Friday, 27 February 2015

দুই পৃথিবী

দুই পৃথিবী (b.k)

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বেজে ওঠে কানে শিশুদের আর্তনাদ,
কে দিবে দুধের ফোঁটা করিবে প্রতিবাদ?
গায়ের জোরে করে অট্টালিকায় বাস,
কেউবা কুঁড়ে-ঘরে ফেলিছে কষ্ট শ্বাস।
ধুলোয় গড়িয়ে চলে কোনো উন্মাদ,
টক্করেতে যখম শরীর খায় পদাঘাত।
দিবারাত্রি ভুগছে কৃশ সবলের হাতে,
কেউবা হারায় প্রাণ পীড়িত উৎপাতে।
ভেলকি বাজির জগৎ চাতুরী যেইজন,
গরীবের ঠকিয়ে খায় পিশাচের মতন।
কোথাও ধ্বনিত হয় ক্ষুধার্তের হাহাকার,
ধনীরা চালায় সেথা তেজারতি কারবার।
তত্পর থাকিবে সেদিন ধনীর দুলাল,
নয়নে ভাসিবে তোমার দিবাতে কাল।
বুঝিতে পারিবে যেদিন হালের বেহাল,
পরিণতি হইবে সেদিন সারেতে কঙ্কাল।

Thursday, 26 February 2015

শীত রঙ্গ

শীত রঙ্গ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রোদ ঝিকি-মিকি নীহার গাত্রের চমক,
হীরা মনে ভাবি লাগিছে নয়নে ঝলক।
নানা রঙের সাজে প্রভাত কালের রবি,
ধরনী হয়েছে রঙিন সোনালি সাজের ছবি।
গোধূম শৃঙ্গে বুঝি চমকিছে মুক্তো দানা,
শিশিরে ছিটানো কিরণ শত রঙের কণা।
কাঁপিয়া জমির বাঁধে চলেছে চাষী কেতনে,
দূর্বল সংসার মাঝে অঙ্গেতে চাদর ছেদনে।
লূতাতন্তুর বেড়াজাল জড়িয়ে সারা গায়ে,
দুর্বায় জমানো শিশির সিক্ত করেছে পায়ে।
চলেছে গাছাল রিয়াছ প্রাতে খাজুর বাগান,
ভাবিনু জিগায় কিছু দিলনা চিৎকারে কান।
বাঁধিয়া পশ্চাতে ঝাঁপি শাণিত কাটারি হাতে,
স্কন্ধে মাটির কলস কাছিটাও ছিলো সাথে।
জনা কতক ছেলে চাটাল রাস্তার ধারে,
পোহায় তারা অগ্নিতাপ বসেছে বৃত্তাকারে
বাগান, জমিন মাঝে কোথাও ছাদের পরে,
হিমেলের ফুল ফুটে ধাঁধাঁয় চক্ষু মনোহরে।
গগন মরুৎ সুরভিত হিমেল ফুলের সুবাস,
গুঞ্জন উড়িছে ফুলে চুষিতে ব্যগ্র নির্যাস।
লাউ ধরেছে গাছে শাক সবজির মাঠে,
দূরের মাঠের চাষী ধানের বোঝায় হাঁটে।
শীতের ভোরে ওঠে বধুদের ভাঙে ঘুম,
সাড়া জাগে পাড়ায় পিঠে পায়েসের ধুম।


