ফেরিওয়ালা বেচে গাঁয়ে হরেক খেলনা,

উৎকটে মায়ের কাছে ছেলেদের বাহানা। 

হাঁকিয়া চুড়ি ওয়ালা চুড়ি চায় ডাকে,

নববধূ উঁকি মারে জানালার ফাঁকে।

নুন-ঝুরি ডাক পাড়ে গাঁয়েতে কোথা,

চাল্ ধানের বাটি হাতে ছেলেরা সেথা।

ছেলেদের ভিড় জমে নুন-ঝুরির আশে,

মায়েরা দাঁড়ায় দূরে পাঁচিলের পাশে।

নববধূ ঘরে রয় ঘোমটায় বদনখানি, 

খোঁজ খবরে মাটির গাঁয়ে শশ্রূ গৃহিণী। 

দিবাবসানে হয়রানি জল ছাড়েনা হংস,

কেউ খুজে পোলাপান কেউ গোবৎস। 



Monday, 25 October 2021

চলতি পথে থমকে দাঁড়ায়

চলতি পথে থমকে দাঁড়ায় 


আব্দুল মান্নান মল্লিক 


কেন মন ভাঙল যে আজ তাতো জানিনা, 

লিপিতে মোর বাক্য হারায় মনে আসে না। 

আকাশ ছাওয়া মেঘের ঘটা আঁধার কালো, 

হারিয়ে গেছে প্রভাতকালের সোনালী আলো। 

ব্যস্ত মানুষ পরনিন্দায় ভালো কথায় কান মেলেনা।। 

কেন মন ভাঙল যে আজ তাতো জানিনা, 

লিপিতে মোর বাক্য হারায় মনে আসে না। 

চাতাল কোনো পথের ধারে নয়তো চায়ের দোকান ঘরে,

দিন কেটে যায় নেশার আড্ডায় মারদাঙ্গায় নিজের ঘরে।

উস্কানিতে কর্তা মশাই, আপদ কালে পাশে থাকেনা।। 

কেন মন ভাঙল যে আজ তাতো জানিনা, 

লিপিতে মোর বাক্য হারায় মনে আসে না। 

থমকে গেছে লিখতে কলম অশ্রুজলে খাতার পাতা,

বিষব্যথা মোর অন্তর কক্ষে বলতে ভয় হয় নীতিকথা। 

চিত্ত বনের অগ্নিদাহ লোকের সামনে বলতে মানা।। 

কেন মন ভাঙল যে আজ তাতো জানিনা, 

লিপিতে মোর বাক্য হারায় মনে আসে না। 





Saturday, 5 June 2021

সেই ছোট্ট শিশু

সেই ছোট্ট শিশু 


আব্দুল মান্নান মল্লিক 


সেই ছোট্ট শিশু পিছুপিছু হাতটি টেনে ধরে,

নীরব কান্নায় চিত্ত ভিজে পথ যে অনেক দূরে! 

হাত ছাড় হাত ছাড় বন্ধু ডাক দিও না এসে,

চাইলে কি আর ফিরতে পারি বন্ধু তোমার দেশে?

ইতিকথার পুষ্পমাল্য কেউবা গেছে ঝরে, 

একটা দুটো শুকিয়ে সুতোয় কেউবা আছে ধরে।

স্মৃতিগুলো কাঁদায় মোরে দিন যত যায় চলে।

শুকনো ফুল কি বাঁচবে আবার ডুবিয়ে রাখলে  জলে?

সেই ছোট্ট শিশুর ছুটোছুটি উঠান শিউলি তলে,

অস্পষ্টে দেখি কখনো ফিসফিস কথা বলে।

কালের বোঝা টানতে টানতে ফেলে আসা দূরে,

পিছু ছাড়ে না স্মৃতি মোরে খাচ্ছে কুরে কুরে!

