Wednesday, 27 July 2016

শাস্ত্রের দোহাই

শাস্ত্রের দোহাই 

আব্দুল মান্নান মল্লিক

অগণিত সৃষ্টির স্রেষ্ঠ মানব জনম,
তবু কর্মে মানুষ কেউ পশুর অধম।
জাতি বিদ্বেষ কেন তবে মানুষে মানুষে,
হিংসার বশে মানুষ এ উহারে দুষে
কামিনী কেতকী গোলাপ চামেলি বেলি,
বাতাসে নেচে নেচে করে কোলাকুলি।
ফুলে ফুলে মাখা-মাখি একটি বাগে,
কুলনাশ হয় কখনো মিশিয়া পরাগে?
ফুলে ফুলে প্রজাপতি বাগান চত্বরে ,
জাত বিচার নাই তার মধুপান করে।
সকল জীবের শীর্ষে মানুষই আশ্বাস,
তবু কেন ঈর্ষা বসে হয় প্রাণনাশ?
ঘাঁটা-ঘাঁটি দিবা-রাত্রি শাস্ত্রের বচন, 
স্বার্থ ছাড়া শাস্ত্র-কথা বুঝে কয়জন? 
শাস্ত্রের দোহাই আর অদৃষ্টের লিখন,
অপব্যাখ্যায় করে মানুষ পশুরে নিধন।
নিজ শাস্ত্র শিকার পরে করে গুণগান,
অপর শাস্ত্রে মাথা ব্যথা করতে অপমান। 
হিন্দু বল মুসলিম বল জৈন খ্রিস্টান?
স্রষ্টার চোখেতে সবাই সমান সমান।

Sunday, 24 July 2016

বিলাপ

বিলাপ

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ফুলদানি দেখি যদি হাতে কারো,
ভয় পেয়ে প্রাণ হয় জড়োসড়ো।
ছিন্ন করনা বৃন্ত নিষ্ঠুর নির্মমতায়,
নীরবে সহে জ্বালা আমি যে অসহায়।
ছুঁয়োনা গো ছুঁয়োনা মোরে অঙ্গুলি উষ্ণতায়,
কোমল হৃদয় আমার পুড়ে হবে ছাই।
খুশি করতে চাই তাই আসি বারবার,
সুবাস ছড়িয়ে খুশি হৃদয় আমার।
তোমাদের স্বার্থে বিলাই জীবন শোভন,
ভিন্ন করনা বৃন্ত করনা উৎপীড়ন।
বিলিয়ে দিয়েছি সব যতকিছু মোর,
হয়োনা গো হয়োনা আর নির্দয় কঠোর।
ফুল হাতে দেখে পাষাণ তোমার নিষ্ঠুরতায়,
নতজানু হয়ে রয় ভীষণ বিষণ্ণতায়।
ভেবে যদি থাকো ভুল সাধন সফল,
নেত্রজলে ভাসে সেও হৃদয়ে অনল।
বাঁচিবারে অধিকার সবার সমান,
দুর্বলেরে কর সেবা দাও সম্মান।


Friday, 22 July 2016

জীবন আমার স্বপ্ন

জীবন আমার স্বপ্ন

আব্দুল মান্নান মল্লিক

হয়তোবা ধরণীতে আমি আছি মরে,
ফিরে পাবো জীবন বুঝি মরণের পরে।
পাখিদের গানের সাথে ফুলের গন্ধে, 
ভালবেসে আছি তাই জীবণের ছন্দে।
রঙবেরঙে ঘেরা জগৎ পুষ্প-শোভন, 
দিনের আলোই আশয় করেছে হরণ।
কতশত তারা ফুটে রাতের বেলায়,
ধরণীটা জ্বলে ওঠে  চন্দ্র-জোছনায়। 
চারিপাশ চেয়ে দেখি ইন্দ্রজালে ঘেরা,
জগতের মায়াবেড়ে পড়ে গেছি ধরা।
ছোট্ট পাখির ছটফটানি ছোট্ট এক ঘরে,
দমে-দমে ধরে রাখি ঘোর অন্ধকারে।
ভুলবশে ধরে আছি আঁকড়ে যাদের,
প্রিয়জন দূরে সরে ছিল যারা কাছের।
প্রিয়জন আসে কাছে যতক্ষণ সে আছে,
ইন্দ্রজালে পড়ে দেখি জগৎটাই মিছে।