Sunday, 22 February 2015

বিচার মঞ্চ


************* স্বরচিত কবিতা *************

>>>>>>>>>> বিচার মঞ্চ <<<<<<<<<<<

সচ্ছতা রাখিও তুমি বাগিচা আপনারে।
আগাছায় ভরেনা যেন ঢাকেনা তিমিরে।।
অবারিত রাখিবে সদা বাগানের দ্বার।
রহিবে প্রবেশ মুক্ত দেবতার অধিকার।।
অবহিতে রহিবে রক্ষক হইয়া চৌকিদার।
অসুরেরা হেরিলে তোমায় ছোঁবেনা দ্বার।।
প্রবেশিবে ফুলের অনশ্বর, রক্ষিবে তারে।
সুরের রূপেতে পাইলে শয়তান অসুরে।।
ভাঙিয়া করিবে অনিত্য ফুলেরই দল।
প্রবেশিলে অসুর বাগে আশার বিফল।।
সৃজন করিলে মণ্ডপ বাগানের মাঝে।
নিরপেক্ষ হইবে বিচার বিবেকের কাছে।।
বাহিরে বানালে পুতুল হস্তেরই রেখায়।
প্রণেতার আসনে বসে পাইবে কি রেহাই?
অন্তরেতে ক্ষতের চিহ্ন বাহিরে বিলেপন।
হইবে কি আরোগ্য তোমার অন্তরের দহন।।
খুলিবে যেদিন আপনার অভ্যন্তর নয়ন।
হইবে সেদিন তোমার সিদ্ধিলাভ পূরণ।।

Thursday, 19 February 2015

বৈশাখী দুপুর

বৈশাখী দুপুর

আব্দুল মান্নান মল্লিক

গাছের ছায়ায় বসে যখন দূর দিগন্তে চায়।
যে দিকে চায় নিঝুম পুরী সাড়া শব্দ নাই।।
তরতর করে লম্ব কিরণ্ ফাকাঁ মাঠের পর।
খেলছে বুঝি লহরী যেন অসার আড়ম্বর।।
রাখাল ছেলে গাছের তলে চরতে থাকে গাভী।
নলখাগড়ার বাঁশি বাজায় বেসুর তালে ভাবি।।
ঘুঘু পাখি বসলো উড়ে শুকনো গাছের মাথায়।
ঘুরে ঘুরে ডাকছে কেবল নীরস চোখে তাকাই।।
ক্লান্ত পাখি কোথা হতে বসলো ডালে উড়ে।
হা করে সে হাঁপায় শুধু তৃষ্ণায় ছট্ফট্ করে।।
শুষ্ক দেহে সইবে কত জলের সন্ধান করে।
মুর্মূষু হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে ক্রন্দন বন্ধ করে।।
ডোবা জলা শুষ্ক ফাটল কোথাও অল্প কাদা।
মাছরাঙাটা বসে ডালে নিরুপায় এক হাঁদা।।
মলীন মুখে দিন গুনে যায় চাতক পাখির দল।
জল পিপাসায় দেহ পুড়ে ছাই চক্ষে নাই জল।।
পুষ্প কাননে শুকনো পুষ্পে মৌমাছি না আসে।
এদের দুঃখ ঘুচাবেনা এই দুপুর বৈশাখ মাসে।।
তাকিয়ে দেখি কড়ই গাছে শুকনো ফল ঝুলে।
তপ্ত সমীর লাগছে গায়ে ঝনঝন করে দোলে।।
ফটিক জল ডাকছে পাখি আতা গাছের ডালে।
জল কোথা সে পাবে এখন খরা গ্রীষ্মের কালে।।
মৌমাছিরা শুকনো হয়ে খুজছে শীতল ঠাঁই।
নলকূপ্ পাড়ে বসলো আসি বিরত হল তাই।।
খালের সঙ্গে মধুর মিলন গাঙের ভালবাসা।
বৈশাখীর এই কিরণ্ তাপে মিলন সর্বনাশা।।

