Sunday, 24 November 2019

হেমন্তের মাঠে

হেমন্তের মাঠে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ওই যে দূরে জমির আলে
হাতে কাখে ঝুড়ি ।
হয়তো ওরা হেমন্ত দিনের
ধান কুড়ানি বুড়ী ।
কাছুটিয় চাষি কাটছে ধান
কীটপতঙ্গ কতো
সারিতে বক চাষির পিছে
ফিঙে জুটে যতো ।
কেউবা বাঁধে ধানের আটি
কেউবা কাটে ধান ।
কেউবা বসে কাজের ফাঁকে
মারছে হুকোয় টান ।
পাকা ধানে কোথাও মাঠে
বাবুই বসে শীষে ।
ধানের গাদায় কেচরমেচর
শালিক সমাবেশে ।
কোথাও মাঠে কা কা রবে
গরুর পিঠে কাক ।
মাটি ছুঁয়ে ফর-ফর উড়ে
ভারুই পাখির ঝাঁক ।
কোথাও শান্ত গরুর  গাড়ি
মালিক পাড়ে হাঁক ।
বেখেয়ালি গরুর রাখাল
খাচ্ছে বসে তামাক ।
ঋজুতে ধান কোথাও মাঠে
নুয়ে পড়েছে শিষ ।
কেউবা সাজায় গরুর গাড়ি
গরুর নাই হদিস ।

Thursday, 24 October 2019

বর্ষে স্নাত হেমন্ত

বর্ষে স্নাত হেমন্ত

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হেমন্ত দিনের কথা ভাবতে।
নেচে উঠলো মন।।
কালের পতন নতুন উদ্ভব।
হেমন্তের সংস্করণ।।
আকাশ জুড়ে মেঘের ঘটা।
হেমন্তের এই দিন।।
শিশির ছাড়া বৃষ্টি-ফোটা।
গগন ঘোরে মলিন।।
স্বপ্ন আমার হারিয়ে গেছে।
বৃষ্টি ফোটায় ধুয়ে।।
শুকিয়ে গেছে চোখের জল।
হাজার কান্নার নুই-এ।।
ভাবনা ছিল আকাশ ছোঁয়া।
বৃথাই নকশা আঁকা।।
বিষন্নে ঠাঁই ঘরের কোণে ।
আকাশ মেঘে ঢাকা।।
ফুল ফুটবে গাইবে পাখি।
উড়বে ভ্রমর ফুলে।।
আশার আলো নিভে গেলো।
অকাল বৃষ্টির জলে।।
পুষ্প সুরভি ওড়েনা বাতাসে।
হাসেনা শাখায় দুলে।।
নয়নে ভাসেনা সৌরভ তার।
ভ্রমর বসেনা ফুলে।।
হরিৎ হরিদ্রা ছড়ানো পাখা।
হেমন্তের আঙিনায়।।
মলিনে তার রূপের বাহার।
নীরব কালিমায়।।

Tuesday, 22 October 2019

হৈমন্তী পার্বণ

হৈমন্ত পার্বণ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

শিশিরস্নাত পুষ্প পাপড়ি রোদ্র ঝিকিমিকি,
শরৎ শেষে নতুন সাজে হেমন্তের উঁকিঝুঁকি।
নতুন দিনের নতুন খবর শিশির ঝরা ঘাস,
বয়ে এলো সবার কাছে হেমন্তের পূর্বাভাস।
প্রাণবন্ত গাঁয়ের কথায় জেগে উঠলো পাড়া,
ছেলে বুড়ো গাঁয়ের জোয়ান হর্ষে আত্মহারা।
আজি হেমন্ত কি আনন্দ চাষির মুখে গান,
বছর ঘুরে উঠলো ঘরে হেমন্তের নতুন ধান।
হয়তো হবে নতুন বছর তাইতো আয়োজন,
পাড়ায় পাড়ায় পড়লো সাড়া নবান্ন বিতরণ।
দেশ প্রথায় আচার বিধি নবান্নের উৎসব,
নতুন ধান নইলে উপোষ হেমন্তের অবয়ব।
নিষ্প্রভ ক্লেশিত চন্দ্র তারা ভোরের আলোয়,
আপ্যায়নের আয়োজন ঢুলু-ঢুলু আঁখিদ্বয়।
অতিশয় আদরে গ্রহণ তবু হৈমন্তী মরসুম,
বিনিদ্রে জ্বলন্ত আখা পিঠা পায়েসের ধুম।
নকশা টানা পিঠাপুলি খাজুর গুড়ের ক্ষীর,
নবান্ন উৎসব ঘরে ঘরে কি'বা গরীব আমীর।
পরিজনদের আসা যাওয়া আজও মধুময়,
পরম্পরায় নবান্ন উৎসব তেমনই অক্ষয়।