Tuesday, 19 July 2016

বর্ষণে বেহাল

বর্ষণে বেহাল

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বন্দি ঘরে কেউ বারান্দায়,
কেউবা কদম গাছের তলে।
কেউবা পথে ছাতি মাথায়,
কেউবা ভিজে বৃষ্টির জলে।
গগন শূন্যে চাতক ভিজে,
বিহগ-বিহগী গাছের ডালে।
শিয়াল ভিজে মাঠের মাঝে,
দাদুর দাদুরি পাটের আলে।
বৃষ্টি ভিজা বাদলা পোকা,
ডানা পেয়ে গহ্বর ছাড়া।
জলে ভাসে থোকা থোকা,
আশ্রয়হীনা উই পিঁপড়া।
পাড়ার ছেলে বৃষ্টির জলে,
কলার মোচা ভাসিয়ে দিয়ে।
ছলাৎছলাৎ নৌকা চলে,
কলাপাতার পাল উড়িয়ে।
খড়ের চাল চুইয়ে চুইয়ে,
পথের পরে গড়িয়ে পড়ে।
থৈ-থৈ, থৈ জল ঘুলিয়ে,
হাঁসেরা সব খেলা করে।



Monday, 18 July 2016

ঠাকুর দাদার ঘোড়া

ঠাকুর দাদার ঘোড়া

আব্দুল মান্নান মল্লিক

ঠাকুর দাদার খোঁড়া ঘোড়া,
ডান চোখেতে কানা।
ডাইনে চাইতে বাঁয়ে মোড়ে
শুনেনা কথার মানা।।
তিন পায়েতে নাচের হাঁটন
ধিনতাধিন ধিনতাধিন।
এক ক্রোশ পথ হাটতে সময়
লাগে সাড়ে তিনদিন।।
হাতের লাগাম টানতে থাকি
বসে ঘোড়ার পিঠে।
লাট সাহেবের জামাই যেন
তিন পায়েতে হাঁটে।।
কি জানি কি রোগ ধরেছে
ঠাণ্ডা সর্দি জ্বরে।
দিনে দিনে তিনদিন বাদে
ঘোড়া গেল মরে।।
গাঁয়ের লোকের নানান কথা
বলছে আরও সবে।
ঠাকুর দাদার শোক ধরেছে
হয়তো এমন হবে।।
বাড়ির লোকে ভাবছে বসে
কারণ খুজে সবাই।
ডাক্তার বাবু এসে বলেন
শিঙ ছিলনা তাই।।

Saturday, 16 July 2016

কবিগুরুর স্মরণে

কবিগুরুর স্মরণে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

আজকে বুঝি খুজে পাবো,
আঁধার পথের আলো।
তোমার মাঝে হারিয়ে যাবো,
ঘুচিয়ে আঁধার কালো।
এসেছি আজ মঞ্চে তোমার,
আমরা অতি নগণ্য।
প্রস্তর মাঝে দেখি যতবার,
নিজেকে ভাবি ধন্য।
তুমি মোদের শিরায় শিরায়,
গদ্য প্রবন্ধে ছন্দে।
কবিগুরু আমাদের সহায়,
থেকো গো সানন্দে।
নয়ন তুলে চেয়ে একবার
দেখো মোদের পানে।
ভরিয়ে দিবো মঞ্চ এবার
তোমার কবিতা গানে।
প্রস্তর হয়ে থেকো না কবি,
খোলো অক্ষি এবারে।
ভরিয়ে দিলাম পুষ্প-সুরভি,
তোমার মঞ্চ দরবারে।