Friday, 13 February 2015

বসন্তের আবির্ভাব

বসন্তের আবির্ভাব

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অভিমান ভুলি বসন্ত আসে ফাগুন চৈত্র মাসে,
বসন্ত দূতের জবাব দিতে আসিলে বছর শেষে?
শৈত্যের প্রাচীর করিয়া চুর্ণ ভেদিলে বঙ্গ-স্থলে,
বাংলাকে তুমি করিলে নব সাজিল রঙিন ফুলে।
ওগো বাংলার মর্যাদা স্বামী বাংলা এখন হাসছে,
তোমারে হেরি খুলিয়াছে ভান্ বধূ রূপে সাজছে।
দূরের পানে কোথায় যেন কোকিল কুহু ডাকে,
নকল করে কোলের শিশু শোনায় তার মাকে।
ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা ভ্রমর সমীর হল উন্মত্ত,
ফুটিয়াছে ফুল কাঞ্চন, পলাশ্ আরও কত-শত।
ভোরের হাওয়া নিয়ত বেগে বহিছে স্রোত যেন,
করিয়া বহন ফুলের গন্ধ জামীর বেলে মিশানো।
রক্তে রাঙা সজ্জিত ফুলে দাঁড়িয়ে শিমুল গাছ,
বৃন্তে বৃন্তে উল্লাসিত হয়ে শালিক্ পাখির নাচ্।
কৃষ্ণ-চূড়ায়, রাধা-চূড়ায় লোহিত হরিদ্রা ফুেল,
বাস্তবের এই রূপের মিলন্ কৃষ্ণ রাধার কুলে।
আবলী বন্ধনে ছুটিছে অলি মধু পানের আশায়
রয়েছে যেথায় অম্রপুস্প ভরেছে শাখায় শাখায়।
একের অধিক বসছে ফুলে সহিতে পারেনা আর,
ফুলের সহিত পড়ছে কতক্ উঠছে উড়ে আবার।
যুই, জামীর, রজনীগন্ধা ফুটেছে আরও বেলী,
প্রজাপতি আর ভ্রমর ভারে ঢলে পড়ে চামেলী।

Tuesday, 10 February 2015

লোকবল


************* স্বরচিত কবিতা *************

>>>>>>>>>> লোকবল <<<<<<<<<<<

জলোচ্ছ্বাসের় তোড়ে মাঝি শক্ত করিস হাত।
যাত্রী বোঝাই তরী খানি হয়না যেন কাত।।
সম্মুখে দেখ্ বারেক্ চেয়ে কুয়াশা অন্ধকার।
সতর্ক হাতে বাওরে তরী করতে হবে পার।।
জলের ঝাপটা খাচ্ছে তরী দুলছে বারংবার।
হাতের বৈঠা ছাড়িস যদি পাবিনা কোনো ধার।।
যাত্রী সব আছে বোঝাই ভাবিস শত-বার।
তুফান মাঝে ভাসে তরী নিয়েছিস দায়ভার।।
বিপদকালের সঙ্গীরে তোর ছোট্ট বৈঠাখানি।
করলে তুচ্ছ হবেরে তোর প্রাণটা টানাটানি।।
চেনার আছে অনেক বাকী ছোট্ট ছেলের কাছে।
লাগতে পারে একদিন কাজে লজ্জা কেন পাছে?
উপদেষ্টা নইলে-কি আর সফল হয়েছে কেউ।
সর্বেসর্বা ভাবছিসরে তুই সামলাবে কে ঢেউ?
শিক্ষা যদি নিয়ে থাকিস ধরে গুরুর চরণ।
উদ্ধারিবে গুরু তোরে হবেনা অকাল মরণ।।
ভালবাসায় আঁকড়ে ধরিস তরীর জনগনে।
দুর্দিনে তোর সঙ্গী হবে করবে উদ্ধার প্রাণে।
কম্বলের লোম বাছাই করিস কম্বল নাই হাতে।
মিলেমিশে রইবো সবাই ভয় কেন জাতপাতে?