হাত-পা সব অসার হল সাঙ্গ করি খেলা, 

বৃথাই বোঝা মাথায় নিয়ে বইছি সারা বেলা।

Thursday, 29 October 2020

শরতের ওপারে


শরতের ওপারে 

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

স্তব্ধ আকাশ নিশ্চল বাতাস থম-থম পরিবেশ, 
বর্ষা-বাদল পেরিয়ে এবার শরতের প্রান্তদেশ।
শরৎ হাওয়ায় ঢেউ তুলেছে শুভ্র কাশ ফুলে,
কোথাও পতিত নগ্ন মাঠে রাখাল গরুর পালে।
শস্য সবুজ কচি পাতা ঢেলার ফাঁকে ফাঁকে, 
সর্ষে বোনা কোথাও মাঠে পায়রা বসে ঝাঁকে। 
সবুজ মাঠে ধানের কলি চাষীর মুখে হাসি,
জলপ্রান্তে শাপলা ফোটে কলমি পাশাপাশি। 
বাঁশ বাগানের ডোবা পারে জঞ্জাল ভরা কেঁউ,
শুভ্র ফুলে মাথা তুলেছে চাইনা ফিরে কেউ।
কত-শত আগাছার ফুল অনাদরে যায় ঝরে, 
অনাবাদি কোথাও মাঠে কাশফুলে মন কাড়ে।
বাসা বাঁধতে ব্যস্ত ঘুঘু ঘরের আনাচ-কানাচ,
শিশির-পাতায় প্রভাতকালে ছোট্ট পাখির নাচ।
ঝরে পড়া শিউলি ফুলে শরতের সকালবেলা। 
জড়িয়ে ধরে শিশিরে সিক্ত দূর্বাঘাসের গলা,
মেছো মানব মাছ ধরতে হাল ধরেছে ডিঙায়,
হাওড় জলে নৌকা বিঁধে শাপলা লতাপাতায়। 
অদূরে ওই মাথার উপর শুভ্র মেঘের ভেলা,
বক উড়ে যায় শুভ্র ডানায় বয়ে নিয়ে বেলা। 

Friday, 4 September 2020

শ্রাবণধারা

শ্রাবণধারা 

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

সাতসকালে বৃষ্টি শুরু আকাশ ঘোলা ঘোর, 
অদূরে ওই গাছের মাথায় উড়ছে পায়োধর। 
কালো গম্ভীর মেঘের ঘটা অবিরাম গুড়গুড়, 
বজ্র জিগির কানে ফাটে ভয়েতে বুক দুরদুর। 
কখনো গর্জন আকাশ ফাটা কড় কড় কড়, 
কখনো ছিটকায় অগ্নি গোলা ধরণীর উপর। 
পথের উপর ঘোলা জলে ঝাঁকে হাঁসের দল, 
অবাধ বেলায় বৃষ্টিয় ভিজে খেলছে অনর্গল। 
গাছে গাছে বন পাখিরা ভাবছে বসে ডালে, 
হুক্কাহুয়া শিয়াল কাঁদে মাঠে জমির আলে।
কুক কুক কুক বন মুরগী কুঞ্জবনের আড়ে,
শাবক ঝাঁকে অনুসারী পানা পুকুরের পাড়ে।
খাল কিনারে ডাঙায় উঠে বেঙের কলরব, 
ঝগড়াঝাটি দ্বন্দ্ব বন্ধ পাখিরা গাছে নীরব। 
ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে পরাগ যায় ধুয়ে, 
বৃষ্টির জলে মাধবি লতা ঢলে পড়েছে নুয়ে।
বিষন্নতায় ঘরের কোণে কাটায় দিবস রাত,
খড়ের ছাউনি মাটির ঘরে টোপায় বৃষ্টিপাত।
বৃষ্টি ফোটা আশীর্বাদ হয়ে ধনীর ঘরে ঘরে,
গরীব কাঁদে দুঃসময়ে খিদের জ্বালায় মরে।