Thursday, 14 July 2016

√ বলবে কাকে মা

বলবে কাকে মা

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বলবো কি আর কালো কোকিল তোকে,
লজ্জা নাই তোর আলতা দুটি চোখে।
সব পাখিরা বাসা বুনে তুই যে ফাঁকা ডালে,
বছরে তুই আসিস একবার সুখ বসন্তকালে।
নাইরে তোর জাত বংশ নাইরে নিজের গাঁ,
বৃথাই গেল জীবনটা তোর বৃক্ষশাখায় একা।
মাতৃভক্তি স্নেহমমতা জানিস কি আর তুই,
মধুর কন্ঠে গান গেয়ে তুই মন ভরালি শুধুই।
পরের বাসায় অণ্ড দিয়ে তাইরে নারে না,
বলতো শুনি নিজের বাচ্চা বলবে কাকে মা।
অলসতায় কাটাস জীবন সুখের আশা করে,
বৃক্ষশাখে জীবন গেল ঠাই নাই তোর ঘরে।

বোকা কাক

বোকা কাক
আব্দুল মান্নান মল্লিক
শীর্ষ শাখায় পেচক পেচকী,
বলছে কথা চুপিচুপি।
পেচকী বলে দেখনা মজা,
সর্ষের ভিতর ভুতের রাজা।
পেচক বলে এই পেচকি,
দেখছি দিনের স্বপ্ন নাকি?
পেচকী বলে তাইতো দেখি,
বেঁচে আছি না মরে গেছি?
নিচের ডালে ওই যে দেখি,
কালোয় কালোয় বন্ধু নকি?
কাকের বাসায় কোকিল ছানা,
চুপ, চুপ, চুপ! বলতে মানা!
শুনে যদি একটি কথা,
কাকের হবে মাথা ব্যথা।
পান্তাভাতে মাখবো ঘি,
লোকের কথায় দরকার কি?

Friday, 8 July 2016

চলো যায় মেঘে ভেসে

চলো যায় মেঘে ভেসে

আব্দুল মান্নান মল্লিক

রঙধনুর ওই সিঁড়ি বেয়ে
যাবো মেঘের দেশে।
নভোচারী তুই আর আমি
মেঘের ভেলায় ভেসে।
বৃষ্টি ভিজে খেলবো দুজন
মেঘের সাথে উড়ে।
বাহু মালায় গাঁথবো তোরে
ঘুরবো আকাশ জুড়ে।
মেঘের ভিতর হারিয়ে যাবো
দেখবে নাতো কেউ।
সাঁতার দিয়ে তুলবো দুজন
মেঘের জলে ঢেউ।
মেঘ-শিখরে ঘর বানিয়ে
করবো দুজন বাস।
তুই আর আমি দেখবো শুধু
বৃষ্টি ভিজা আকাশ।
মেঘের উপর ভাসবো যখন
যেতে আসতে পথে।
হয়তো হবে দেখা কখন
মেঘ কন্যার সাথে।

Wednesday, 6 July 2016

আসবে কি ফিরে আবার

আসবে কি ফিরে আবার

আব্দুল মান্নান মল্লিক

বল ওগো বল শুধু একবার,
আবার কি আসবে ফিরে
আমার দুয়ারে।
হৃদাঙ্গনে দিয়েছিলাম ঠাঁই যারে,
পরমাত্মীয়ের সমাদরে।
দিনের আলোয় অনাহারে।।
চেয়ে দেখ ওই গগন পশ্চিমায়,
বিদায়ের কালে চন্দ্রে মিলায়।
কারো হাসিতে , কারো কান্নায়।।
বল ওগো বল শুধু একবার,
আসবে কি ফিরে জীবনে আবার।
নিষ্ফল কান্নায় করবোনা চিৎকার,
ওই যে ছুঁয়ে যায় আমার দুয়ার।।
জীবনের সময় অজান্তে যায় সরে,
আবার আসবে ফিরে এমনি করে।
কেউবা থাকবে সেদিন কেউ যাবে মরে।।
বল ওগো বল শুধু একবার,
পাবো কি দেখা জীবনে আবার।।