Friday, 6 February 2015

দুর্যোগ

দুর্যোগ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রণ-সাজে সাজলো গগন সূর্য গেল ঢাকি,
নিগ্রো মেঘের আড়াল হতে বিদ্যুৎ মারে উঁকি।
রক্তে রাঙা আকাশ ভাবি খেলছে রঙের হোলি,
মেঘের গর্জন ঝড়ের তান্ডব চলছে সেথা কলি
তান্ডব লীলাই মাতাল গগন ধরণী হলো অন্ধ,
মাঠের মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে করলো কেতন বন্ধ।
মেঘের গর্জন শুনে সবে ফিরছে নিজের ঘর,
কেউ ছুটতে খাচ্ছে হোঁচট পড়ছে কারো উপর।
পালের গরু ভয়েতে সব হারিয়ে ফেলে পথ,
দিশা হারিয়ে ছুটছে যেন আকাশ পথের রথ।
গোঁ-গোঁড়ামী ঝড়ের তান্ডব বৃষ্টির সঙ্গে শিল,
শিল নয়তো হবে হয়তো টুকরো পাথর ঢিল।
দুর্যোগের এই দুর্দিনে আজ কে কাহারে দেখে,
মাঠের রাখাল ছুটে পালায় ঘাসের বোঝা রেখে।
বিদীর্ণ বক্ষে লোহিত রঙে রঙিন হলো নভ,
নেইতো শান্ত চলছে অনন্ত দূর্যোগ এক অভ।
বিরাম মাঝে গর্জে ওঠে কড়-কড় কড়,কড়,
গগণ ফাটিয়ে ছুটছে আগুন ভূ-পৃষ্ঠের পর।
অগ্নি ছুটে পড়লো এসে তাল গাছটির মাথায়,
দপাং করে জ্বলে উঠলো গাছের কাঁচা পাতায়।
অগ্নি বারুদ কোথা আছে নেইকো কারো জানা,
আঘাত সদা ছলছে হেথা শোনেনা কারো মানা।

Tuesday, 3 February 2015

ইচ্ছে

ইচ্ছে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

গাও কেন দোয়েল পাখি আতা গাছের ডালে,
এসনা একবার কাছে আমার চুম্বন দিই গালে।
তোমার মতো বন্ধু যদি পেতাম আমার কাছে,
সমর্পিয়া দিতাম তোমায় যতটুকু মোর আছে।
তোমার ছোঁয়ায় পেতাম যদি ধন্য হতাম মনে,
আকাশ বাতাস ভরে দিতে মিস্টি সুরের গানে।
মুক্ত হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলে মিস্টি বাঁশির সুর,
বাঁধা বিহীন কন্ঠের আওয়াজ যাবে অনেক দূর।
বুকের পিছন রঙটা সাদা পিঠের উপর কালো,
মধুর সুরের গানটি শুনে ঘর লাগেনা ভালো।
বন্ধু তুমি শিখলে কোথায় মিস্টি কণ্ঠের গান,
যাবে সেথা নিয়ে আমায় মন করে আনচান।
ধরিয়ে দিও গানটি তোমার শিখতে ইচ্ছা করে,
মায়ের কাছে গাইবো যখন করবে আদর মোরে
টেরা চোখে তাকিয়ে কেন আমার দিকে চেয়ে,
বুঝতে নারী ভাষা তোমার অবুঝ মনটা দিয়ে।

Monday, 2 February 2015

আশা নিরাশা

আশা নিরাশা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

কাঠবিড়ালি আর খেওনা একলা পাকা আম।
দেখে তোমায় করবে তাড়া গাছে আছে ভাম।।
শুনলে পরে আমার কথা বলবেনা আর কিছু।
আমাকে ভাম বন্ধু মানে ছাড়বে তোমার পিছু।।
দাওনা মোরে একটি আম দেখতে যেটা লাল।
যখন খুশী আসবে তুমি আবার আসবে কাল।।
হিতাকাংখী পারতাম হতে যদি তোমার সাথে।
তাজা ফলটি খেতাম আর থাকতে তুমি মাথে।।
নির্দয় কেন হৃদয় তোমার মমতা তোমার নাই।
আশায় আশায় গাছের নিচে এবার দিবে তাই।।
কাল বিলম্ব অনেক হল হিংসুটে তোমার প্রাণ।
পরের গাছের করছ হরণ তুমি একটা বেঈমান।।
কয়েদ শালায় ছিলে বুঝি কাহারো যেন হাতে।
হস্তাঙ্গুলির রেখা চিত্র আছে এখনো পশ্চাতে।।
বলতে তোমার লজ্জা কেন হয়তো করেছ চুরি।
আর যাবেনা চুরিতে কখনো বল দুই কান ধরি।।