Sunday, 13 October 2019

সময়ের দৌড়


সময়ের দৌড় 

আব্দুল মান্নান মল্লিক 

চোখ খুলতেই দেখছি নতুন বিশ্বটারে,
অদ্যদিনের অন্তর্জাল দেশ-দেশান্তরে।
পয়সা কুড়াই তে-মাথা পথ মোড়ের ঘরে।। 
কোনটা শহর কোনটা নগর গোলকধাঁধা, 
অদ্য দিনে গাঁয়ের কথায় পড়লো বাধা।
সময় তুমি সঠিক নাকি উল্টো সিধা ?? 
মেটে তেল পুড়েনা ঘরে সলতে জ্বেলে,
কিবা গ্রাম শহরতলি বিজলি খেলে । 
তেষ্টা মিটে নতুন দিনে বোতল জলে।।
কবে কোথায় হারিয়ে খুজি শৈশব বেলা,
পথের ধারে চাতালে পাড়ায় গল্প বলা । 
সময় তোমার মনে পড়ে সেই দো-চালা ?? 
কতকিছু এলো গেলো ভাসে আবছায়,
বাল্য স্মৃতি অক্ষিপটে ঘুরে দাঁড়ায়। 
নবান্ন উৎসব তালপিঠার ধুম পাড়ায় পাড়ায়।। 
স্তব্ধ ব্যজনী সবার ঘরে ফেলে আসা দূরে, 
বায়ু নিয়ন্ত্রণ ঘরে ঘরে গাঁয়ে কিংবা শহরে। 
নতুন দিনের নতুন উদ্ভব জগত জুড়ে।।
গরুর গাড়ি চলেনা আর এক্কা গাড়ি সেও, 
নিত্য রঙিন উঠছে দালান নতুন আরও।
কলি তুমি নতুন কি আর আনতে পারো ?? 
পথপ্রদর্শক নতুন উদ্ভব তোমার উপহার, 
নইলে তুমি, অদ্য ভুবন থাকতো অন্ধকার।
নতুন দিনের নতুন তথ্যে এসো বারংবার ।।

Wednesday, 24 July 2019

শোকাহত

শোকাহত

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বৃথাই সৃষ্টি বিধাতা তোমার জগৎ অলঙ্কার,
দেখছ নাকি শুনছ কানে দূর্বলের চিৎকার?
ধ্বনিত ওই রণঝঙ্কার শুনতে পাওনা কানে?
দেখতে পাওনা অহরহ মরছে মানুষ প্রাণে!
মাতৃবক্ষে দুগ্ধ সঞ্চার বৃক্ষ বোঝাই ফল,
জল দিয়েছ সুরভি বায়ু মাঠ ভরা ফসল।
দিবালোকে পুষ্প বাহার পাখির কণ্ঠে গান,
রাতের তারা চাঁদের হাসি সবই তোমার দান।
কিসের অভাব কিসের দুঃখ কিসের অনুতাপ,
হতভাগা আজ অধম মানুষ কুড়াই শুধু পাপ!
হিন্দু বল মুসলিম বল হোকনা জৈন খ্রিষ্টান,
সকল ধর্মের একই মালিক আল্লাহ্ ভগবান।
যেদিকে যায় বিপন্ন পথ উৎপাত প্রতিক্ষণে,
কেউ মসজিদ মন্দিরে, কেউ গীর্জা প্রাঙ্গণে।
বৃথাই আয়াস গড়ছে মানুষ নতুন প্রতিষ্ঠান, 
পূণ্য আশে পাপের বোঝা বাড়ছে অফুরান। 
অসুর আর শয়তানেরা বাঁধছে বিধান নতুন,
তোমার নামে হাতিয়ার ধরে করছে মানুষ খুন।

Friday, 8 March 2019

√ বসন্ত প্রত্যাশী

বসন্ত প্রত্যাশী

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ওই যে আবার আসছে ফিরে বসন্ত মরশুম,
কোকিল বনে কুহু রবে ভাঙবে বাংলার ঘুম।
অঙ্গে অঙ্গে পুষ্পগন্ধ ব্যজন মেলেছে নভস্বান্,
এলোমেলো বাতাসে রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বসন্তের ঘ্রাণ।
গুঞ্জরণী শাখায় শাখায় খোঁজ করে যায় মধুপ,
পুষ্পকলি মেলবে ডানা মধুর নেশায় লোলুপ।
মৌপাখিরা খোঁজ নিয়ে যায় সকালে বিকালে,
মঞ্জরি সব ঘুমিয়ে আছে নাইরে মধু ফুলে।
জাগো হে বসন্ত অনন্ত ঘুম ঘুমাইও না আর,
শৈত্য প্রাচীর ভেঙে আনো ফুলের উপহার।
রঙবেরঙে সাজিয়ে ধরা পাখিদের দিও গান,
ফিরিয়ে দিও নবযৌবন বাংলা মায়ের প্রাণ।
ঐ যে বউল শাখায় শাখায় ফোটার অপেক্ষায়,
চেয়ে আছে ফুটবে কখন তোমার ভালবাসায়।
কচি পাতায় উঠবে সেজে শাখা ভরা ফুলে,
বয়ে দিও আলতো হাওয়া নাচবে দুলে-দুলে।
পুষ্প সৌরভ ছড়িয়ে দিও আকাশে বাতাসে,
শাখায় শাখায় নাচবে পাখি গাইবে উল্লাসে।
বাংলার মান বাংলার প্রাণ তুমিই অহংকার,
গৌরব তুমি সৌরভ তুমি বাংলার অলঙ্কার।

Friday, 15 February 2019

ফাগুনী নিশান

ফাগুনী নিশান

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হৈ-হৈ-হৈ হৈ ফাগুন এলো ঐ,
ফুল কুঁড়িতে জগত আলো পাখিদের হৈ-চৈ।
ফাগুন হাওয়া মাতোয়ারা বুনো ফুলের গন্ধে,
ভ্রমর ভ্রমরি সুর তুলেছে মৌ পাখিদের ছন্দে।
পলাশ বনের শাখায় শাখায় রঙ ধরেছে ওই,
ফাগুন মাসের ফুলের হাসি সৌরভ মধুময়।
ঘুর্ণি বাতাস পথের পরে শুষ্ক পাতার গুঞ্জরন,
মাধুরী কাঞ্চন শিমুল ফুলে জগত অলঙ্করন।
চোখ গেল চোখ ডাকছে পাখি কুঞ্জবনে বনে,
ফটিক জল বলছে কথা লুকিয়ে সংগোপন।
গাছের ডালে কে ডাকে ওই বউ কথা কও,
ছন্দে ছন্দে গাহে পাখি বাঁকা চোখে সোনাবউ।
গাছের বাহু জড়িয়ে ধরে হরেক রঙের ফুলে,
ভূবন যেন ফুলের সাজি ফাগুন দোলায় দুলে।
মৃদু গুঞ্জরি আমের বনে উড়ে যায় মৌমাছি,
প্রকৃতির এই অনুরাগী আজ কত কাছাকাছি।

Saturday, 12 January 2019

স্রষ্টার সেরা উপহার

স্রষ্টার সেরা উপহার

আব্দুল মান্নান মল্লিক

তুই যে আমার দিনের সাথী,
তুই যে বেহেশতের দ্বার।
তুই আছিস তাই জগৎ আলো,
নইলে অন্ধকার।
তুই যে আমার গর্ভধারিণী,
বিশ্বের অহঙ্কার।
তুই যে আমার খেলার সাথী,
বিধাতার উপহার।
তোর তুলনা হয়না মাগো,
এই জগতে আর।
দুধের ঋণ শোধ করিতে,
সাধ্য আছে কার?
চরণতলে বেহেশত্ মায়ের,
এই বুঝেছি সার।
মা আছে তাই সব পেয়েছি,
চাইনা কিছু আর।
আকার দিয়ে জীবন দিলেন,
স্রষ্টা নিরাকার।
ইচ্ছা যেটা ভাঙেন গড়েন,
করেন শ্রেষ্ঠ বিচার।

Saturday, 5 January 2019

চ্যুতি

চ্যুতি

আব্দুল মান্নান মল্লিক

যেদিন তোমার বক্ষ ছাড়ি হলাম অধোগামী,
প্রাতের রবি হেসেছিল কেঁদেছিলাম আমি।
ক্ষণিক সুখের স্বপ্নঘোরে নিরব যখন হাসি,
চমকে দেখি কোথায় আমি অসহায় প্রবাসী।
যখন যেটা চাইতাম কাছে ধরা দিত হাতে,
নুরের বাতি দিবা-নিশি জ্বলত অবিরতে।
গুলবাগিচায় খেলার আসর মুখে শুধু হাসি,
অজ্ঞাত কোন ভুলের বসে হলাম শ্রমবাসী।
কি জানি কি হারিয়ে খুজি করি হায় হায়,
সব হারিয়ে নিস্ব আমি আজ আর কিছু নাই।
বদলে গেছে সময় যত মনে পড়েনা হায়,
ছিনিয়ে নিয়ে স্মৃতিকথা বাক্য দিলে তাই।